দেবী দূর্গার সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল?
বাঙ্গালীদের মধ্যে হিন্দুদের সবচেয়ে বড়ো উৎসব হলো দূর্গাপুজো। এই উৎসবে যে যেখানেই থাকুক না কেনো ঠিক এই সময় সকলেই বাড়ি ফিরে আসেন। এই পাঁচটা দিন বছরের আর বাকি দিনগুলোর মতোন হয় না। সারা বাংলা সেজে ওঠে ঝলমল আলোতে, কচি-কাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্করা পর্যন্ত নতুন জামা কাপড়ে সেজে ওঠেন।
বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে আড্ডা, রাতভর জেগে ঠাকুর দেখা, পেট পুজো, অষ্টমীতে শাড়ি-পাঞ্জাবি পড়ে অঞ্জলি দেওয়া এইসবের মধ্যে দিয়েই এই পাঁচটা দিন কেটে যায়।
মহালয়া দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। কিন্তু এই মহালয়া কি? কেন পালন করা হয় মহালয়া? তা কি জানেন??
মহিষাসুর নামে এক পাশবিক অসুর একসময় দেবতাদের স্বর্গলোক দখল করেছিল। এই মহিশাসুর ব্রহ্মাদেবের থেকে বর পেয়েছিল কোনো পুরুষ তাকে হত্যা করতে পারবে না। তখন সমস্ত দেবতাগণ মিলে ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শরণাপন্ন হন। তখন ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও মহেশ্বরের ত্রিনয়নের তেজে সৃষ্টি হয় দেবী দূর্গার।
তবে দেবী দূর্গার সৃষ্টি নিয়ে আরও কয়েকটি মতামত শুনতে পাওয়া যায় যেমন –
পৌরাণিক মতে, বিশ্বের সকল শক্তির মিলিত রূপ হলেন দেবী দূর্গা। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতদের মত অনুযায়ী মহাদেবী দূর্গাশক্তির বিকাশ আনুমানিক চতুর্থ থেকে পঞ্চম খ্রিস্টাব্দে রচিত মার্কন্ডেয় পুরাণ এবং শ্রী শ্রী চন্ডীতে। তবে সূত্রপাত হয় মহাভারত, বিষ্ণু পুরাণ, হরিবংশ, দেবী পুরাণ, ভাগবত ও বাসনপুরাণ, মহাভারতের বিরাটপর্বে ও ভীষ্মপর্বেও দূর্গাস্তব আছে। ভীষ্মপর্বে ত্রয়োবিংশ অধ্যায়ে অর্জুন দেবী দূর্গার স্তব পাঠ করেন। বিষ্ণু পুরাণের পঞ্চম অংশে দেবকীর গর্ভে দূর্গার জন্মানোর বৃত্তান্ত আছে। শ্রী শ্রী চন্ডীতে বলা হয়েছে তিনি জগত্পালিকা আদ্যাশক্তি ও সনাতনী।
পুরাকালে মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে দেবতারা শ্রী বিষ্ণু ও মহাদেবের কাছে সাহায্যের জন্য উপস্থিত হন। প্রবল পরাক্রমশালী মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সকল দেবতার তেজ থেকে এক অপূর্ব নারীর সৃষ্টি হয়। সকল দেবতারা তাঁকে নিজেদের অস্ত্র ও অলংকার দিয়ে সজ্জিত করেন। এই নারীই মহিষাসুরকে যুদ্ধে আবাহন করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ত্রিশূল দিয়ে গেঁথে মহিষাসুরকে বধ করেন দেবী দূর্গা। এছাড়া মধু কৈটভ, শুম্ভ-নিশুম্ভকেও পরাজিত করেন তিনি।
শ্রী শ্রী চন্ডীতে বর্ণিত আছে প্রাচীনকালে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য সর্বহারা হয়ে নিজেদের সবকিছু ত্যাগ করে বনে গমন করেন। বনের মধ্যে তারা এক মুনির নিকট যান। মেধা মুনি নামে ওই ঋষি সব শোনার পর তাঁদের বলেন “বিশ্ব সংসারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জগতের পালন কর্তা বিষ্ণুর যে মহামায়া শক্তি তারই প্রভাবে এই রকম হয়। সেই মহামায়া প্রসন্না এবং বরদা হলে মানবের মুক্তি লাভ হয়। মুনির উপদেশ পেয়ে সুরথ ও সমাধি মাটির প্রতিমা গড়ে ৩ বছর কঠোর তপস্যার পর দেবী তুষ্ট হয়ে তাদের দেখা দেন এবং মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। পরবর্তীতে বসন্তকালকে দূর্গাপূজার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে বাসন্তী পূজার প্রচলন করেন।
রামায়ণ অনুসারে শারদীয়া দূর্গাপুজো বা অকাল বোধনের সূচনা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। তিনি রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য লঙ্কা গমন করার আগে অকাল বোধন করে শরত্কালে দেবী দূর্গার পুজো করেন। রামচন্দ্রের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বর দেন দেবী। দেবীর দশহাতে ত্রিশূল, খড়গ, সুদর্শন চক্র, ধনুর্বাণ, শক্তি খেটক, পূর্নচাপ, নাগতালা, অংকুশ ও পরশু এই দশ ধরনের অস্ত্র দেখা যায় বলে তিনি দশ প্রহরণ ধারিণী।