শেষনাগের অবতার বলরাম যুগে যুগে ভগবান বিষ্ণুর সাথে এই পৃথিবীতে জন্মেছিলনে। আসলে কে ছিলেন এই বলরাম?
নিউজ ডেস্কঃ হিন্দুধর্ম গ্রন্থ অনুযায়ী বলরাম হলেন ভগবান কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা। যিনি বলদেব, বলভদ্র ও হলায়ুধ নামেও পরিচিত। বলরামকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসাবে গন্য করে পূজা করেন বৈষ্ণবরা। এবং তাঁর নাম ভাগবত পুরাণের তালিকাতেও রয়েছে। দ্বাপর যুগে ভগবান কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরামকে বিষ্ণুর শয্যারূপী শেষনাগের অবতার মনে করা হয়। বলরামের সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য আছে যা অধিকাংশ মানুষেরই অজানা।
১। শেষনাগের অবতার বলরাম যুগে যুগে ভগবান বিষ্ণুর সাথে এই পৃথিবীতে জন্মেছিলনে। যেমন কৃষ্ণরূপে যখন শ্রীকৃষ্ণ জন্মেছিলেন তখন তাঁর জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরাম হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এখানেই শেষ নয় প্রায় পাঁচশো বছর আগে যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীচৈতন্যদেবের অবতারে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তখন নিত্যানন্দ মহাপ্রভু অবতারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন বলরাম। নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর জন্ম করেছিলেন চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মের পূর্বে। শ্রীচৈতন্যদেবের অবতারের স্বয়ং ভগবানই ভক্তেররূপে এসেছিলেন এবং কলিযুগে কিভাবে ভগবানকে ভক্তি করতে হবে তার শিক্ষা দিয়েছিলেন।
২। বলরাম নামের উৎপত্তি হয়েছিল দুই শব্দ বল এবং রমনের মিলনে। বল শব্দটির অর্থ হলো আধ্যাত্মিক শক্তি। যার দ্বারা মানুষ তার জীবনের সর্বোচ্চ আনন্দ অর্থাৎ পরমেশ্বরকে প্রাপ্ত করতে পারবে। এই আনন্দকে রমণও বলা হয়ে থাকে।
৩। আকাশবাণী অনুযায়ী যেহেতু দেবকীর অষ্টম সন্তান কংসের বধ করবে। এইজন্য কংস বসুদেব এবং দেবকীকে কারারুদ্ধ করে তাদের প্রথম ছয় সন্তানের হত্যা করেন।বলরাম ছিল বাসুদেব এবং দেবকীর সপ্তম সন্তান। যাকে বিষ্ণু যোগমায়ার সাহায্যে দেবকীর সপ্তম গর্ভের ভ্রুণ রোহণীর গর্ভে প্রতিস্থাপিত করা হয়। কংসকে জানানো হয় যে দেবকী মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। শক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মিলন হয়েছে বলে তাঁর নাম বলরাম। অনেকের মতে বিষ্ণুর এক অবতার রামের ছোট ভাই লক্ষ্মণ দ্বাপর যুগে তাঁর বড় ভাই বলরাম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।
৪।বলরামের বিবাহ রেবতীর সাথে হয়েছিল। কিন্তু রেবতী ছিলেন তার চাইতে অনেক বড়, একেবারে অন্য যুগের নারী। কিন্তু তার প্রতি বলরামের প্রেম এতটাই দৃঢ় যে, তিনি দ্বিতীয় বিবাহের কথা ভাবেননি। তার দুই পুত্র নিশথ ও উল্মুক এবং এক কন্যা ভৎসলা ছিল।
৫। ছোটবেলা থেকেই কৃষ্ণ এবং বলরামের চরিত্র একে অপরের থেকে ভিন্ন। যেমন- কৃষ্ণ মধুর কথা মিষ্টি কথা এবং মুখের হাসি দিয়ে সবার মন জয় করতেন কিন্তু বলরামের প্রকৃতি ছিল ভিন্ন। বলরাম শান্ত প্রকৃতির হলেও রেগে গেলে মারাত্মক রূপ ধারণ করতেন। শুধু যে স্বভাবগত দিক থেকেও আলাদা তা নয় গঠনগত দিক থেকেও আলাদা। যেমন কৃষ্ণের রঙ কালো এবং বলরাম রঙ ফর্সা। এছাড়াও কৃষ্ণ হলুদ রঙের বস্ত্র পছন্দ করতেন, কিন্তু বলরামের নীল রঙ কাপড় পছন্দ করতেন। এক বিশাল লাঙল ছিল বলরামের অস্ত্র। এই জন্য তাঁর অপর নাম ছিল ‘হলধারী’।তিনি অস্ত্রবিদ্যায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। এবং তাঁর কাছ থেকে গদাযুদ্ধ শিক্ষা পেয়েছিলেন ভীম এবং দুর্যোধন।
৬।কৃষ্ণ মহাভারতে পাণ্ডবদের পছন্দ করলেও বলরাম কৌরবদের প্রতি দুর্বল ছিলেন। এমনকি তাঁর কাছে দুর্যোধন ছিলেন ভীমের তুলনায় প্রিয় ছাত্র। এইজন্য তিনি তাঁর বোন সুভদ্রার সাথে দুর্যোধনের বিবাহ দিতেও চেয়েছিলেন। তবে কৃষ্ণের জন্য সুভদ্রার বিবাহ হয়েছিল অর্জুনের সাথে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বলরাম কোনও পক্ষের হয়ে যুদ্ধ করবেন না এই সিদ্ধান্ত নিলেও যখন গদাযুদ্ধের রীতি বিরুদ্ধে গিয়ে ভীম দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ করেন, তখন ভীমের উপর বলরাম ক্রোধিত হয়ে তাঁর লাঙল তুলে ভীমকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তবে কৃষ্ণের কথায় নিজেকের সংবরণ করে নেন বলরাম।
৭। বিষ্ণুর শেষনাগের অবতার মনে করা হয় বলরামকে। হাল বা লাঙল ছিল তার প্রধান অস্ত্র। এই জন্য তাঁর অপর একটি ছিল হলধরও। সেই সময়ে বৃন্দাবন থেকে অনেক দূর থেকে যমুনা নদী প্রবাহিত হত। যার কারনে চাষাবাদের জন্য চাষিদের বেশ পরিশ্রম করতে হত। চাষাবাদের সুবিধার জন্য তার লাঙল দিয়ে মাটি খুঁড়ে যমুনা নদীকে বৃন্দাবনের অনেকটা কাছে নিয়ে এসেছিলেন বলরাম। এর ফলে বৃন্দাবনবাসীদের চাষাবাদে আমুল পরিবর্তন আসে।
৮।বেশ কিছু পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুসারে, রামচন্দ্রের ভাই লক্ষণকে বলরামের পূর্বজন্মের অবতার বলে মনে করা হয়। দ্বাপরযুগে রামের ছোট ভাই লক্ষন তাঁর দাদা রামের কাছে আবদার করেছিলেন যে তিনি যেন পরবর্তী কোনো জন্মে তার জ্যেষ্ঠভ্রাতা রূপে জন্মগ্রহণ করতে পারেন। সেই অনুরোধ রাখতে শ্রীরামচন্দ্র কৃষ্ণ রূপে এবং লক্ষণ বলরাম রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।