নিজের দাড়িতে হোঁচট খেয়ে মৃত্যু
প্রতিদিন নানান দূর্ঘটনার কারণে কত কত মানুষ তার প্রাণ হারাচ্ছে। যার খবর হয়ত হাতে গোনা মানুষের কাছে থাকে কি না সন্দেহ রয়েছে। তবে এমন কিছু মৃত্যু ঘটেছে যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। কিন্তু কেন স্মরণীয় হয়ে রয়েছে এই মৃত্যুগুলি?
মাথায় কচ্ছপ পড়ে মৃত্যু!
প্রাচীন গ্রীসের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অ্যাস্কাইলাস। তার লেখা ট্রাজেডিগুলো তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। গ্রীক ট্রাজেডির জনকও তাকে বলা হয়।
এই মহান ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে প্রচলিত রয়েছে এমন একটি কাহিনী যা শুনে আপনি হতবাক হয়ে ভাববেন যে এইভাবেও কারোর মৃত্যু হওয়া সম্ভব! এই ঘটনা সম্পর্কে এক রোমান লেখক, যিনি অ্যাসকাইলাসের মৃত্যুর পর খুব অল্প সময় বেঁচেছিলেন তার ভাষ্যমতে, আকাশ থেকে পতিত হওয়া এক কচ্ছপের দ্বারা মৃত্যু হয়েছিল গ্রীসের এই ট্রাজেডিয়ানের।
ঈগল পাখিরা সাধারনত শিকার করা কচ্ছপদেরকে পাথরের উপরই নিক্ষেপ করে থাকে যাতে শক্ত পাথরের আঘাতে তার শিকারের খোলসটা ভেঙে যায়। এই বারও একটা ঈগল পাখি ঠিক সেই কাজটিই করল তবে ওই পাখিটির একটু বোঝার ভুল হয়ে গেছিল অর্থাৎ ঈগল পাখিটি পাথর ভেবে কচ্ছপটি অ্যাস্কাইলাসের মাথার উপর ছুঁড়ে ফেলেছিল। অ্যাস্কাইলাসের মাথায় এসে কচ্ছপ পরার কারণে তার মৃত্যু হয়।
টেনিস খেলা দেখতে গিয়ে মৃত্যু
১৪৮৩ সালে অষ্টম চার্লস ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন। সেই সময় তার বয়স মাত্র ১৩ বছর থাকার কারণে তার পক্ষে রাজ্য চালানোর মতো গুরুদায়িত্ব পালন করা সম্ভব ছিল না বলে তার রাজপ্রতিভূ হয়ে আসেন বড় বোন অ্যান এবং তার স্বামী ডিউক অগ বোর্বন। তারা চার্লসের পুরো রাজত্বকালের অর্ধেক সময়ই বলতে গেলে তার রাজপ্রতিভূ হয়ে ছিলেন। চার্লস বরাবরই ঝামেলাকে এড়িয়ে চলতেন। তবে তার মৃত্যুটা হয়েছিল এক অদ্ভুত কারণে যা কল্পনারও বাইরে ছিল।
টেনিস খেলার জন্য রাজা অষ্টম চার্লসের জীবনাবসান ঘটেছিল। চার্লস সেখানে খেলা দেখতে গিয়েছিল। চলাচলের একপর্যায়ে একটি দরজার উপরের দিকের কাঠের সাথে রাজা সজোরে ধাক্কা খান। সেই সময় তিনি সেই ব্যথাকে গুরুত্ব না দিলেও খেলা শেষ হবার পরপরই কোমায় চলে যান তিনি। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় তার।
নিজের দাড়িতে হোঁচট খেয়ে মৃত্যু
হ্যান্স সেইনিনগার নামের এই ব্যক্তি দাড়ি ছিল দেড় মিটার লম্বা। ১৫৬৭ সালে যদি গিনেস বুক অব রেকর্ড-এর অস্তিত্ব থাকত, তাহলে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা দাড়ি রাখার জন্য তার নাম ওঠা থেকেও কেউ আটকাতে পারত না। তার এই দাড়ি যেমন তার খ্যাতির কারণ ছিল ঠিক তেমনই তার এই দাড়ি তার মৃত্যু কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইতিহাস বলছে যে, একবার আগুনের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে সেখান থেকে পালানোর সময় তার দাড়িতে পা জড়িয়ে পড়ে যান তিনি। যার ফলে তিনি বেকায়দায় পরে যাওয়ায় তার দাঁত ভেঙে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
শরীরে থাকা ব্যান্ডেজ থেকে মৃত্যু
রাজা দ্বিতীয় চার্লস ১৩৪৩ থেকে ১৩৮৭ সাল অর্থাৎ দীর্ঘ ৪৪ বছর নাভারের শাসনভার পরিচালনা করেছিলেন। যখন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে হান্ড্রেড ইয়ার্স ওয়্যার চলছিল সেই সময় দ্বিতীয় চার্লস সুবিধাবাদীর ভূমিকা পালন করছিলেন অর্থাৎ যখন যে পক্ষ তার জন্য লাভদায়ক হচ্ছে তখন তিনি সেই পক্ষেই যোগদান করছিলেন। এই কারণে তিনি ‘চার্লস দ্য ব্যাড’ নামেও পরিচিত ছিলেন।
একবার গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রাজা দ্বিতীয় চার্লস। সেই সময় চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছিলেন, ব্র্যান্ডিতে সিক্ত লিনেনের কাপড় দিয়ে তার গলা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত অর্থাৎ পুরো দেহ জড়িয়ে রাখার। চিকিৎসকের এই সহকারী রাজার গায়ে যাতে ভালোভাবে আটকে থাকে তার জন্য সেলাই করে দেন। সেলাই করার পর তিনি দেখেন কিছু অংশ বাড়তি রয়ে গেছে। রাতের বেলায় এই কাজটি তিনি করছিলেন। তাই ওই সহকারী কেঁচি দিয়ে সেটি কাটতে চাননি কারণ যদি কেঁচিতে রাজার গায়ে আঁচড় লেগে যায়। সেই জন্য তিনি আগুন দিয়ে সেই বাড়তি অংশটা বাদ দিয়েই আগুন নেভাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আগুন ব্র্যান্ডিতে সিক্ত কাপড়টি সংস্পর্শে আসতে না আসতেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। যার ফলে মৃত্যু হয় দ্বিতীয় চার্লসের।
অতিরিক্ত খাবার খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল রাজা অ্যাডলফ ফ্রেডরিকের
সুইডিশ রাজা অ্যাডলফ ফ্রেডরিক ‘সেমলা’ ক্রিম রোল নামে একটি স্থানীয় মিষ্টির প্রতি আসক্ত ছিলেন। তাই একবার, ক্যাভিয়ার, গলদা চিংড়ি এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক খাবার ভোজনের পরে, রাজা এক সাথে এক ডজনেরও বেশি ‘সেমলা’ খেয়ে ফেলেছিলেন।
এই বিপুল পরিমানে খাবার খাওয়া ফলে তিনি আর হজম করতে পারেননি।
কিছু সময় কাটতে না কাটতেই তিনি অনুভব করেন তার পেট খারাপ হয়েছে। এরপর যত সময় বাড়ছিল ততই যেন তার শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। তার শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয় যে তাকে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে হয়। ইতিহাসের পাতায় তিনিই একমাত্র রাজা ছিলেন যার মৃত্যু অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ঘটেছিল।
ফ্রান্সিস বেকনের মুরগী পরীক্ষা
ফ্রান্সিস বেকন ছিলেন একজন জনপ্রিয় সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী। তিনি ১৬২৫ সালের এক বিকেলে মাংস প্রিজার্ভ করার জন্য একটা পরীক্ষা করার চালান। এই পরীক্ষা করার জন্য তিনি মুরগি বেছে নেন এবং তার মাংস তুষারে রেখে দিয়ে এটা দেখতে চান যে সেটি ফ্রজেন হচ্ছে কি না। এই কাজটি করতে তিনি মুরগি নিয়ে তুষারে মধ্যে থাকার সময় নিজেই ফ্রজেন হয়ে যান।