পৃথিবীর প্রথম ভৌতিক ঘটনা! সরকারি ভাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে স্পেনে
আত্মা বা স্পিরিটের অস্তিত্বে প্রমান নিয়ে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন কাহিনী চলে আসছে। বিজ্ঞান কোনওদিনও আত্মা বা প্রেত ত্বত্ত্ব কোনওদিন স্বীকার করেনি কারন বিজ্ঞান প্রমানের উপর নির্ভরশীল কিন্তু আত্মার অস্তিত্ব প্রমান করা সম্ভব নয়। কিন্তু স্পেনের মাদ্রিদ শহরের এক পুলিশ ফাইলে এমন একটি কেসের কথা লেখা রয়েছে যার কোন ব্যাখা পাওয়া যায়নি। ভ্যালাকাস ফাইল নামে এই কেসের উপর ভিত্তি করে নেটফ্লিক্সে একটি সিনেমা রয়েছে ভেরোনিকা, বলা হয় এই সিনেমাটা এতটাই ভয়ের যে সবার পক্ষে এই পুরো সিনেমা দেখা সম্ভব নয়। মাদ্রিদের একটি ঘরে ঘটা এই পুরো ঘটনার প্রমান শুধু সেই ঘরের বাসিন্দা কিংবা প্রতিবেশীরা নয় বরং মাদ্রিদের পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা সবাই এর সাক্ষী। এটি পৃথিবীর প্রথম কোন ভৌতিক ঘটনা যা সরকারি ভাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে স্পেনে।
ঘটনার সূত্রপাত স্পেনের মাদ্রিদ শহরের দক্ষিনভাগে ভ্যালাকাস নামক একটি জায়গায়। এখানে লুইস মেরাইন রাস্তায় একটি বাড়ি রয়েছে যার আট নাম্বার বাড়িতে গুটারেজ পরিবার বাস করতো। এই বাড়িটি এখনও রয়েছে। এই পরিবারের বড় মেয়ে স্টেফেনা লোজারো এবং তার দুই ছোট ভাই বোন সহ এখানে থাকত। স্টেফেনার জন্ম হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ অবধি ভ্যালাকসের ওই বাড়িতে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। ১৯৯০ সালে আঠারো বছর বয়স যখন হয় স্টেফেনার তখন থেকেই তার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। স্টেফেনা রাতে হঠাৎ উঠে ঘরে চলতে শুরু করতো, ঘরের কাঠের দেওয়ালে নোখ দিয়ে আঁচর কাটতো। স্টেফেনার স্বাস্থ্য প্রতিদিন ভেঙে পড়তে থাকে, একদিন রাতে স্টেফেনা তার ভাই ম্যাক্সির উপর আক্রমন করে। বাধ্য হয়ে তার বাবা মা স্টেফেনাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। স্টেফেনা জানায় সে রাতে শোবার কিছুক্ষন পরই ঘরে একটি কালো ছায়া দেখতে পায় এবং তার পরেই সে এইরকম করে। স্টেফেনার বাবা মা তার ঘর ভালোভাবে পরীক্ষা করে। ঘরের একটা আলামারিতে বেশ কিছু পুরোনো বই দেখতে পায় তারা। মূলত তন্ত্র উপাসনা, কালো জাদু, আত্মাকে ডাকা সম্বন্ধিত বই ছিল এগুলো। এসব বই তার বাবা মা ঘর থেকে সরিয়ে ফেলে এটা ভেবে যে এবার বোধহয় তাদের মেয়ে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরেরদিন রাত থেকে আবারও সেইসব পুরোনো ঘটনা ঘটতে থাকে। স্টেফেনা মাঝরাতে চেঁচাতো, গোটা ঘরে ঘুরে বেড়াতো আরও সব অদ্ভুত কাজ করতো। বাধ্য হয়ে তার বাবা মা স্থানীয় ক্যাথলিক