অফবিট

পৃথিবীর সবথেকে ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে স্থান সম্পর্কে জানা আছে?

নিউজ ডেস্ক –   ভুত-প্রেত ভূতুড়ে গল্প বরাবরই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই বিষয়গুলি। গবেষকদের গণনা অনুযায়ী প্রমাণিত হয়েছে যে বিষয় সম্বন্ধে মানুষ অবগত নন সেই বিষয়ে সর্বদাই কৌতুহল বেশি থাকে সকলের। এই কৌতূহলের লিস্টের প্রথম নম্বারে আসে ভূত। কারণ বর্তমানে শিক্ষিত সমাজ বিশ্বে কোন অতৃপ্ত আত্মা বা অপশক্তির রয়েছে তা মানতে সম্পূর্ণ নারাজ। তবে সকলে অস্বীকার করলেও গবেষণা করে দেখা গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভৌতিক স্থান হল  জাহাজ কুইন মেরি। তবে প্রথম থেকেই জাহাজটি ভূতেদের আস্তানা হয়নি। জানা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই জাহাজটি তৈরি করা হয়েছিল। চার বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমে ১০১৯ ফুট লম্বা এবং ৮১,২৩৭ টনের জাহাজটি তৈরি করতে খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন মিলিয়ন ইউরো। তবে নতুন নির্মিত এই জাহাজের নামকরণে রানী ভিক্টোরিয়ার নাম সুপারিশ করা হলে রাজা পঞ্চম জর্জ তাঁর স্ত্রী মেরি অফ টেকের নামে জাহাজটির নামকরণ করেন। যার কারণে পরবর্তীতে জাহাজটির নাম হয় জাহাজ কুইন মেরি। এই জাহাজ যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সফলতা দেওয়ায় জাহাজের রং বিশ্লেষণ করে সেনাদের তরফ থেকে তার নাম দেওয়া হয় ‘গ্রে ঘোস্ট’। তবে পরবর্তীতে যে জাহাজটি ঘোস্টদেরই আস্তানা হবে সেই সম্পর্কে অবগত ছিল না কেউই। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত এই জাহাজটি যুদ্ধ হয়ে গেলে তাকে ১৯৬৭ সালে কিনে নেয় লং বীচ বন্দরের একটি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে সেখানে বিভিন্ন ভাসমান হোটেল মিউজিয়াম রূপে ব্যবহার করা হয়। তবে সেখানেই ঘটে বিপত্তি। জাহাজকে বহুকষ্টে পুনর সংস্করণ করে এক বিশাল আকৃতির হোটেলে পরিণত করলে সেখানে বিভিন্ন গেস্টরা আসলে তারাই বিভিন্ন ভৌতিক ক্রিয়া-কলাপের জন্য কমপ্লেন জানায়। ‌লেজেন্ডস অব আমেরিকা নামক একটি ওয়েবসাইটের সূত্র থেকে জানা যায়, কমপক্ষে ৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই জাহাজের মধ্যে। এর আগে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ কিউরা কেরার সাথে সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছিল। ধারণা করা হয় এইসব মৃতব্যক্তির অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় গোটা কুইন মেরি জুড়ে।  তবে জাহাজে অবস্থিত একাধিক গেস্টদের অভিযোগ ছিল তারা ছায়ার মতো কোনো নারী মুর্তিকে দেখতে পান।  এই জাহাজের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রুমটি ছিল বি৩৪০ নম্বর রুম। তার ভয়ঙ্কর এর মাত্রা এতটাই ছিল যে বাধ্য হয়ে রুমটিকে বন্ধ করে দিয়েছিলেন জাহাজ কর্তৃপক্ষরা। কুইন মেরি জাহাজের ভৌতিক গল্প বলতে গেলে সেখানকার গেস্টদের বক্তব্য শোনা প্রয়োজন।

জাহাজে যে ভূতের অস্তিত্ব রয়েছে এটা প্রথম বলেছিল সেখানকারই কর্মরত এক ১৭ বছরের যুবক। জাহাজে কয়লা সংগ্রহ করাই ছিল তার কাজ। ওই যুবক জানিয়েছিলেন জাহাজের করিডরে এক নারী মূর্তিকে বেশ কয়েকবার ব্যাক বাঁশি  বাজাতে দেখেছেন তিনি। এই বিষয়ে লেজেন্ডস অব আমেরিকা বলেছে, জাহাজটির শিশুদের একটি খেলাঘর থেকে প্রায়ই একটা শিশুর কান্না শুনতে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, কোন এক শিশুর অতৃপ্ত আত্মা এখনও এই খেলাঘরের মায়া ছাড়তে পারেনি। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে যুদ্ধ কালীন অবস্থায় ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ কিউরা কেরার সাথে সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছিল। ধারণা করা হয় এইসব মৃতব্যক্তির অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় গোটা কুইন মেরি জুড়ে।

তবে জাহাজের কর্মী যুবক ছাড়াও জাহাজটির সাবেক গাইড ন্যান্সি অ্যানি এরকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘একদিন আমি যখন জাহাজটির সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম তখন আমি ষাট-সত্তর বছর বয়সী এক সাদা চামড়ার মহিলাকে দেখতে পেয়েছিলাম। তাকে একা একা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি খানিকটা অবাক হয়েছিলাম। কৌতুহলবশত সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন তিনি। এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।’

নিজের ভৌতিক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সার্ভার ক্যারল নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘জাহাজটির যাত্রী হয়ে যখন আমি কেবিনের কাছাকাছি গিয়েছিলাম তখন দেখেছিলাম এক জন নারী সেখানে বসেছিল। আমি তার পোশাক দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার ছিল গাঢ় কালো চুল। তার কোনো মেকআপ ছিল না। তাকে দেখতে খানিকটা ফ্যাকাশে মনে হচ্ছিল। আমি কখনো তাকে নড়তে দেখেনি। আমি যখন তার খুব কাছে এগিয়ে গেলাম, তখনি ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। সেই নারীর কাছাকাছি এগুতেই তিনি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। আমি হতভম্ব হয়ে চর্তুদিকে তাকে খুঁজলাম। কিন্তু কোথাও তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।’

শুধুমাত্র যে এই সকল ব্যক্তিদের ভৌতিক অভিজ্ঞতা শুনেই জাহাজটিকে ভুতুড়ে বলে প্রমাণিত করা হয়েছে তা নয় দু-তিনজন ছাড়াও জাহাজের খেলনা ঘর থেকে এক শিশুর প্রতিনিয়ত কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। এমনকি চেঞ্জিং রুমের দরজার সামনে এখনো কারোর ভিজে পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। মনে করা হয় তারা জাহাজের এই বিলাসবহুলতা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেননি। তবে কুইন মেরি জাহাজের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রুম বি৩৪০ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল একাধিক কারণে। সেখানে যে অতিথিরা রাত্রি যাপন করত তাদেরই কোন না কোন ভৌতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। দু’একটা উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাতে শোয়ার সময় মাঝে মাঝে তাদের বিছানা কেঁপে উঠতো এমন কি বাথরুমে জল পড়ার আওয়াজ হতো। তাই এ সকল কমিটির আসার পর এই রুমটি বন্ধ করা  হলেও সম্প্রতি গেস্টদের অনুরোধের পুনরায় রুমটি খোলার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষরা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *