শুক্রাচার্য কেন দৈত্যদের গুরু হয়েছিলেন?
নিউজ ডেস্কঃ শুক্রাচার্য যাকে আমরা দৈত্যগুরু হিসাবে চিনি।যার ক্ষমতা ছিল দেবতাদের গুরু বৃহস্পতির থেকেও বেশি ছিল। তবে তিনি কিন্তু প্রথম থেকেই দৈত্যদের গুরু ছিলেন না।তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে দৈত্যগুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কি এমন ঘটে ছিল যার জন্য শুক্রাচার্য দৈত্যগুরুতে পরিনত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
পুরান অনুসারে, শুক্রাচার্য ছিলেন মহর্ষি ভৃগুর পুত্র তথা ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত প্রহ্লাদের ভাগ্নে। মহর্ষি ভৃগুর প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল খ্যাতি যিনি তার ভাই দক্ষের কন্যা ছিলেন।মহর্ষি ভৃগু এবং খ্যাতির দুই পুত্র দাতা ও বিধাতা এবং এবং এক কন্যা লক্ষ্মী ছিলেন। মহর্ষি ভৃগু লক্ষ্মীর বিবাহ ভগবান বিষ্ণুর সাথে করিয়ে দেন। মহর্ষি ভৃগুর আরো পুত্র ছিল যেমন উষ্ণা, চবন প্রমুখ। বলে হয় উষ্ণাই পরবর্তীকালে শুক্রাচার্যরূপে পরিচিতি পান। আবার অন্যদিকে একটি কাহিনী অনুসারে শুক্রাচার্য মহর্ষি ভৃগু তথা হিরণ্যকশিপুর কন্যা দিব্যার সন্তান ছিলেন। প্রথম কাহিনী অনুসারে, শুক্রাচার্যের জন্ম হয়েছিল শুক্রবারে। তাই মহর্ষি ভৃগু তার পুত্রের নাম রেখেছিলেন শুক্র। শুক্র একটু বড় হলে তার শিক্ষাগ্রহনের জন্য তার পিতা তাঁকে ব্রহ্মঋষি এবং অঙ্গঋষির কাছে পাঠান। অঙ্গঋষি ছিলে ব্রহ্মার মানসপুত্রের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তারই পুত্রের নাম ছিল বৃহস্পতি। যিনি পরবর্তীকালে দেবতাদের গুরু হন। শুক্রাচার্যের সাথে সাথে অঙ্গঋষির পুত্রও সেখানে শিক্ষালাভ করতেন। বলা হয়ে থাকে যে শুক্রাচার্যের বুদ্ধি বৃহস্পতির তুলনায় অনেক বেশি ছিল কিন্তু তাও বৃহস্পতি ঋষির পুত্র হওয়ার কারণে তিনি সবসময় বেশি শিক্ষার সুযোগ পেতেন। এইভাবে একদিন শুক্রাচার্য ক্রোধে আশ্রম ছেড়ে চলে যান এবং গৌতম ঋষি থেকে তিনি বাকি শিক্ষা লাভ করেন। শিক্ষা পূর্ণ হওয়ার পর যখন শুক্রাচার্য শুনলেন যে বৃহস্পতিকে দেবতারা তাদের গুরু হিসাবে নিযুক্ত করেছেন তখন তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে দৈত্যদের শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন। কিন্তু দৈত্যরা সব সময় দেবতাদের কাছে পরাজিত হত এই ভয়ও ছিল শুক্রাচার্যের মধ্যে। এরপর শুক্রাচার্য ভাবলেন যে তিনি যদি মহাদেবকে তুষ্ট করে তার থেকে সঞ্জীবনী মন্ত্র প্রাপ্ত করে নেন তাহলে সে পুনরায় মৃত দৈত্যদের জীবিত করে দেবতাদেরকে পরাজিত করতে পারবেন। এই ভেবে তিনি ভগবান শিবের কঠোর তপস্যা শুরু করেন। এই সুযোগে দেবতারা দৈত্যদের ওপর আক্রমন করে বসলেন।
শুক্রাচার্য তপস্যা করছিলেন বলে দৈত্যরা তার মাতা খ্যাতির কাছে সাহায্য চাইলেন। মাতা খ্যাতি দৈত্যদের রক্ষা করার জন্য যে সব দেবতারা দৈত্যদের মারা জন্য আসতেন খ্যাতি তার শক্তি দিয়ে তাদেরকে বেহুশ করে দিতেন অথবা তাদের স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দিতেন। এইভাবে দৈত্যরা আরো শক্তিশালী হয়ে গেল পৃথিবীতে অনাচার আরও বাড়তে লাগল। এই সময়ে পৃথিবীতে ধর্মের স্থাপন করতে ভগবান বিষ্ণুর শুক্রাচার্যের মাতা ও মহর্ষি ভৃগুর স্ত্রীর মাথা তার সুদর্শন চক্র দিয়ে কেটে ফেললেন। এইভাবে তিনি দেবতাদের এবং পৃথিবীকে দৈত্যদের হাত থেকে রক্ষা করলেন। যখন শুক্রাচার্য এ কথা জানতে পারলেন তখন তিনি ভগবান বিষ্ণুর উপর খুব ক্রোধিত হয়ে গেলেন। তিনি মনে মনে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে লাগলেন তিনি আবারও ভগবান শিবের কঠোর তপস্যায় বসলেন। অনেক বছর পর্যন্ত তিনি কঠোর তপস্যা করে মহাদেবকে তুষ্ট করে মহাদেবের কাছ থেকে সঞ্জীবনী মন্ত্র লাভ করলেন। তারপর শুক্রাচার্য দৈত্যদের রাজ্য পুনরায় গড়ে তোলেন এবং তার মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেন। মনে করা যে তখন থেকেই শুক্রাচার্য ও ভগবান বিষ্ণু একে অপরের শত্রু হয়ে যান। এই বিষয়ে যখন মহর্ষি ভৃগুর জানতে পারলেন যে ভগবান বিষ্ণু তার স্ত্রীর হত্যা করেছেন তখন ক্রোধে তিনি ভগবান বিষ্ণুকে অভিশাপ দিলেন তিনি যেহেতু একজন স্ত্রীকে বধ করেছে এজন্য পৃথিবীতে তাঁকে বারবার মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিতে হবে। যদি এই ব্যাপারে ভাবেন তাহলে দেখা যায় যে এই ঘটনার আগে বিষ্ণু ভগবান রূপে প্রকট হতে যেমন বরাহ অবতার, মৎস্য অবতার এবং নৃসিংহ অবতার, কিন্তু তারপর তিনি ভগবান পরশুরাম, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং বুদ্ধ রূপে জন্ম নিয়েছিলেন।পরে অবশ্য বৃহস্পতির পুত্র শুক্রাচার্যের থেকে সঞ্জীবনীবিদ্যা শিখে তার পতন ঘটিয়েছিলেন।