অফবিট

প্রথম জুয়া খেলা কোন দেশে এবং কিভাবে চালু হয়েছিল জানেন?

মানুষ সভ্য হওয়ার পাশাপাশি খেলার নেশায় আসক্ত হয়ে উঠছে আজকাল। তবে সব খেলা যে ভালো বা খারাপ এরকম ভাবে ভাবলে বা বলা হলে ভুল হবে। একটা কথা ভুললে হবে না যে জুয়া খেলা হল মানুষের প্রাণনাশক খেলা। পয়সার বাজি রেখে এই খেলার নেশায় যে একবার আসক্ত হয়ে যাবে সে নিজের জেতার আশায় সর্বস্ব উজাড় করে দিতে পর্যন্ত পিছুপা হবেনা। মূলত গোটা পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ রয়েছে যে জুয়া খেলার জন্য অন্যতম শহর হল লাসভেগাস। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে এই শহরের বয়স এখনো পুরোপুরি ১০০ বছরও হয়নি, অথচ এই শহরের জুয়া খেলা বহু প্রাচীন একটা রেওয়াজ। তাহলে একবার চোখ ফিরিয়ে নেওয়া যাক কিভাবে জুয়া খেলা আবিষ্কার হয়েছিল? এবং সেটি গোটা দুনিয়াতে ছড়িয়ে।

আগে একটু জেনে রাখা ভালো যে ২০১৬ সালের গণনা অনুযায়ী গোটা পৃথিবীতে ৪৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলারের ( প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা) অর্থ বিনিময় হয়েছে শুধুমাত্র জুয়া খেলাতে। আজকে সেই হিসাব করলে হয়তো ট্রিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে অর্থের পরিমাণ। গোটা পৃথিবীতে যত পরিমাণ জুয়ায় পয়সা খরচ করেছে মানুষ, তার সিংহভাগ খেলা হয়েছে লাসভেগাসে। এজন্য অনেক সময় শুনতে পাওয়া যায় যে লাসভেগাসকে বহু মানুষ পাপের শহর বলে অভিহিত করে থাকেন।

জানা যায় সর্বপ্রথম ১৬৩৮ সালে ইতালির ভেগাসে জুয়ার আসর বসেছিল। তবে ইতিহাসের আরেকটু গভীরে গেলে দেখা যাবে যে প্রস্তর যুগের বহু আগে অর্থাৎ যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩০০০ বছর আগে এই জুয়া খেলার প্রচলন ছিল। সেই সময় ইরাক, সিরিয়া এবং তুরস্কের মানুষেরা ছোট গুটি নিয়ে খেলা খেলতেন যেটা বর্তমানে পাশা খেলা নামে পরিচিত। এছাড়াও যিশুখ্রিস্টের জন্মের হাজার বছর আগেও চীনে পশুদের উপর বাজি লাগিয়ে খেলার রেওয়াজ ছিল। সুতরাং যীশুখ্রীষ্ট জন্মের বহু আগে থেকেই এই জুয়া খেলার প্রচলন হয়ে আসছে।

বিশ্বের নানা অঞ্চলে অল্পবিস্তার জুয়া খেলার প্রচলন থাকলেও বেশী দেখা যেত প্রাচীন গ্রিসে। তবে সেই সময় গ্রিসের কিছু দার্শনিক ব্যক্তি এই খেলার আসক্তি ও ধ্বংসাত্মক দিকের বিষয়ে জানতেন বলে তারা এই খেলাকে সমর্থন করেননি। কিন্তু ব্রিজের একাংশ মানুষ এতটাই নেশাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল এই খেলার বিষয়ে যে তারা মিথ্যে রটিয়েছিল গ্রিক দেবতা নাকি এই খেলার অনুমতি দিয়েছেন। আদপে সেটি সত্য ছিল না। এমন কি ধর্মের দিক থেকে আব্রাহামিক ও ইহুদি ধর্ম এই জুয়া খেলার উপর কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। এই খেলাকে কেন্দ্র করে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে গ্রিসের একাংশ এই খেলায় মত প্রকাশ করলেও অন্য অংশ সম্মতি জানাননি। পরবর্তীকালে এই খেলার আসক্তি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল সরকারকে।

গ্রীসের পুরান ঘাটলে দেখা যায় যে এই দেশের মানুষদের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ছিল জুয়া। তবে শুধুমাত্র মানুষ নয় রীতিমতো কিছু গ্রীক দেবতাও জুয়া খেলার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। খেলার জন্য বিখ্যাত এই দেবতারা ছিলেন হার্মিস, প্যান, দেবতা হেডিস, জিউস এবং পসেইডন। পুরানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সকল দেবতাদের সবচেয়ে প্রিয় খেলা ছিল জুয়া। সেক্ষেত্রে গ্রীকবাসীরা মনে করতেন যে তাদের দেবতাও তাদের মতন ত্রুটিপূর্ণ। তাই জুয়া খেলার মাধ্যমে তারা এই অন্ধবিশ্বাসী ছিলেন যে দেবতাদের দেখানো পথ অনুসরণ করছে। গ্রিক বাসিদের জুয়া খেলার ধরন ছিল অন্যরকম এমনকি পূর্বের যেসব জিনিস ব্যবহৃত হতো খেলায় আজ নাকি তার প্রচলন রয়েছে। শুধুমাত্র যে জুয়া প্রসিদ্ধ ছিল তাই নয়, এই খেলার পাশাপাশি গ্ৰীকের বাচ্চা ও বয়স্কদের মধ্যে আরও দুটি জনপ্রিয় খেলা ছিল অ্যাস্ট্রাগালোই এবং ভেড়ার নাকলবোন।

নাকলবোন খেলাটি অনেকটা আজকের দিনে লুডু খেলার মত ছিল। কারণ এই খেলায় যে বস্তু গুটি হিসেবে ব্যবহার করা হতো তার ছয়টি অবতল মুখ ছিল। এই মুখগুলোতে সংখ্যা সূচক শিলালিপি ছিল যেখানে বেশি সংখ্যা ব্যবহার ছিল ১,৩,৪,৬ -এর। মূলত এই খেলাটি খেলা হতো পাঁচটি অ্যাস্ট্রাগালোই দিয়ে। প্রাপ্ত বয়স্করা কোন জিনিসের বাজি ধরে এই খেলা খেলতো এবং বাচ্চারাও খুব উপভোগ করত। অনেক বয়ঃজ্যেষ্ঠরা মনে করতেন এই খেলা খেলতে গেলে কিছুটা ভাগ্যের জোর দরকার হয়। ভাগ্যই নির্ধারণ করে দেবে এই খেলায় মানুষের কোন সংখ্যা পড়বে। এই নাকলবোন খেলায় যে টস ধরা হতো তাকে মেডুসা বা মেডাস বলা হতো এবং খারাপ জিনিসকে সাইয়ন বলা হত।

গ্রিকে বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলার প্রচলন ছিল। যার মধ্যে অ্যাস্ট্রাগালোই থেকে বিবর্তিত হয়ে কিবোই নামক জুয়া খেলার প্রচলন হয়েছিল। এখানেও ঠিক একই রকম ভাবে পাশার ছয়টি সমতল মুখে ছয় ধরনের সংখ্যা লেখা থাকতো। অনেকেই মনে করেন ট্রয়ের যুদ্ধের সময় ইউবোয়ার শাসক পালামেডিস এই জুয়া খেলাটি খেলেছিলেন। তাই কিবোই নামক জুয়া খেলার জনক হিসাবে ইউবোয়ার শাসক পালামেডিসকে মনে করা হয়।

পূর্বে শুরু করে আজ পর্যন্ত গ্ৰীকে যে খেলার প্রচলন রয়েছে সেই খেলাটি হল আর্টিয়াসমস। এই আর্টিয়াসমস শব্দের অর্থ হলো জোড়-বিজোড়। মূলত জোর বিজোড়ের অংক কষে এই খেলাটি খেলা হয়। এছাড়াও আরও একটি জনপ্রিয় খেলা হলো চেকার। গ্রীক দার্শনিক প্লেটো ও গ্রীক মহাকবি হোমার নিজের লেখাতে এই চেকার খেলার উল্লেখ করেছিলেন। মাটি গর্ত করে এই খেলাটি খেলা হয়।

পূর্বে গ্রীসে জুয়া খেলা বেআইনি হলেও বর্তমানে সেটি আইনত একটি খেলায় পরিণত হয়েছে। হেলেনিক গেমিং কমিশন এই জুয়া খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্ততপক্ষে গ্রিসের প্রত্যেকটি শহরে একটি করে ক্যাসিনো থাকবেই। কারণ প্রতিবছর এই ক্যাসিনো গুলি থেকে অর্থাৎ জুয়া খেলার মাধ্যমে গ্রীস শহর এক বিলিয়নের বেশি অর্থ উপার্জন করে। অর্থ উপার্জনের রাস্তা, কোন বুদ্ধিজীবী বন্ধ করতে চাইবেন না তাই গ্রীস সরকারও এই জুয়া খেলাকে বৈধতা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *