অফবিট

বিষের রাণী লোকাস্টার মতো ৭ জন ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার। হত্যা করার পলিসি জানলে চমকে উঠবেন

অপরাধ জগতের ইতিহাসের রয়েছে অনেক সিরিয়াল কিলারের নাম। যাদের ভয়ে মানুষ ত্রস্ত থাকত। এই রকম কিছু সিরিয়াল কিলারের নাম পাওয়া যায় প্রাচীন ও মধ্যযুগেরও। এদের মধ্যে  ৭ জন ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার হল – 

১. প্রক্রস্টেস: দ্য স্ট্রেচার

গ্রীক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে প্রথম সিরিয়াল কিলার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল প্রক্রুস্টেসকে। প্রক্রুস্টেস ছিলেন একজন দুর্বৃত্ত তথা দস্যু। তার একটি অতিথিশালা ছিল যেখানে তিনি আপ্যায়ন করতেন পথ ভ্রমণে ক্লান্ত পথিকদের। এমনকি ওই ক্লান্ত পথিকদের ঘুমানোর জন্য তিনি বিছানারও ব্যবস্থা করতেন। যার ফলে তাদেরকে গরম খাবার ও জল দিয়ে তাদেরকে আপ্যায়ন করা হবে বলে এমনটিই আশা করতেন অতিথিরা , এরপরই শান্তির নিদ্রা।

কিন্তু বাস্তব রূপটি ছিল একদম উল্টো। কারন তাদের চোখের সামনে ওই অতিথি পরায়ণ ব্যাক্তির স্বভাব বদলে যায় পাগলাটে স্বভাবে। বিছানায় অতিথিকে বেঁধে ফেলতেন তিনি। যদি বিছানার সাইজের থেকে কোন অতিথির শরীর সাইজ ছোট হত তখন তিনি ওই ব্যাক্তির শরীর কে টেনে বিছানার সমান করার দানবীয় প্রচেষ্টা চালাতো। এত টানাটানি করার ফলে দেখা যেত যে ওই ব্যাক্তির শরীর থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আলাদা হয়ে গেছে।   

আবার যদি বিছানার সাইজের থেকে কোন অতিথির শরীর সাইজ বড় হত তখন তিনি ওই ব্যাক্তির শরীর  অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতেন। যার ফলে একসময় সেই ব্যাক্তি মৃত্যু বরন করত। এরপর রাজা থিসাস প্রক্রস্টেসের এই এই উম্মাদনার কথা জানতে পারার পর তারই বিছানায় ঘটিয়ে ছিল তার এই উম্মাদনার রাজত্বের অবসান।

২. লিউ পেংলি

খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দীর একজন হান প্রিন্স ছিলেন লিউ পেংলি। অনুমান অনুযায়ী, একশোরও বেশি মানুষকে তিনি হত্যা করেছিলেন, এমনকি সেই সমস্ত মানুষদের থেকে তাদের সম্পত্তিও লুট করেছিলেন। আর তাকে এই হত্যালীলায় সাহায্য করার জন্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন তার ছোট সেনাবাহিনীকে। 
তার অপরাধ বড় হওয়া সত্ত্বেও কোন রকম কোন বিচার হয় নি লিউ পেংলির। কারন তিনি ছিলেন রাজপরিবারের অন্তর্ভুক্ত তাই তার করা জঘন্য কাজের জন্য রাজার কাছে নালিশ করার হলেও তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি। শাস্তি হিসাবে তার থেকে কেড়ে নেওয়ার হয়েছিল তার উপাধি এবং তাকে পাঠানো হয়েছিল রাজ নির্বাসনে।  

৩. বিষের রাণী লোকাস্টা

খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে প্রাচীন রোমে সিরিয়াল কিলার হিসাবে পরিচিত ছিলেন লোকাস্টা। এমনকি মনে করা হয় যে ইতিহাসের পাতায় সিরিয়াল কিলারের তালিকায় তার নাম ছিল সবার প্রথমে। তিনি সরাসরি মানুষকে হত্যা না করলেও তার কারনেই বহু মানুষ প্রান হারিয়েছিলেন অর্থাৎ তার বিক্রি করা বিষ ব্যবহার  করে রোমের লোকেরা নিজেদের শত্রুকে হত্যা করত।     

তার বিষের দ্বারা যে শুধু সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তা কিন্তু নয় রোমান সাম্রাজ্যের ক্লডিয়াস এবং ব্রিটানিকাস এর মতো সম্রাটদেরও মৃত্যু হয়েছিল। আর এই অপরাধের দায়ে তাকে কারাবন্দীও করা হয়েছিল। তবে সম্রাটের সিংহাসনে সম্রাট নিরো বসার পর তাকে সম্রাট নিরো মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এরপর  সম্রাট নিরোর প্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন হয়ে উঠেছিলেন। এছাড়াও মানুষকে তিনি বিষ তৈরি করার শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি তার প্রয়োগেরও শিক্ষা দিয়েছিলেন। 
ঠিক কতজন মানুষকে তিনি হত্যা করেছিলেন তা জানা সম্ভব হয় নি ঠিকই তবে তার এই প্ররোচনার  স্থায়ীত্ব ছিল যতদিন সম্রাটের আসনে নিরো ছিলেন ঠিক ততদিন। নিরোর আত্মহত্যার পর, বন্দী করা হয়েছিল লোকস্টাকে এবং শাস্তি হিসাবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।    