গীর্জায় গিয়ে পাদ্রীকে সব ঘটনা জানায়। কিন্তু পাদ্রী অনেক চেষ্টা করেও স্টেফনাকে সুস্থ করতে পারোনি। এরপর স্টেফেনার বাবা মা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, সমস্ত পরীক্ষা করে দেখা যায় স্টেফেনা একদম সুস্থ কোনও সমস্যা নেই। তবুও ১৪ জুলাই স্টেফেনাকে হসপিটালে ভর্তি করা হয় আরও পরীক্ষার জন্য। হসপিটালে ভর্তি করার তিন চারদিনের মধ্যে হঠাৎ স্টেফনা মারা যায়। ময়নাতদন্ত করে দেখা যায় হঠাৎ দমবন্ধ হয়ে যাবার কারনে স্টেফনার মৃত্যু হয়েছে। যে ডাক্তাররা স্টেফেনাকে পরীক্ষা করেছিল তারা জানায় স্টেফনার কোন রোগ ছিলনা। এই পুরো ঘটনায় ভ্যালাকাসের হসপিটাল কর্তৃপক্ষও অবাক হয়ে যায়। ক্যাথলিক রীতিতে স্টেফনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার পর স্টেফনার বাবা মা স্টেফনার ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করে বন্ধ করে দেয়। এভাবে কিছু সপ্তাহ কেটে যায়৷ একদিন রাতে হঠাৎ স্টেফনার ঘর থেকে চিৎকার শোনা যায়। পরেরদিন সকালে তার বাবা মা যখন ঘর খুলে দেখে দেওয়ালে নতুন করে আঁচড়ানোর দাগ, ঘরের সব জিনিস পড়ে আছে। সবচেয়ে বড় অদ্ভুত বিষয় ঘর অদ্ভুত ভাবে ঠান্ডা অথচ বাকী বাড়িতে তাপমাত্রা স্বাভাবিক কিন্তু এই ঘরেই যেন ঠান্ডা হাওয়া বইছে। সব পরিষ্কার করে স্টেফনার ঘর বন্ধ করে দেয় তার বাবা মা। কিন্তু রাত হলে আবারও সেই একই ঘটনা ঘটতে থাকে। যার ফলে বাধ্য হয়ে তারা প্রতিবেশীদের সব ঘটনা জানায়। একজন প্রতিবেশী তাদের বাড়িতে রাতে থাকতেও আসে। সেদিন রাতেও সেই একই ঘটনা ঘটতে থাকে, চিৎকারের আওয়াজ, ঘরে সবকিছু ফেলে দেবার আওয়াজ আসতে থাকে। এরই মধ্যে স্টেফনার স্কুল থেকে তিনজন শিক্ষক তার বাড়িতে আসে বাবা মার সাথে কথা বলতে। এদের মধ্যে একজন শিক্ষক তার বাবা মা কে জানায় স্টেফনার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিল স্কুলে। কিছুমাস আগে সেই বান্ধবীর প্রেমিকের এক দুর্ঘটনায় হঠাৎ মৃত্যু হয়ে যায়। যার কারনে তার বান্ধবী খুবই ভেঙে পড়েছিল। তিনি জানান একদিন তিনি দেখেন স্টেফেনা সহ তার বান্ধবী এবং আরও দুইজন মেয়ে স্কুলের পেছনে একটি কাঠের বাক্সের উপর কাঁচের গ্লাস রেখে গোল হয়ে বসে কিছু একটা করছে। তখন তিনি গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করে কি করছে জবাবে স্টেফেনা জানায় তার ওই বান্ধবীর প্রেমিকের আত্মাকে ডাকার চেষ্টা করছে। সাথে সাথে তিনি ওই বাক্স ও গ্লাস ফেলে দেন এবং তাদের বকে সেখান থেকে স্কুলে ফেরত পাঠিয়ে দেন। ওই শিক্ষক আরও জানান তিনি গ্লাস ফেলে দেবার সাথে সাথে একটি সাদা ধোঁয়ার মতোন জিনিস স্টেফেনার নাকে ঢুকে যায়। এরপরেই স্টেফেনার মা বাবা বুঝতে পারে তাদের মেয়ের সাথে ঠিক কী হয়েছে। এর পরবর্তী দুই বছর প্রতিরাতে একই ঘটনা ঘটতে থাকে।
১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর সন্ধ্যাবেলায় প্রায় দুই বছর পর স্টেফেনার বাবা মা তাদের মেয়ের ঘরে ঢোকে। তাদের সামনেই দেওয়ালে থাকা স্টেফেনার ছবি হঠাৎ পড়ে যায়। তার মা দেওয়ালে ছবিটি আবার আটকে দেন কিন্তু আবারও ছবিটা পড়ে যায়। এরপর তার বাবা যেই ছবিটা হাতে নেয় হঠাৎই ছবিটিতে স্টেফেনার মুখটা পুড়ে যায়। গোটা ছবির ফ্রেম ও বাকী অংশ পোড়েনা শুধু মুখটা পুড়ে যায়। ইন্টারনেটে সার্চ করলে এই ছবিটা পাওয়া যাবে। এই ঘটনার পরই স্টেফনার বাবা মা স্টেফনার ঘর বাইরে থেকে লোক এনে পুরো বন্ধ করে দেয় এবং দরজার বাইরে ভারী আসবাবপত্র রেখে দেয়। সেইদিন রাতে বিগত দুই বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশী আওয়াজ হতে থাকে ঘরে৷ পরেরদিন সকালে দেখা যায় ঘরের দরজা রীতিমতো খোলা এবং সব আসবাবপত্র ছড়িয়ে পড়ে আছে। এরপরেই স্টেফনার বাবা মা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের বাকী দুই সন্তানের জন্য তারা এই বাড়ি ছেড়ে দেবে। সেদিন রাতেই স্টেফনার মা ঘুমের মধ্যেই অনুভব করে কেউ তার উপর বসে তার গলা টিপে ধরছে। পরেরদিন সকালেই স্টেফনার বাবা মা পুরো ঘটনা ভ্যলাকাস পুলিশ স্টেশনে জানায়। স্থানীয় পুলিশ ইন্সপেক্টর জশ ন্যাগ্রি সহ চারজন পুলিশ অফিসার সেই বাড়িতে আসে তদন্তের জন্য। পুলিশের সামনেই স্টেফনার ঘরের বারান্দা, বাথরুম থেকে চিৎকার হতে থাকে। পুলিশ অফিসাররা ঘরের ভিতরেই একটি ঠান্ডা বাতাস অনুভব করে। স্টেফনার বাবা মা পুলিশকে জানায় প্রতিদিন রাতে তাদের ছোট ছেলে ম্যাক্সের ঘরে দুটো বিছানা আছে। যখন ম্যাক্স একটি বিছানায় রাতে ঘুমোয়, পরেরদিন সকালে তাকে অন্য বিছানায় পাওয়া যায়। স্টেফনার বাবা জানায় তিনি নিজের চোখে দেখেছেন রাতে যেন তীব্র হাওয়া ম্যাক্সকে অন্য বিছানায় নিয়ে যায়। পুলিশ প্রথমে এই কথা বিশ্বাস করেনি। জশ ন্যাগ্রি নিজে সেদিন রাতে স্টেফনার বাড়িতে থাকে। তার সামনেই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকে এবং ম্যাক্স তীব্র হাওয়ার প্রভাবে অন্য বিছানায় চলে যায়। এর পরেরদিন অর্থাৎ ২৭ নভেম্বর পুলিশ রিপোর্ট তৈরি করে যাতে জানানো হয় ভ্যালকাসের লুইস মেরাইন রাস্তায় আট নম্বর বাড়িতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা ব্যাখা করা সম্ভব নয়। এই তথ্য যখন মিডিয়াতে আসে তখন বহু সংস্থা এখানে অনুসন্ধানে আসে কিন্তু কেউই এই ঘটনা ব্যাখা করতে পারেনি। পুলিশ স্টেফনার বাবা মাকে অন্যত্র চলে যাবার নির্দেশ দেয়। স্টেফেনার বাবা মাও তৈরি ছিল। পরে তারা অন্য জায়গায় চলে গেলে তাদের সাথে কোনওদিন কিছু হয়নি। কিন্তু লুইস মেরাইনের সেই আটনম্বর বাড়ি আজও অভিশপ্ত, এখানে আজও কেউ বসবাস করেনা।