পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করতে নিষেধ করার পেছনে কি কারন রয়েছে?
আপনি কি পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করছেন? তাহলে এখনি সতর্ক হয়ে যান। কারণ আপনার একটু অসাবধানতা ডেকে আনতে পারে আপনাদের জন্য বড় বিপদ। যদি নিজেদেরকে বিপদে পড়া থেকে রক্ষা করতে চান তাহলে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার আগে কিছু বিষয় যাচাই করে নিন সাথে মেনে চলুন কিছু নিয়ম।
১. সংযোগ যাচাই করুন
আপনার একটা ভুল আপনাকে ঠেলে দিতে পারে বড় সমস্যার দিকে। যেমন যেখানে সেখানে ওয়াইফাই পয়েন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। এই কাজটি করার আগে সবসময় যাচাই করে নেওয়া উচিত যে সেটি সঠিক ওয়াইফাই পয়েন্ট কিনা। কারন অনেক ক্ষেত্রেই হ্যাকাররা ভুয়া ওয়াইফাই পয়েন্ট বানিয়ে থাকে। যার সাথে যুক্ত হওয়া মানে নিজের বিপদ নিজে ডেকে নিয়ে আসা অর্থাৎ এর ফলে আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে, এবং আপনার সব তথ্য বেহাত হয়ে যেতে পারে।
তাহলে এটি বোঝার উপায় কি?
খুব সহজ একটি উপায় আছে, কোনো ওয়াইফাই পয়েন্ট পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত আছে কিনা সেটা দেখে নিন। কারন সাধারণত হ্যাকারদের তৈরি করা পয়েন্টের সাথে যাতে সহজে সবাই যুক্ত হতে পারে তার জন্য পাসওয়ার্ড থাকে না। তবে কোনো রেস্তোরা বা ক্যাফের ওয়াইফাই পয়েন্ট বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত করে রাখা থাকে। তবে এই বিষয়ে কখনো সংশয় দেখা দেয় তাহলে সেখানে ভিপিএন ব্যবহার করে প্রবেশ করতে হবে। কিন্তু ঢোকার পর যদি দেখা যায় যে কিছু একটা ভুল আছে, সেক্ষেত্রে সেখানে কানেক্ট না হয়ে আগে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সঠিক পয়েন্ট যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে।
২. এনক্রিপ্টেড/সিকিউরড সংযোগ ব্যবহার করুন
এনক্রিপ্টেড বা সিকিউরড সংযোগ কি? এটি হল এমন সংযোগ যেটা ব্যবহার করলে আপনার সমস্ত তথ্য গোপন কোডে রূপান্তরিত হয়ে আরেক প্রান্তে পৌঁছাবে। আর এর মধ্যে সেই তথ্য যদি কেউ হাতিয়েও নেয় সেক্ষেত্রে সে সেটা ডিকোড করতে পারবে না।
সাধারণত আমরা যেসমস্ত ওয়েবসাইট বেশি ব্যবহার করে থাকি সেগুলিতে আগে থেকেই সুরক্ষিত সংযোগ ব্যবহার করা থাকে। তবুও কোনো ওয়েবসাইট সিকিউরড সংযোগ ব্যবহার করা আছে কিনা সেটা একবার যাচায় করে নিয়ে তারপর ব্যবহার করা সুরক্ষিত। এই জন্য আপনাকে দেখতে হবে যে ওই ওয়েবসাইটের ইউ.আর.এল-এর বাম পাশে যদি ‘সিকিউরড’ বা তালা চিহ্ন আছে কিনা। যদি ‘সিকিউরড’ বা তালা চিহ্ন থাকে তাহলে সেটি সিকিউরড সংযোগ ব্যবহার করছে। কিন্তু যদি দেখেন যে ‘নট সিকিউরড’ লেখা আছে তাহলে বুঝবেন যে ওই ওয়েবসাইট কোনো সিকিউরড সংযোগ ব্যবহার করছে না।
তারপরেও যদি আপনাকে এই ধরনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হয় সেক্ষেত্রে আপনি একটা ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ব্যবহার করতে পারেন যেটার নাম হল ‘HTTPS Everywhere’। এই এক্সটেনশনের কাজ হল কোনো ওয়েবসাইটের ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগকে এনক্রিপ্টেড সংযোগে পরিণত করা।
৩. ভিপিএন বা টর ব্রাউজার ব্যবহার করুন
VPN এর full form হল “Virtual Private Network”। এই নেটওয়ার্ককের কাজ হল যখন আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন সেটির আসল আইপি অ্যাড্রেস অন্যদের থেকে লুকিয়ে রেখে একটি প্রাইভেট ইন্টারনেট টানেল হয়ে গন্তব্য স্থলে নিয়ে যাওয়া। ঠিক এই একই কাজটি করে থাকে টর ব্রাউজারও। তবে একটু পার্থক্য আছে ভিপিএন এবং টর ব্রাউজারের মধ্যে। ভিপিএন আপনার আইপি অ্যাড্রেসকে একবার পরিবর্তন করবে তবে টর ব্রাউজার আপনার আইপি অ্যাড্রেসকে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করবে।
সেই জন্য কোনো পাবলিক ওয়াইফাইয়ে যুক্ত থাকা অবস্থায় ভিপিএন ব্যবহার করা উচিৎ। কারণ হ্যাকার পাবলিক ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে শুধু যে পাসওয়ার্ড এবং ব্যাংকের তথ্য চুরি করে নয় সেটা কিন্তু নয় সে চাইলে ফোনে থাকা তথ্যও চুরি করে নিতে পারে। এছাড়াও ভিক্টিমের ডিভাইসে ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে। আর এটা মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পিসিতে অনেক রকম সুবিধা থাকার ফলে, এটি নিজের সুরক্ষাবর্ম নিজের মতো করে বানিয়ে নিতে পারে। তবে মোবাইলের ক্ষেত্রে এটা অনেকটাই সীমাবদ্ধ, যেমন ‘Https Everywhere’ এক্সটেনশন মোবাইলে পাওয়া যায় না। সেই জন্য এটা মোবাইলের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. গোপন তথ্য আদান-প্রদান নয়
যদি আপনি কোনো পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করেন তাহলে সেই সময় নিজের কোনো গোপন বা সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদান করা একদমই উচিৎ নয়। আর এই বিষয়টি যদি মেনে না চলেন তাহলে সেই তথ্য যেকোনো মানুষের হস্তগত হয়ে যেতে পারে। এর জন্য কোনো দক্ষ হ্যাকারের প্রয়োজন পড়বে না। তবে আপনি যদি পাবলিক ওয়াইফাইয়ে বসে কোনো কাজ করতে থাকেন, তবে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় সব সময় মাথায় রাখবেন যে পাবলিক ওয়াইফাইয়ে যুক্ত থাকাকালীন সময়ে সংবেদনশীল তথ্য যেন কোথাও ইনডেক্স (কোথাও কোনো তথ্য প্রদান করা) করা না হয়। এছাড়াও আরও একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন যে পাবলিক ওয়াইফাইয়ে যুক্ত থাকাকালীন সময়ে কোনো সাইটের পাসওয়ার্ড ইনডেক্স (কোথাও কোনো তথ্য প্রদান করা) করা না হয়। তবে বেশ কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আছে, যেমন- ফেসবুক বা গুগল যাতে সিকিউরড সংযোগ থাকে। তবুও পাবলিক ওয়াইফাইয়ে কোনো সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদান না করাই ভাল, তাতে যত সিকিউরড সংযোগই থাকুক না কেন।
৫. ফাইল শেয়ারিং সীমিত রাখুন
আপনি যদি পাবলিক ওয়াইফাইয়ের সাথে যুক্ত থাকেন সেই সময়ের জন্য কোনো ফাইল শেয়ারিং এপ্লিকেশন ব্যবহার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিৎ। কারন আমরা আগেই জেনেছি যে আমরা যেহেতু একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকি সেই জন্য হ্যাকারদের পক্ষে আমাদের তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও হ্যাকাররা ফাইল শেয়ারিং অপশন ব্যবহার করে আপনার ল্যাপটপে ম্যালিশাস ফাইল প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে। তাই হ্যাকারদের কবল থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে চাইলে যদি আপনি ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে ‘Network and Sharing Centre’-এ গিয়ে ‘Turn off File and Printer Sharing’ অপশনটি ক্লিক করে ল্যাপটপের ফাইল শেয়ারিং অপশনটি বন্ধ করে দিন। আর আপনি যদি ম্যাক ইউজার হয়ে থাকে, তাহলে ‘Air Drop’ -এ গিয়ে ‘Allow Me to be Discovered by: No One’ অপশনটি ক্লিক করে ফাইল শেয়ারিং অপশনটি বন্ধ করে দিন। এর ফলে ল্যাপটপে কেউ ফাইল শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে তথ্য চুরি করতে পারবে না।
৬. কানেক্ট হওয়ার আগে শর্তাবলী খেয়াল করুন
অনেক সময় পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় কিছু শর্তাবলী থাকতে দেখা যায় কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই সেই সমস্ত শর্তাবলীকে উপেক্ষা করে পাবলিক ওয়াইফাইয়ের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু এই কাজটি করা আপনাদের পক্ষে সবসময় যে শ্রেয় হবে তা কিন্তু নয়। কারন পাবলিক ওয়াইফাইয়ে কানেক্ট হওয়ার আগে, বিশেষ করে যখন কোনো ক্যাপটিভ পোর্টালে আমাদের সাইন আপ করতে হয় তখন বেশ কিছু শর্তাবলী আমাদের সামনে প্রদর্শিত হয় এবং সেই শর্তাবলীর মধ্যে এমন কিছু আপত্তিকর বিষয়েও তারা অনুমতি নিয়ে থাকে। এই জন্যই এই শর্তাবলী পড়ে নেওয়া উচিৎ। এর ফলে যদি কোনো আপত্তিকর শর্ত থাকে তাহলে আপনার পক্ষে সেই ব্যাপারে সর্তক হওয়া সম্ভব।
আপনি যদি সুরক্ষার সাথে নিশ্চিন্ত মনে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করতে চান তাহলে এই প্রতিটি ধাপ মেনে চলুন। একটিও ধাপ বাদ দিলে চলবে না কারন এখানে উল্লেখিত প্রত্যেকটি সুরক্ষা পদ্ধতি একটি অপরটির পরিপূরক। প্রত্যেকটি পদ্ধতির নিজস্ব কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেই জন্যই একটি পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা পূরণ করতে আরেকটি পদ্ধতির সহায়তা নেওয়া হয়েছে। এতগুলো ধাপ মেনে চলা কঠিন হলেও সুরক্ষার জন্য এই সমস্ত ধাপ মেনে নিয়ে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা উচিত।a