৪. গিলস ডি রাইস

কথা বলা হয় যে মানুষের রূপ চেনা বড় দুষ্কর। আর এই কথাটির জলজ্যান্ত প্রমান হচ্ছে ১৪০৪ সালে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করা গিলস ডি রাইস নামক এই ব্যক্তি। তিনি ফ্রান্সের একজন মার্শাল, দেশের অন্যতম ধনী, সাহসী অভিজাত,সংস্কৃতিবান, পরিশীলিত এবং ধার্মিক ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

জগদ্বিখ্যাত জোয়ান অফ আর্কের সহযোদ্ধা হিসাবে ১৪২৯ সালে ১০০ বছরের যুদ্ধে তিনি ফ্রান্সের পক্ষ থেকে লড়েছিলেন ব্রিটেনের বিপক্ষে। জগদ্বিখ্যাত জন অব আর্কের সাথে মাত্র ২০০ নাইট কে সঙ্গে নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং এই যুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষ থেকে নিজেদের পক্ষে জয় ছিনিয়ে নিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তাই এটা বোঝার আর বাকি থাকে না যে, তিনি একজন শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান যোদ্ধাও ছিলেন।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের কণ্যাকে বিবাহ করেছিলেন রাইস। দেশের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। ৫ টি বিশাল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। এছাড়াও তার একটি ব্যক্তিগত প্রার্থনালয় ছিল। সেখানে ধর্মীয় যাজক ছিল প্রায় ৩০ জন। তিনি এতটাই সম্মানিয় ব্যক্তি ছিলেন যে ফ্রান্সের আদালত তাকে মার্শালের পদে নিযুক্ত করেছিলেন যাতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ফ্রান্সের রাজা চার্লস সপ্তমকে মুকুট দিতে পারেন।

তিনি নিজেকে যেভাবে সমাজের কাছে তুলে ধরেছিলেন সেটি তিনি আদতে ছিলেন না। অর্থাৎ তার এই ভালো এবং গুণী ব্যাক্তিত্বের আড়ালে ছিল এক ভয়ানক ব্যাক্তিত্ব যা দীর্ঘ সময় ধরে জনসমক্ষে আড়ালেই থেকে গিয়েছিল।

তবে কথায় বলা হয় যে সত্য কখনোই চেপে থাকে না। ঠিক সেটাই ঘটেছিল ছিল রাইসের সাথেও। ফ্রান্সের মানুষদের কাছে উন্মুক্ত হয়ে গেল তার কুৎসিত রূপ। তিনি আসলে ছিলেন একজন শিশু হত্যাকারী। আর তার এই নৃশংস কর্মকাণ্ডের কথা উঠে এসেছিল সাধারণ মানুষের সামনে যা ছিল  কল্পনারও বাইরের বিষয়।

জানা যায় যে আনুমানিক প্রায় ৮০০ শিশুকে গিলেস ডি রাইস নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত রক্তপাতের প্রতি আসক্ত ছিলেন। যার কারণে তার প্রাসাদের আশে-পাশে যেসমস্ত গরীব-অনাথ শিশুরা খেলতে আসত তাদেরকে অপহরণ করে নিজের প্রাসাদে নিয়ে যেতেন। এরপর তিনি তার ভৃত্যদের আদেশ দিতেন ছুড়ি দিয়ে এই শিশুদের হত্যা করার। তবে এমন ভাবে হত্যা করতে হবে যাতে শিশুদের রক্ত ছিটকে গিয়ে তার মুখের উপর পরে।

১০ বছর আগে ধর্মদ্রোহিতার জন্য মৃত্যুদন্ড হয়েছিল জোয়ান অফ আর্কের আর এই একই অভিযোগ উঠেছিল গিলেস ডি রাইসের বিরুদ্ধে একজন পুরোহিতকে আক্রমণ করার কারণে। তবে তিনি আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।

অভিযোগকারী সেই ধর্মযাজকের ভাষায় তিনি ছিলেন একজন যাদুকর, ধর্মবাদী, মন্দ আত্মার আহ্বানকারী, নির্দোষদের হত্যাকারী, ভবিষ্যদ্বাণীকারী, সোডোমাইট, বিশ্বাস থেকে ধর্মত্যাগী, মূর্তিপূজক।

সেই সময় তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা খুবই স্বাভাবিক কারণ ছিল চার্চের পক্ষে। কারন তিনি একটি ধর্মীয় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন চার্চের বিরুদ্ধে। যার কারণে চার্চের জন্য হুমকি ছিলেন গিলেস ডি রাইস। এছাড়াও ওই অপরাধে যদি গিলেস ডি রাইসকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় তাহলে তার সকল জমি ও বিশাল সম্পত্তি চলে যাবে চার্চের অধিনে।

সত্য কথা উদঘাটন করার জন্য চার্চ গিলেস ডি রাইসের ভৃত্যদের উপর প্রচুর নির্যাতন করে। তবে প্রথমে তাদের মালিকের বিরুদ্ধে তারা প্রমান দিতে রাজি ছিলেন না। এই নির্যাতনের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন গিলেস ডি রাইস। তবে তিনি নিজে একটি সম্পূর্ণ জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এরপরই তার বিরুদ্ধে ১৪০ টি শিশু হত্যা করার অভিযোগ আনা হলেও আসলে তিনি হত্যা করেছিলেন প্রায় ৮০০ শিশুকে। তিনি কত শিশুকে হত্যা করেছিলেন, এই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।  ১৪৪০ সালে মৃত শিশুদের শত শত বাবা-মা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে তাকে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *