অফবিট

সন্ধ্যা ৬ টার পর প্রবেশে অনুমতি নেই ভারতবর্ষের যে সকল দুর্গে

নিউজ ডেস্কঃ ভূতের অস্তিত্ব বাস্তবে আছে কি নেই তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে ভূতের অস্তিত্ব সত্যিই থাকুক বা না থাকুক মানুষের মনে ভূতের প্রতি ভয় এবং ভূত সম্পর্কে জানার কৌতুহল সেই প্রাচীনকাল থেকে। পৃথিবীতে ভুতুড়ে স্থান বলে কুখ্যাত জায়গার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বেশি দূরে কোথাও খুঁজে যেতে হবেনা ,ভারতেই আছে এমন এক ভুতুড়ে জায়গা। রাজস্থানে ঘুরতে গেলে ভাঙ্গর ফোর্টের নাম তো অবশ্যই শুনেছেন।

অভিশপ্ত ভূতুড়ে প্রাসাদ বলে এর কুখ্যাতি সর্বত্র।ভারতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে স্থান হিসেবে পরিচিত এই ফোর্ট রাজস্থানের আলওয়ার জেলায় অবস্থিত। বর্তমানে পরিত্যক্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত এই শহর এবং ভাঙ্গার ফোর্ট কে নিয়ে বংশ পরম্পরায় প্রচলিত হয়ে এসেছে বেশ কিছু গল্প কথা। 1573 সালে তৈরী এই শহর ভুতুড়ে বলে পরিচিত হওয়ার কারণ হিসেবে যে গল্পগুলি উঠে এসেছে তার মধ্যে একটি হলো। রাজা মধু সিং যখন ভাঙ্গার দূর্গ তৈরি করতে যান সেসময় এর কাছেই ধ্যান করতেন গুরু বালু নাথ। গুরু বালু নাথ মধু সিংকে এক শর্ততে দূর্গ নির্মানের অনুমতি দেন। আর শর্তটি ছিল এই যে, দূর্গের ছায়া গুরুর দেহের ওপর যেন না পড়ে! কিন্তু নিজের ইচ্ছেমতন দূর্গ তৈরির ফলাফলস্বরুপ একটা সময় দূর্গের ছায়া গিয়ে গুরু বালু নাথের ওপর পড়ে আর তখনই নিজের ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে দূর্গটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেন গুরু।

কিন্তু এটা তো ছিল কেবল কাহিনী। অন্য আরো বেশকিছু প্রচলিত স্থানীয় গুজব রয়েছে দূর্গটিকে নিয়ে, যা এখানকার লোকেরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। তাদের মতে, ভাঙ্গারে অতীতে রত্নাবতী নামে এক অতি সুন্দরী রাজকুমারী বাস করতেন। তার 18 বছর বয়স হওয়ার পর থেকে বহু সম্বন্ধ আসতে থাকে তার জন্য। বহু লোক তাকে বিয়ে করার জন্য আবেদন করতে থাকে আর এদের মধ্যে ছিল এক তান্ত্রিক ও।সিঙ্ঘিয়া নামের এই তান্ত্রিক তাকে ভালবাসলেও জানতো যে রাজকুমারী কখনোই তাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না।আর তাই নিজের তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্য নেয় এই তান্ত্রিক। রাজকুমারীর তেলের সাথে মিশিয়ে দেয় মন্ত্র। তবে রাজকুমারী তা দেখে ফেলায় তেলটি মাটিতে ফেলে দেন এবং  সিঙ্ঘিয়াকে অভিশাপ দেন। তবে এইভাবে দমানো যায়নি তাকে।মৃত্যুর আগে সিঙ্ঘিয়া অভিশাপ দেয় যে ভাঙ্গার ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আর কারো জন্ম হবেনা সেখানে। আর আশ্চর্যজনক ভাবে বাস্তবেও সেটাই হয়। কিছুদিনের মধ্যে ই শ্মশানভূমিতে পরিণত হয় ভাঙ্গার। সেই সঙ্গে মৃত্যু হয় রাজকুমারীর ও।

সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ভাঙ্গার ফোর্টে পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। সূর্যাস্তের সাথে সাথে পর্যটকদের বেরিয়ে যেতে হয় এই দুর্গ থেকে। ভুতুড়ে দুর্গ হিসেবে কুখ্যাত হওয়ায় এর কারণ বলে মনে করা হয়।তবে এখনো পর্যন্ত অনেকেই এই দুর্গের রাত্রিবাস করে নিজেকে সাহসী প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন এবং এরকম অনেকেও আছেন যারা এই দুর্গের রাত্রিবাসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে দুর্গটি কোন ভূত নেই। তবে আশ্চর্যজনকভাবে আজ পর্যন্ত কেউই সক্ষম হননি পুরো রাত এই অভিশপ্ত দুর্গে কাটাতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেকেই জানিয়েছেন যে রাতের বেলায় দূর্গের ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ, চুড়ির আওয়াজ, আলো, হালকা অন্যরকম গন্ধ, হাসির মতন নানা আওয়াজ তারা শুনতে পেয়েছেন। স্থানীয়রা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, একরাত ভাঙ্গারে থাকলে পরদিন আর কেউ ফিরে আসেনা। এছাড়া স্থানীয়রা দাবি করেন সূর্যাস্তের পরে এই অঞ্চলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। আর সেই কারণেই সূর্যাস্তের পরে এই অঞ্চল তারা পারতপক্ষে এড়িয়ে চলেন।

এই দুর্গ কে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন গল্প কথার মধ্যে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা বর্তমানে এত বছর পর আলাদা করা খুবই কঠিন।উত্তর লুকিয়ে আছে কেবলমাত্র ওই দুর্গেই। অলৌকিক জিনিসপত্র যদি পছন্দ হয়ে থাকে আপনার তাহলে একবার আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এই ভাঙ্গার ফোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *