অফবিট

মানুষের মৃত্যুর পরও কত সময় পর্যন্ত মস্তিস্ক সক্রিয় থাকে জানা আছে!

নিউজ ডেস্ক – মৃত্যু কথাটি দুই অক্ষরের হলেও গভীরতা অনেক বেশি। জটিল সত্য মৃত্যু শব্দটি। ‌ কোন মানুষ মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছালে সেখান থেকে ফিরে আসা খুব কম সংখ্যকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে। তবে মৃত্যুর পর দেহ আসার হয়ে পড়লেও এমন অনেকে ইন্দ্রিয়  রয়েছে যার সহজে মৃত্যু ঘটে না।   এই বিষয়টি সম্পর্কে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মৃত্যুকে ‘ক্লিনিক্যাল ডেড’ বলা হয়। অর্থাৎ কোন মানুষের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই তিনি মারা গিয়েছেন। হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়া মানে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হওয়া যার কারণে সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু ক্লিনিক্যাল ডেথ হওয়ার পরেও ১০ মিনিট মতো মানুষের মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। কারণ সেরিব্রাল কর্টেক্স কিছুক্ষণের জন্য হলেও অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে। যার কারণে মৃত্যুর পরেও অবচেতন মস্তিষ্ক বাইরের জগতের ঘটে চলা কিছু স্মৃতি বুঝতে পারে। 

তবে একটু সহজ ভাষায় ও খোলসা করে বলতে গেলে বলা যায় কোন মানুষের হৃদস্পন্দন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অটোমেটিক্যালি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় স্তব্ধ হয়ে যায়। যার কারণে অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মস্তিষ্ক তার কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মস্তিষ্কে অবস্থিত সেরিব্রাল কর্টেক্স গুলি কিছুক্ষণের জন্য সক্রিয় থাকে। সেই সময় বাইরের জগতে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেই সম্পর্কে অবগত থাকে সেই ব্যক্তি। কার্যত ওই ক্ষণস্থায়ী সময় অর্থাৎ পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যে ডাক্তারি পদ্ধতিতে সিপিআর দিলে তৎক্ষণাৎ রক্ত সঞ্চালন শুরু হওয়ার পাশাপাশি অক্সিজেনের কাজ শুরু হয় যার মাধ্যমে এসে ব্যক্তিটির প্রাণে বাঁচার অল্প হলেও সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি তৎক্ষণাৎ সেই প্রক্রিয়া শুরু না করা হয় তাহলে সেই ব্যক্তির মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।

ড. স্যাম পার্নিয়া, নিউইয়র্কের  Critical Care and Resuscitation Research এর পরিচালক, বলেন- এমনও সম্ভাবনা রয়েছে মানুষ তার নিজের মৃত্যুর ঘোষণা নিজের কানেই শুনতে পায়! কার্ডিয়াক এরেস্টের ফলে টেকনিকালি মৃত কিন্তু সৌভাগ্যজনক ভাবে বেঁচে উঠেছেন এমন কয়েকজনের উপর গবেষণা চালিয়ে তিনি একথা বলেন।

তবে উন্নত প্রযুক্তির চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাই  নয় এমন এক ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করেছেন তিনি সম্প্রতি মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ঘুরে এসেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের রবিন মিশেল জানান “আমি একটি উজ্জ্বল আলো দেখতে পেলাম। মনে হল যে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার সুরঙ্গের ভেতর দিয়ে পড়ে যাওয়া বা এজাতীয় কিছুর কথা মনে নেই, শুধু মনে হচ্ছিল যে আলোর ভেতর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছি। আলোটা ছিল খুবই প্রশান্তিদায়ক। আমি মানুষের আকারে কিছু একটা দেখতে পেলাম যা ছিল আলো দিয়ে তৈরী। তার কাঠামোর সবই মানুষের মতই, শুধু তার চেহারা বলতে কিছু ছিল না। সে আমার দিকে এগিয়ে এল। তারপর বলল, তুমি ফিরে যাও। তোমার এখনও এখানে আসার সময় হয়নি।”

অর্থাৎ এই ব্যক্তির কথা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের একাধিক পর্যবেক্ষণের পরেই এটি প্রমাণিত হয় যে ক্লিনিক্যালি ডেড’ হওয়ার পরেও মানুষের মস্তিষ্ক কিছুক্ষণের জন্য সক্রিয় থাকে। মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলি মৃত্যু ঘটে দেহের মৃত্যুর বহুক্ষণ পরে। সেই ক্ষণস্থায়ী সময় টুকুর মধ্যে মানুষ তার জীবন দশায় কি কি কাজ করেছেন তা সম্পূর্ণ একবার রিভার্সে স্মৃতিচারণ হয়। মানুষের ক্লিনিকাল ডেথের পর বেঁচে থাকা মেমরী সেলগুলো শেষবারের মত অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং স্মৃতিগুলো রি-শাফল করে। তখনই মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের মস্তিষ্ক স্মৃতিগুলো কল্পনা করে নেয়। তবে এই বিষয়ে এখনো কোনো সঠিক ব্যাখ্যা হয়তো দিতে পারেননি বিজ্ঞান এবং ভবিষ্যতেও তা দিতে পারবে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু যে সকল ব্যক্তিরা মৃত্যুর খুব নিকটে থেকে ঘুরে এসেছেন তাদের সকলের মধ্যেই মৃত্যুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জীবনের শেষ লগ্নে একবার সকল মানুষের স্মৃতিচারণ হয় বলে জানিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *