কলেজ ড্রপআউট। গ্যালিলিও গ্যালিলির অজানা কিছু বিষয়
বিজ্ঞান জগতে গ্যালিলিও গ্যালিলির নাম কে না জানা। তিনি ইতালির দার্শনিক তথা জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ হিসেবে খ্যাত। বিশেষ করে জ্যোতির্বিদ্যা এবং গতিবিজ্ঞানে অনস্বীকার্য অবদান রেখেছিলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি। তবে অনেকেই এই বিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অজানা। সেক্ষেত্রে এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হয়েছে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির অজানা কিছু বিষয়।
বিজ্ঞানীর জীবন সম্পর্কে শুরু করতে গেলে তার জন্ম সাল থেকে শুরু করাই ভালো। ১৫৬৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ইতালির পিসায় শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি। এরপরই শৈশব ও কিশোর বয়সে তিনি মেডিসিন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর গণিত এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী। তাঁর আবিষ্কৃত একাধিক জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল টেলিস্কোপ দিয়ে আবিষ্কার করা বস্তুটি। মূলত কোপারনিকাস সূর্যকেন্দ্রিক সিস্টেমের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার দিকে পরিচালিত করেছিল তার আবিষ্কার। সেই কারণে বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পরেও তার অনস্বীকার্য আবিষ্কার প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিল এবং সে কারণেই তার নাম জগত শ্রেষ্ঠ হয়েছিল।
I)নামের প্রথম ও শেষ নাম একই রকম:- ১৫ শতকের মাঝামাঝি সময় নাগাদ ইতালিতে নামের পাশে পদবি ব্যবহার করা ঐচ্ছিক ছিল। এমনকি অনেকে নিজের নাম পরিবর্তন করতেও পারতেন। বিশেষ করে আইনত সম্মতি ছিল। তাই গ্যালিও এবং গ্যালিলিও এই দুটি ছিল বিজ্ঞানের পরিবারের পদবি। তিনি পরবর্তীকালে এই দুটি পদবিকে যোগ করেই নিজের নাম রেখেছিলেন।
II)গ্যালিলিও একজন কলেজ ড্রপআউট ছিলেন:- সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে ছিলেন গ্যালিলিও। পরিবারের সকলের শিক্ষিত হলেও আর্থিক দিক থেকে ছিলেন অসচ্ছল। তাই গ্যালিলিওর পিতা তার মাত্র ১৬ বছর বয়সে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছিলেন চিকিৎসা বিদ্যায় পড়াশোনার জন্য। কিন্তু আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকমতো বেতন না দেওয়ার জন্য ১৫৮৫ সালে গ্যালিলিওকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হলেও নিজের গণিতের প্রতি আকর্ষণকে কখনোই নষ্ট হতে দেননি গ্যালিলিও। টানা চার বছর নিজে থেকেই গণিতের চর্চা করে গিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে গণিত সম্পর্কে তার অগাধ জ্ঞান লোকসমাজে প্রচারিত হতেই পিসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যালিলিওকে ডাকা হয়েছিল শিক্ষকতা করার জন্য।
III)গ্যালিলিওর বিবাহ ছাড়াই ৩ জন সন্তান ছিল:- নিজের কৌশর বয়সে গ্যালিলিও মারিনা গাম্বা নামে এক মহিলার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছিলেন। তাদের প্রেমের পরিণতি ছিল দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তান। তবে সেই সময় গ্যালিলিও ছিল পণ্ডিত আর তখনকার দিনে মানা হতো পণ্ডিতরা বিবাহ সম্পর্ক থেকে দূরে থাকেন। এমনকি গ্যালিলিও মনে করতেন যে তিনি মারিনা গাম্বাকে বিয়ে করলে সেটা সমাজবিরোধী কাজ হবে। সেই কারণে আর্থিক দিক থেকে নিজের সন্তান এবং প্রেমিকার সমস্ত ভরণপোষণ সামলেও কোনদিন বিবাহ করেননি তিনি। যেহেতু মারিনাকে গ্যালিলিও বিবাহ করেনি তাই কন্যাদের বিবাহের সময় খুব সমস্যা হয়েছিল। সেই কারণে আর্সেট্রির সান ম্যাটিওতে একটি মঠ তৈরি জন্য নিজের কন্যাদের আলাদা করে জায়গা কিনে দিয়েছিলেন তিনি। আর গ্যালিলিওর কন্যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে সন্ন্যাসিনী হয়ে গিয়েছিল।
IV)তার কাজ চার্চের বিপরীতে ছিল:- গ্যালিলিও নিজের পড়াশোনাকে কাজে লাগিয়ে এটি উদ্ভাবন করেছিলেন যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। তবে সেই যুগের ক্যাথলিক চার্চ গুলো এই বিষয়টাকে মানতে চাননি। সেই কারণে চার্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন গ্যালিলিও। চার্চ অনুযায়ী পৃথিবীর সৌরজগতের কেন্দ্র ছিল এমনটাই নাকি গ্রন্থে লেখা রয়েছে। সেক্ষেত্রে চার্চের বিরোধিতা করা মানে ধর্মের বিরোধিতা করা। ১৬১৬ সালে প্রথমবার গ্যালিলিওকে চার্চের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। এমনকি ১৬৩৩ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। তবে নিজের সিদ্ধান্তেই অটল ছিলেন গ্যালিলিও। যার কারণে একবার গ্যালিলিওকে চার্চের সভা কক্ষে ডেকে কারারুদ্ধ করার শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে গ্যালিলিও নিজের কিছু প্রভাবশালী বন্ধুদের জন্য কারারুদ্ধ এবং দন্ড পাওয়া থেকে নিস্তার পেয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে গ্যালিলিওর বাণী সত্য প্রমাণিত হলে পরবর্তীকালে চার্চের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যালিলিওর কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছিল। তবে গ্যালিলিও নিজের শেষ জীবনে চার্চের নির্দেশে ঘর বন্দি ভাবেই কাটিয়েছিলেন।