অফবিট

আন্দে কা মিঠা বা আন্দে কা হালওয়ার মতো ভারতবর্ষের রান্না ঘর থেকে হারিয়ে যেতে চলেছে যে খাওয়ার গুলি

ভারতের ইতিহাসের মতই পুরনো ভারতীয় খাবারের  রন্ধনপ্রণালি। যে স্বাদ হয়তো বিশ্বের অন্য কোথাও গেলে পাওয়া যাবেনা । ভারতীয় হেঁসেলে নাম না জানা কত রান্নার পদ লুকিয়ে আছে । বিগত বছরগুলিতে ভারতীয় রন্ধনপ্রণালীর অনেক বড় বিবর্তন ঘটেছে।   ইন্দো ওয়েস্টার্ন ফুডের ট্রেন্ড এবং বাজারে আসা চট জলদি খাবারের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাড়ির স্বাদ।  যদিও ভারতীয় অতুলনীয় স্বাদের খাবারের চাহিদা বিশ্ব দরবারে বেড়েছে।

আজ সেই সকল রান্নার প্রণালী নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো ভারতীয় হয়েও আমরা ভুলতে বসেছি। তাই উৎসবের দিন গুলোয় আর রেস্টুরেন্ট থেকে নয় বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় সুস্বাস্থ্য খাবার।

হারিভে সোপ্পু বেন্ডি রেসিপি

এই পদটির উৎপত্তি দক্ষিণ ভারতের কর্নাটকে। নোটে শাক দিয়ে তৈরি এই সাধারণ খাবারের স্বাদ যে এত সুন্দর হতে পারে সেটা না খেলে বোঝা দায় । নোটে শাক এবং নারকেলের জল দিয়ে এই সুস্বাদু খাবার রান্না করা হয় যা পুষ্টিতে ভরপুর।  হালকা এই খাবারটি গ্রীষ্মকালের জন্য সেরা । খুব কম মশলা দিয়ে বানানো এই পদটি হজমের জন্যও ভালো । গরম ভাতের সঙ্গে এই পদটি পরিবেশন করা হয় । পদটিতে  থাকা নোটে শাক প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে, রিবোফ্লাভিন এবং আরও অনেক কিছুতে সমৃদ্ধ।  তাই স্বাদের সাথে পুষ্টিতে ভরপুর এই খাবারটি । সম্পূর্ণ নিরামিষ এই পদ টিতে বেন্ডি শব্দের অর্থ কন্নড় ভাষায় ঝোল।

ছানা পোড়া বা ছানার কেক

এই মিষ্টিটি ওড়িশা রাজ্যের।  ভুবনেশ্বরে সেরা ছানা পোড়া পাওয়া যায়। এই ছানা পোড়া বেকড পনির ছাড়া আর কিছুই নয়।  এটি একটি সাধারণ মিষ্টি যা ঘরে তৈরি পনির দিয়ে তৈরি অর্থাৎ ছানা দিয়ে তৈরি।  চিনির সাথে ছানা মিশিয়ে কয়েক ঘণ্টা বেক করা হয়। মিশ্রণটি বাদামী হয়ে যাওয়ার পরে এটিকে কিছুটা ঠাণ্ডা হতে দেওয়া হয় তারপর পরিবেশন করা হয়।  এর স্বাদ চিনির ক্যারামেলাইজেশন থেকে আসে।

এই মিষ্টিটির উৎপত্তি বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ওডিয়ার দাসাপল্লা গ্রামে। এটি মূলত দুর্গাপূজার মতো উৎসবের মরসুমে তৈরি করা হয়। বর্তমানে এটি বাড়িতে তৈরি না হলেও ওড়িশার বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায়।

কারুভাদগম:

কারুভাদাগাম খুব  সহজ একটি রেসিপি যা বেশিরভাগ তামিলনাড়ু রাজ্যে তৈরি করা হয়।  এটিকে রোদে শুকানো হয়। আশ্চর্যের ব্যাপার পদটি মাত্র দুটি উপাদান দিয়ে তৈরি: উরদ ডাল এবং করমানি।  ঐতিহ্যগতভাবে এটি লাল-কালো  করমানি দিয়ে তৈরি।

এই রেসিপিটি খুবই বিরল এবং এটি অনেক তামিলিয়ানদের মূল্যবান পারিবারিক রেসিপির একটি অংশ।

কাঁঠালের বীজ এবং কাঁচা আমের তরকারি:

এই রন্ধনপ্রণালী কেরালা রাজ্যের উত্তরাধিকার।  এটি চাক্কাকুরু আমের রেসিপি হিসেবে বেশি পরিচিত। রেসিপিটির প্রধান তিনটি উপাদান হল কাঁঠালের বীজ, আম এবং নারকেল তেল। এই বহুমুখী রান্নাটির স্বাদ একেবারে অনবদ্য। কেরালিয়ান পরিবারগুলিতে গ্রীষ্মকালে এই পদটি আবশ্যিক। এই খাবারটি প্রথমে কাঁঠালের চামড়া কেটে তারপর বীজ বের করে তৈরি করা হয়।  একবার বীজ ধুয়ে শুকিয়ে গেলে, নারকেলের খোসা সহ কাঁচা আম ব্যবহার করা হয়।  এটি ভাতের সাথে সবচেয়ে ভালো খেতে লাগে ।

সুক্কু পাল:

এই বিশেষ পানীয়টি দুধ এবং শুকনো আদার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি।  তবে একটি শুনতে যেমন শুকনো লাগছে খেতে কিন্তু তেমনি সুন্দর । স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী এই পানীয়টি।  যারা সারা বছরই সর্দি-কাশিতে ভোগেন তাদের জন্য এই পানীয় একেবারে উপযুক্ত। আদার একটা আফটারটেস্ট থাকার জন্য এটি খেতে আরো ভালো লাগে । আদা চা খেতে যারা পছন্দ করেন তাদের একবার এটা খেয়ে দেখা উচিত ।

গোয়ান কলোকেশিয়া পাতার মসলা:

এই খাবারটির একটি আদি নাম রয়েছে।  একে টেরে টোনাক বলে।  এটি একটি সামুদ্রিক খাবার যা তারো পাতা বা কোলোকেসিয়া পাতা দিয়ে তৈরি করা হয়।  গ্রেট করা নারকেল এবং মশলা পদটিতে দ্বিগুণ স্বাদ যোগ করে।  এই খাবারটি গোয়াতে বিখ্যাত এবং এটি মূলত বর্ষাকালে তৈরি করা হয়।  যারা  সামুদ্রিক খাবার পছন্দ করেন তাদের রেসিপিটি খেয়ে দেখা উচিত ।  যারা আমিষ পছন্দ করেন তাদের এটি একবার হলেও খাওয়া উচিত কারণ এটি  খাঁটি স্বাদের সাথে একটি  সুস্বাদু খাবারও।

আন্দে কা মিঠা বা আন্দে কা হালওয়া:

ডিম দিয়ে মিষ্টি। হ্যা  ঠিকই শুনেছেন ডিমের হালুয়া । ভারতীয় মিষ্টির বৈচিত্র অনেক এর মধ্যে এই আন্দে কা মিঠা বা আন্দে কা হালওয়া এক অভিনব পদ। এটি তৈরি করতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লাগে । এটি তৈরির জন্য দরকার শুধু ডিম, এলাচ, চিনি, ঘি আর  শুকনো ফল।

পদটির উৎস অজানা হলেও পাকিস্তানে এই আন্দে কা হালওয়া  প্রচুর তৈরি করা হয় । উত্তর ভারতেও এই খাবারটি তৈরি করা হয় । মুসলিমরা তাদের বিভিন্ন উৎসবে ডিমের তৈরি এই মিষ্টি বানায় ।

এই ছিল ভারতীয় হেঁসেলে তৈরি বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া রান্নার তালিকা । এরকম আরো বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী রান্নার পদ রয়েছে যেগুলিকে আবারও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা উচিত । কারণ এগুলি আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে বজায় রাখে । এই খাবারগুলির স্বাদ আমাদের একত্রিত করে । ভারতীয় ভুলে যাওয়া অন্য কিছু রেসিপি হল- অন্ধ্রের কোব্বারি কোভা কাজ্জিকায়ালু, কেরালার পাপ্পাদা ভাদা, গোয়ান ক্ল্যামস নারকেল সুক, চিকেন কোরি রোটি এবং আরও অনেক কিছু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *