অফবিট

ঋতুস্রাব শুরু হলেই জঙ্গলে দিয়ে আসা হত ভারতবর্ষের কোন রাজ্যের মেয়েদের?

নিউজ ডেস্ক – প্রাচীন যুগ থেকেই মহিলাদের ঋতুস্রাব সম্পর্কে এক বিরাট কৌতুহল দেখা যায় পুরুষ জাতির মধ্যে। এই ঋতুস্রাবের পাঁচটি দিন অচ্ছুত বলে মনে করা হয় সকল মেয়েদেরকে। বর্তমানে এই সকল বিষয় নিয়ে বেশি মাথা না ঘামালেও শিক্ষার আলো জাগরণের আগে অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রাক্কালে বা মধ্যযুগীয় সময়কালে ঋতুস্রাবের এই দিনে সকল মেয়েদেরকে এক ঘরে করে রাখা হতো এবং তাদেরকে অচ্ছুত বা অপবিত্র  মনে করা হতো। 

তবে এই সকল চিত্র সমাজের কাছে চেনা হলেও সকল নিয়ম-নীতির চরম সীমানায় পৌঁছে গিয়েছে  মহারাষ্ট্রের অন্যতম দরিদ্র ও অনুন্নত একটি জেলা গাডচিরোলির মাদিয়া গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা।  এই সম্প্রদায়ের সকল  নারীদের ঋতুস্রাব হলেই তাদের এক আলাদা অস্বাস্থ্যকর কুঁড়েঘরে থাকতে হয়। স্থানীয় ভাষায় এই কুঁড়েঘর গুলির নাম “কুর্ম ঘর বা গাওকর।” মাসের ওই পাঁচটি দিন যেখানে সকল মেয়েরাই এক অসহ্য যন্ত্রণা ও শারীরিক কষ্টের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে সেখানে তাদেরকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোন সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই ওই কুড়ে ঘরে বাস করতে হয় ঋতুমতী রমণীদের। শুধু এইখানে ক্ষান্ত নয় এই সম্প্রদায়ের নিয়মাবলী।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার পাশাপাশি এই কয়েকটা দিন তাদেরকে গ্রামের কুয়ো থেকে জল তুলতে বারণ করা হয় এবং কোন রান্না করতেও দাওয়া হয় না। গোষ্ঠীর অন্যান্য মহিলারা জল ও কিছু পরিমাণ খাবার দিলে সেই খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হয় তাদের। এমনকি সেই সময় কোন পুরুষ মাসিক চলাকালীন কোন নারীকে স্পর্শ করলেই তাদের সঙ্গে সঙ্গে স্নান করতে হয়। কারণ মাদিয়া গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের ধারণা ঋতুমতী নারীদের কেউ স্পর্শ করলে তারা অপবিত্র হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন ধরেই এমন গোঁড়ামি মনোভাব পোষণ করে আসছেন মাদিয়া গোষ্ঠী সম্প্রদায় আদিবাসীরা। বর্তমান সমাজে শিক্ষা বিজ্ঞানের উন্নতি ঘটায় এই সকল মানসিকতাকে চরম নিন্দা করেছেন  খেরওয়াদি সোসাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামের সংগঠন। এই সংগঠনের সদস্যরা বলছে, ঋতুমতী নারীদের জন্য পাকা ঘর, টয়লেট, ঘুমানোর বিছানা, জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়ে তারা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। আজ মুম্বাইয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তত্ত্বাবধানে ঋতুস্রাব নারীদের জন্য পাকা ঘর তৈরি করা হয়েছে ওই গ্রামে। নিচু মানসিকতা সম্পন্ন গ্রামের সিংহভাগ ব্যক্তিরাই এই কর্মকে ভিন্ন চোখে দেখলেও পাকা বাড়িকে স্বাগত জানিয়েছে টুকুম গ্রামের বাসিন্দারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *