ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্রাচীন রোমানরা দুধ দিয়ে স্নান করতেন। জানুন বিস্তারিত
বর্তমান দিনে নারীরা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য কি না করে থাকে। তবে শুধু বর্তমান দিনের কথা বললে ভুল বলা হবে, কারন প্রাচীনকালের নারীরাও এই ধারাবাহিকতার বাইরে ছিল না। তারাও নিজেরা সৌন্দর্যের অধিকারী হওয়ার জন্য প্রচুর কাজ করত। যেমন ধরুন প্রাচীন রোমান নারীদের কথাই আসা যাক। তারা নিজেদেরকে সুন্দরী করে তোলার জন্য নানা ধরনের কাজ করে থাকত। নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে যে সেই সময়কালে রোমান নারীরা কিভাবে নিজের রূপচর্চা করত?
প্রাচীন রোমের নারীদের রূপচর্চা করার কিছু পদ্ধতি হল।
১. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্রাচীন রোমানরা দুধ দিয়ে স্নান করতেনঃ
বর্তমান দিনে যেমন মানুষ ফর্সা ত্বকের পিছনে ছোটে সেই প্রথায় আজ থেকে বহু বছর আগে প্রচলিত ছিল প্রাচীন রোমে। ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল গায়ের রং ফর্সা হওয়া বিশেষ করে নারীদের কাছে। কারন সেই সমাজে বিয়ের জন্য ফর্সা ত্বকের নারীদের খোঁজ করতো বেশিরভাগ পুরুষই।
সেই জন্য সেখানকার নারীরা নিজেদের ত্বকের যত্ন নিয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকতেন। তারা নিজেদের ত্বকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ যত্ন নিতেন। সেখানকার মহিলারা বাড়ির বাহিরে খুব একটা বের হতেন না, বলতে গেলে বলা চলে যে তারা সারাদিন বাড়ির অন্দরমহলেই কাটিয়ে দিতেন নিজেদের ত্বকে দাগ মুক্ত, বালি মুক্ত এবং মসৃণ রাখার জন্য। তবে যদি কখন বাইরে বেরতেন তাহলে তারা মুখে বিশেষ মাস্ক পড়ে বাইরে বের হতেন।
বেশ কিছু ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে সেখানকার নারীরা মুখের উপর সালভ, আনগুয়েন্টস এবং তেলের ব্যবহার করত আর এটা ছিল একটি সাধারণ বিষয়। এই প্রতিটি উপাদানগুলির একটি নির্দিষ্ট সুবিধার জন্য ব্যবহার করতেন তারা, আবার বেশিরভাগ উপাদানগুলিকে মিক্স করে একটি পেস্ট বানিয়ে নিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখতেন তারা।
এছাড়াও ধনী নারীরা তাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য ব্যবহার করতেন দুধ, আবার অনেক ধনী নারীরা তো দুধ দিয়ে স্নানও করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে দুধের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা ত্বক সৌন্দর্য করতে সাহায্য করে।
প্রাচীন রোম কিংবদন্তি অনুযায়ী, সম্রাট নিরোর স্ত্রী পপ্পা সাবিনা প্রচুর পরিমানে দুধ ব্যবহার করতেন। এই জন্য তিনি যখনই ভ্রমণ করতেন তখন তার সাথে গাধার একটি বাহিনী থাকত। কথিত আছে যে, তিনি দুধ এবং ময়দাযুক্ত তার নিজস্ব একটি রেসিপি তৈরি করতেন এবং তা তিনি প্রচুর পরিমানে তার ত্বকে উপর প্রয়োগ করতেন।
২. যত বড় চোখের পাপড়ি হবে সে তত বেশি সুন্দরী হবেঃ
প্রাচীন রোমে অত্যন্ত আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল লম্বা চোখের পাতার অধিকারী হওয়া। এই জন্য মহিলারা বড় পাপড়ি নিশ্চিত করার জন্য এমন কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতেন যার মধ্যে কিছু কিছু স্বাস্থ্যকর, আবার কিছু কিছু ছিল অস্বাস্থ্যকরও। যেমন এই কাজটি করার জন্য বিভিন্ন প্রকার কালি তারা তাদের চোখে ব্যবহার করতো যা ছিল তাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
৩. চোখের মেকাপঃ
কথিত আছে যে, সেখানকার নারীরা তাদের চোখের আকার বাড়ানোর জন্য উজ্জ্বল ঝকঝকে রঙগুলি ব্যবহার করতেন আইশ্যাডো হিসাবে। রঙিন সবুজ, হলুদ এবং নীলগুলি প্রাকৃতিক খনিজ থেকে সূক্ষ্ম পাউডার তৈরি করা হয়েছিল যা তারা তাদের চোখের পাতায় ব্যবহার করতেন।
এছাড়াও চোখের রূপরেখার জন্য একটি কাঠকয়লা ধূসর পাউডার তারা কোহল হিসাবে ব্যবহার করতেন যা আনা হয়েছিল দূরবর্তী দেশগুলি থেকে। এটা বলা হয় যে কোহল চোখের প্রাকৃতিক রঙ বৃদ্ধি করবে পাশাপাশি তাদের বড় এবং উজ্জ্বল দেখাবে।
এই সূক্ষ্ম পাউডারটি তৈরি করা হয়েছিল কোহল জাফরান, ছাই, কাঁচ বা অ্যান্টিমনি থেকে। এই সূক্ষ্ম পাউডারটি ব্যবহার করার জন্য হাড়ের কাঠিগুলিকে প্রায়শই তেল বা জলে ডুবিয়ে রাখা হত এরপর তা কোহল পাউডারে ডুবিয়ে চোখের উপর প্রয়োগ করা হত।
একজনের ভ্রুর মধ্যখানে কালো কালি ব্যবহার করে একটি ভ্রু আঁকা হত। আর প্রাচীনকালে এটিকে সৌন্দর্যের চিহ্ন হিসাবে গন্য করা হত।
৪. গোলাপী গালঃ
নারীরা নিজেদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে নিজেদের গালে লাল গোলাপী বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করে। প্রাচীন রোমের নারীরাও এই কাজটি করতেন। আর এটি করার জন্য তারা বেশ কিছু অদ্ভুত পদ্ধতি অবলম্বন করতেন।
রোমান নারীরা গালের রঙ গোলাপি করার জন্য গোলাপের পাপড়ি ছিড়ে নিয়ে এসে সেগুলি নিয়ে গালে লাগাতেন। এইভাবে তারা তাদের গাল রঙ করতে। আবার গাল লাল করতে যেমন লাল চক, অ্যালকানেট এবং কুমিরের মূত্রইত্যাদি ব্যবহার করতেন। এছাড়াও আরো বেশ কিছু পদার্থও তারা ব্যবহার করতেন।
৫. চুল কোঁকড়া ও রঙ করাঃ
কথা বলা হয় যে একজন নারীর সৌন্দর্য্য একটি প্রতীক হচ্ছে তার চুল। তাই চুল প্রতিটি নারীর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ধারাবাহিকতা থেকে বাদ যায় না প্রাচীন রোমের নারীরাও। পছন্দসই চুলের ধরন পেতে তারা অদ্ভুত কিছু কান্ড করেছেন।
প্রাচীন রোমের নারীরা ব্রোঞ্জের রড ব্যবহার করে চুল কোঁকড়া করতেন। এর জন্য এই ব্রোঞ্জের রডকে হালকা গরম করে নিয়ে চুল গুলোকে রোলিং করে রেখে দেওয়া হত বেশ অনেকক্ষনের জন্য। এবং অলিভ ওয়েল ও ব্যবহার করতেন তারা।
সেই সমাজে স্বর্ণকেশী এবং লাল চুলের উচ্চ চাহিদা ছিল। যার কারনে তারা তাদের চুলের উপর হালকা আস্তরণের রঙ ব্যবহার করতেন। এই রংগুলির বেশিরভাগই তৈরি করা হত শাকসবজি এবং প্রাণীজ পদার্থ থেকে। জল ও তেল দিয়ে ধুয়ে ফেলা যেতে পারত এই রংগুলো।
৬. সুন্দর হাসির জন্য চাই সুন্দর দাঁতঃ
সেই সময়ে মানুষের কাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জিনিস হল ফকফকে সাদা দাঁত। বর্তমান দিনে প্রযুক্তির অগ্রগতির কারনে সাদা দাঁত অর্জন করার জন্য রয়েছে বিভিন্ন পদ্ধতি।
তবে সেই সময়ে প্রাচীন রোমানরা টুথপেস্ট তৈরি করত পশুর হাড়ের ছাই বা দাঁতের ছাই দিয়ে। আবার কেউ যদি তার একটি দাঁত হারিয়ে ফেলতেন, সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হাতির দাঁত বা হাড় থেকে একটি কৃত্রিম দাঁত তৈরি করে সেটিকে একটি সোনার তারের মাধ্যমে তাদের মুখে পূঃণস্থাপন করা হত।
৭. ঘনঘন মেকাপ নেওয়াঃ
সেই সময়েও যেহেতু মানুষ ফর্সা ত্বকের অধিকারী হওয়ার পিছনে ছুটত তাই তারা এর জন্য ত্বকে একধরনের সাদা ক্রিম ব্যবহার করত। আর এই ক্রিমটির প্রাথমিক উপাদান ছিল সীসা।
সীসা যা একটি বিষাক্ত উপাদান। তবুও এই ভেবে তারা এটিকে ব্যবহার করতেন যে তাদের ত্বকের রঙের পরিবর্তন করবে। বিশেষ করে এই ক্রিম বেশি ঘনঘন ব্যবহার করতেন ধনী নারীরা। এর ফলে তাদের ত্বকের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেওয়া সত্ত্বেও তারা সেসবে দৃষ্টিপাত করতেন না।
ওই সময়েও নারীরা নেইল পালিশ ও ব্যবহার করতেন। আর সেই সময় এই নেইল পালিশ পশুর চর্বি ব্যবহার করে তৈরি করা হত। পশুর চর্বি থেকে উৎপন্ন করা হত একটি হালকা গোলাপী রঙ যা নখকে সূক্ষ্ম ও উৎকৃষ্ট করে তুলত।
৮. সুগন্ধি ব্যবহার
শরীরের দুর্গন্ধ কমাতেও প্রাচীন রোমানরা বিশেষ যত্ন নিতেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে সুন্দর দেখানো ছাড়াও শরীর থেকে সুগন্ধি প্রস্ফুটিত হওয়া ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয়।
বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি প্রাচীন রোমেও তৈরি করা হয়েছিল। এইগুলির মধ্যে কিছু ছিল তরল পদার্থের আবার কিছু ছিল আঠালো কঠিন পদার্থের।
এই সুগন্ধিগুলি তৈরি করা হয়েছিল ফুল এবং পাতা থেকে। জলপাই এবং আঙ্গুরের রস থেকে তৈরি করা অনফেসিওর ছিল পারফিউমের মূল উপাদান। এবং সেই পারফিউমে বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে রঙিন করা হত।