ইঁদুরের শরীরে মানুষের কান। পেছনে কি কারন রয়েছে জানেন?
নিউজ ডেস্ক – এমন কিছু গবেষণা রয়েছে যেগুলো বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করলেও সহজে প্রকাশ্যে আনেননি। তবে এগুলো শুনতে অবাস্তব ও অবান্তর লাগলেও বাস্তবে এমনটাই করেছে কিছু বিজ্ঞানী। সেই সকল কিছু অপ্রকাশিত গবেষণার কথা তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
১) বিড়ালের টেলিফোন – ১৯৯৯ সালে আর্নেস্ট গ্লেন ওয়েভার ও চার্লস ব্রে নামের দুজন বিজ্ঞানী বিড়ালকে টেলিফোনে পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন। এই গবেষণার মাধ্যমে তারা প্রথমে বিড়ালটির মাথার খুলির অংশ বার করে প্রাণীর শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের উপর একটি ইলেক্ট্রোড স্থাপন করেছিলেন। এই শ্রবণ যন্ত্রটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৫৯ ফুট। এই দীর্ঘ তার একটি এমপ্লিফায়ারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যার কারণে বিড়াল যা শুনতে পেত পাশের ঘরে এমপ্লিফায়ারেও সেটাই শোনা যেতো। এই পরীক্ষায় যথেষ্ট সফল হয়েছিলেন দুই বিজ্ঞানী। কিন্তু পরে যখন বিড়ালটিকে মেরে আবার পরীক্ষা করতে যায় তখন কোনো কাজই হয়নি। আর এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছিল যে জীবিত প্রাণীর থেকে শব্দ পাওয়া যায় মৃতদের থেকে নয়।
২) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেহারার পুনর্গঠন – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং তারপরে যুদ্ধকালীন ক্ষতের জন্য চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রায় ৩ হাজার সৈনিক। তারা সকলেই কুইনস হাসপাতালে চিকিৎসক গিলিসের নেতৃত্বে ছিলেন। কিন্তু এই সকল আহত সৈনিকদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল লেফটেন্যান্ট উইলিয়াম স্পেকলির। তার সামনে গুলি লাগায় একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল মুখটি। কিন্তু ডাক্তার গিলিস আহত লেফটেন্যান্টের পাঁজরের কার্টিলেজ নিয়ে একটি প্লাস্টিক সার্জারি করে। যেটার ৬ মাস রাখার পর দেখা যায় তিন বছর পর অর্থাৎ ১৯২০ সালে রোগীর অবস্থা খুব ভালো। এরপর থেকে প্লাস্টিক সার্জারির জনক হিসেবে পরিচিতি পান ডক্টর গিলিস।
৩) জ্বলজ্বলে শুকর – বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ গবেষণার পর মুরগি থেকে শুরু করে গাছ এমনকি ইঁদুরের শরীরের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটে তাদের নিজস্ব আলো দিয়ে জ্বলজ্বল করতে সক্ষম হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই একই গবেষণার মাধ্যমে শুকরের শরীরেও পরীক্ষায় সফল হয়েছেন তারা। যদিও সেটা মানতে অস্বীকার করেন অনেকেই।
৪) ইঁদুরের শরীরে মানুষের কান – ১৯৯৭ সালের একটি গবেষণার মাধ্যমে ইঁদুরের পৃষ্ঠদেশে মানুষের কান উৎপন্ন করা গিয়েছিল। ল্যাবে গবেষণায় সহকারী ইঁদুরের নাম ছিল ভ্যাকান্তি। যদিও এই কানটি বায়ো-ডিগ্রেডেবল পালিমার ফ্রেম দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
৫) সোভিয়েত সার্জন এবং তার দুই মাথাওয়ালা কুকুর – ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভ্লাদিমির ডেমিখভ। তিনি পেশায় ছিলেন একজন বিজ্ঞানী। সেই কারণেই নিজের জীবনে একটি বড় সময় অর্থাৎ ১৯৩০-১৯৬০ সাল পর্যন্ত পশুদের নিয়ে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে বেশি পরীক্ষা করতেন কুকুরের উপর। ঠিক সেরকমই এক পরীক্ষায় ভ্লাদিমির ৯ বছরের কুকুর শাভকাকে তার থেকে বড় কুকুর ব্রডিগার শরীরের সঙ্গে শিরা, ধমনী ,মেরুদন্ড একত্রিত করে দুমাথার কুকুর বানানোর চেষ্টা করেছিলেন বিজ্ঞানী। তবে প্রাথমিক দিকে কুকুরগুলো আলাদাভাবে খাবার খেত। তবে চারদিন পরে তারা মারা যায়। কিন্তু পশুদের উপর পরীক্ষা করার কাজ বন্ধ রাখেননি ভ্লাদিমির। যার কারণে এই কুকুরের ওপর পরীক্ষা করার জন্য তার চিকিৎসার উপর একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল।
৬) হোমসবার্গ প্রোগ্রাম – গবেষণার জন্য পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অ্যালবার্ট ক্লিগম্যান ফিলাডেলফিয়া কারাগারের বন্দীদের ব্যবহার করতেন। সেই কয়েদিদের উপর কখনো শ্যাম্পু তো কখনো ফুট পাউডার, ডিওডোরেন্ট এবং পরবর্তীতে মানসিক রোগের ওষুধ এমনকি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ এবং ডাইঅক্সিন ব্যবহার করেছিলেন তিনি।
৭) কিউকহিলটপ প্রকল্প – ১৯৫৪ সালে, সিআইএর প্রকল্প কিউকহিলটপ তৈরি হয়েছিল চীনা ব্রেইন ওয়াশিং কৌশলগুলি অধ্যয়ন করার জন্য, এবং জিজ্ঞাসাবাদের কার্যকর পদ্ধতিগুলি বিকাশের জন্য। ডঃ হ্যারল্ড ওল্ফের নির্দেশনায় প্রাথমিক চর্চা কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল স্কুলের মানব বাস্তুশাস্ত্র অধ্যয়ন কর্মসূচী দ্বারা সম্পাদনা করেছিলেন। ওল্ফ অনুরোধ করেছিল যে সিআইএ তাকে “হুমকি, জবরদস্তি, কারাবন্দি, বঞ্চনা, অবমাননা, নির্যাতন, ‘ব্রেইন ওয়াশিং,’ ‘ব্ল্যাক সাইকিয়াট্রি,’ এবং সম্মোহন, কিংবা রাসায়নিক যে কোনও সংমিশ্রণ সম্পর্কে যে কোনও তথ্য খুঁজে পেলে সিআইএ তাকে যেন জানায়।
৮) বাচ্চাদের উপর লরেট্টা বেন্ডারের পরীক্ষা – নিজের গবেষণার জন্য নিউইয়র্কের ক্রিডমুর হাসপাতালের চিকিৎসক লরেট্টা বেন্ডার সামাজিক সমস্যা যুক্ত বাচ্চাদের উপর বৈদ্যুতিক শক ট্রিটমেন্ট প্রয়োগ করতেন। যদিও পরবর্তীতে শিশুদের মধ্যে স্কিজোফ্রেনিক উপসর্গ দেখা দিলে তিনি গবেষণা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু এই চিকিৎসকের গবেষণার জন্য মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল প্রায় ১০০ জন শিশুর।
৯) এমকেআল্ট্রো প্রকল্প – বন্দি আসামির জন্য ও নেশায় আসক্তদের কাছ থেকে তথ্য বার করতে এমকেআল্ট্রো প্রকল্প ব্যবহার করা হতো। এককথায় মানুষের মুখ থেকে কথা বার করানোর এক ধরনের পদ্ধতি বলা যেতে পারে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের মানসিক অবস্থার হেরফের করিয়ে ও মস্তিষ্কের ক্রিয়া-কলাপের পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক সম্মোহন এবং যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি একাধিক মানসিক নির্যাতনের ব্যবহার করা হতো। এই প্রকল্পের পরিধি ছিল বিস্তৃত। ৪৪ টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি হাসপাতাল, কারাগার ও ওষুধ সংস্থা সহ প্রায় ৮০ টি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হতো। এটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা দ্বারা পরিচালনা করা হতো।