অফবিট

মালদহের কোন মিষ্টিতে চৈতন্যদেবের স্মৃতি জড়িত আছে?

নিউজ ডেস্কঃ যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন হয়েছে বহু জিনিসের। কার্যত নতুনের সঙ্গে পাল্লার না দিতে পারায় হারিয়েছে বহু পুরনো ঐতিহ্য।  তবে সবকিছু হারিয়ে গেলেও যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে এখনও চাহিদাপূর্ণ রয়েছে মালদহের রসকদম্ব। রীতিমতো চৈতন্যদেবের সময়কাল থেকেই শুরু হয়েছে এই মিষ্টির আবির্ভাব। তবে পূর্বে সেটা একটি মুষ্টিমেয় জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে জেলা থেকে রাজ্য,  রাজ্য থেকে দিয়ে এবং দেশ থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। চৈতন্যদেবের আমলে তৈরি বস্ক ধর্ম বর্তমান এমন একটি জায়গায় পৌঁছে গিয়েছেন যেখানে মালদহের মানুষ মনে করেন বাড়িতে এই মিষ্টি না থাকলে ঠিক যেন মালদহ বাসি মনে হয় না। 

উত্তাপের রসকদম্ব এর আগে মালদহে একসময় বিখ্যাত ছিল হালুয়া পট্টি আর টাড়ার খাজা। যদিও এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস। পৌরাণিক মতে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের শেষ সুলতান ছিলেন সুলেমান কুরবানী। সেইসময় সুলতানের বংশধররা রাজধানী গৌড়কে  সরিয়ে স্থানন্তর করে টাড়ায়। সুতরাং সেই সময় মিষ্টির কারিগররা যে খাজা তৈরি করতেন সেটি প্রচলিত ছিল টাড়ার খাজা নামে। তবে সুলতানি আমলের শেষ দিকে একসময় বিলুপ্ত হয়ে যায় এই মিষ্টি গুলি।  তবে রসকদম কোনদিনই নিজের অস্তিত্ব হারায়নি। 

রসকদম মিষ্টির জন্ম হয়েছিল আনুমানিক ১৮৬১ সালে। সেইসময় সুলতান হুসেন শাহের আমলে গৌড় পরিদর্শনে এসেছিলেন স্বয়ং চৈতন্যদেব।  সেখানকার একটি কেলিকদম্বো গাছের নীচে বসে তিনি সকলকে ভিক্ষা দিবেন।  সুতরাং অনেকেই মনে করে সেই কদম্বো গাছের অনুসরণ করেই  মিষ্টির নাম হয়েছে রসকদম্ব।  

মালদহের জনপ্রিয় মিষ্টি রস কদম্বের আকৃতি দিয়েছিলেন হিম পুরের কারিগররা। মূলত রসগোল্লার পুর দেওয়া শুরু হয় সেই প্রাচীন ঘরানা থাকে।  যার বদল ঘটেনি আজও।  রসকদম্ব হচ্ছে প্রথমে রসগোল্লা তারপরে ক্ষীরের  প্রলেপ ও তার উপর পোস্ত। যেহেতু মালদহে পোস্ত চাষ হয় তাই রসকদম্বের দাম খুবই সস্তা।  ৬ কিংবা ১০ টাকা পিস। তবে সম্প্রতি পোস্তর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই সেই জায়গায় চিনি ব্যবহার করছেন।  তবে যে সকল দোকানের বয়স শতাধিক ছাড়িয়েছে তারা পুরনো ঐতিহ্য বহন করে যত দাম হোক না কেন পোস্ত ব্যবহার করে থাকেন।  মালদহের সব দোকানের রসকদম্বের স্বাদ যে ভালো হবে সেটা নয়। সেরা দোকান হচ্ছে রতন সুইটস।  গোটা জেলাতে বিখ্যাত রতন সুইটস । পুজোর সময় প্রায়ই ভিড়ে ঠাসাঠাসি হয়ে যায় দোকানের অবস্থা।  তবে এই মিষ্টি এমনই যে ১৫  দিন ফ্রিজে না রেখেও খাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *