ইভেন্টবনেদী বাড়ি এবং গ্রাম বাংলার পূজা

দুর্গামূর্তি চুরির পর একসাথে তিরিশ এর বেশি দুর্গা পুজা হয় বাংলার কোথায়?

পায়েল বিশ্বাসঃ বাঙালির সবথেকে বড় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হল দুর্গোৎসব। পুরনো রীতি মেনে শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে বাঙালির গর্ব এই দুর্গাপূজা! গোটা একটা বছর অপেক্ষার অবসানের পর বাঙালি মেতে ওঠে এই উৎসবে। প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি শহর সেজে ওঠে নতুন আমোদে। প্রায় প্রতি রাস্তার মোড়ে, ক্লাবে, পাড়ায় ও গ্রামে একটি করে দুর্গাপূজা অবশ্যই দেখা যায়। কিন্তু এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে একটি বা দুটি না একসাথে প্রায় ৩০ এর বেশি দুর্গাপুজো হয়ে থাকে।

গ্রামটির নাম চারকোল এটি বীরভূমের অজয় নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। ব্রিটিশদের আমল থেকেই চলে আসছে তাদের এই বিপুল সংখ্যক দুর্গাপূজা। বিশাল ভাবে আয়োজিত এই দুর্গাপূজায় দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন রকমের দুর্গা প্রতিমা। কোনোটি মাটি দিয়ে তৈরি আবার কোনোটি বা পাটের।

কিন্তু কিভাবে শুরু হলো এই বিশাল সংখ্যক দুর্গাপূজার? উঠে আসে নানান মতামত। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় অজয় নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রামটি তৈরি হয়েছিল নদীর বালি জমে। এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বহু সংখ্যক মানুষ ধীরে ধীরে এখানে বসতি গড়ে তোলে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দুর্গাপূজার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

তবে এই বিপুল সংখ্যক দুর্গাপূজা হওয়ার আসল কারণ না জানা গেলেও এ পূজা বিষয়ে নানান মতামত জানা গেছে। গ্রামের কিছু বয়স জ্যেষ্ঠ দের মতে ব্রিটিশদের আমল থেকে চলে আসা এই দুর্গা প্রতিমা আগে ছিল সোনার। কিন্তু এই দুর্গামূর্তি একসময় চুরি হয়ে যায়, তারপর থেকেই  মৃন্ময়ী রূপে মাকে পূজা করা হচ্ছে।

আবার কিছু লোকের ধারণা এই গ্রামে বহু আগে থেকেই তাদের পূর্বপুরুষেরা শুরু করেছিল এই দূর্গা উৎসব এবং এখনো এই উৎসব  বংশ পরম্পরায় চলে আসছে।

গ্রামের অনেকে এই উৎসবকে হিন্দু মুসলিম ঐক্য হিসেবে মনে করে, গ্রামটি হিন্দুপ্রধান হলেও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বহু সংখ্যক মুসলিম দুর্গা প্রতিমা দর্শন করতে আসে এবং অংশগ্রহণ করেন তাদের এই পূজার আনন্দে।

যদিও একসঙ্গে এত সংখ্যক দুর্গাপূজা হওয়ার আসল কারণ না জানা যায় নি, তবে অধিকাংশ মানুষের মতে এটি তাদের ঐতিহ্য যা শত শত বছর ধরে চলে আসছে। চারকোল গ্রামের পূজা একটি সাম্প্রদায়িক মিলনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে পুরো ভারতবর্ষের সামনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *