অফবিট

যুদ্ধক্ষেত্র AI ব্যবহার করতে চলেছে ভারতবর্ষ!

নিজস্ব সংবাদদাতা: শক্তিশালী ও বলবান মানুষের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন। আর তাই তো এই আকর্ষণ থেকেই বার বার জন্ম নেয় গ্রিক পুরান হারকিউলিস,আধুনিক কালের সুপারম্যান ,ক্যাপ্টেন আমেরিকা বা দেশী শক্তিমান এর মতো চরিত্রের। তার ওপর আবার বলবান হওয়ার সঙ্গে যদি আবার যুক্ত হয় উন্নত ধী শক্তি! তাহলে তো কথাই নেই!

একবার ভাবুন তো, বাস্তবে যদি সত্যিই সুপার হিউম্যান থাকতো তবে যুদ্ধক্ষেত্রে তার ঠিক কি প্রভাব পড়তে পারতো! এই সুপার হিউম্যানরা একদিকে যেমন পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে অনায়াসে নিজের দেহের চেয়ে বেশী ওজন বইতে সক্ষম হবে তেমনি অগন্তি শত্রুর মোকাবিলা ও একাই নিজ হাতে করতে পারবে। প্রজেক্ট এক্সো স্কেলিটন এর জন্ম এখান থেকেই। এক্সো কথার অর্থ এক্সটার্নাল বা বাইরের স্কেলেটন। সহজ ভাষায় বললে দাঁড়ায় বাইরে থেকে অতিরিক্ত কিছু হার্ডওয়্যার দেহের সঙ্গে যুক্ত করে মানুষের দৈহিক ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে মানুষের সক্ষমতা কিভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে কোনো হার্ডওয়ার? আসলে, বিজ্ঞানের উন্নতিকে কাজে লাগিয়ে কম শক্তি খরচ করে বেশি রেজাল্ট পাওয়ার জন্য প্রিও মাটিক্স লিভার, বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক মোটর ও হাইড্রোলিক সংযুক্ত সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর শক্তি ও সক্ষমতা অতিমানবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই প্রযুক্তি, ব্যবহারকারীর হাঁটাচলা সহ যে কোনো কাজের ফলে উৎপন্ন হওয়া সিগনাল দেহের সাথে যুক্ত মোটরগুলিতে পাঠায় আর সাথে সাথে মোটর ব্যবহারকারীর শক্তি বাড়িয়ে দেয়। ব্যবহারকারীর কাঁধ ,কোমর, পায়ে লাগানো যন্ত্রাংশগুলির সহায়তায় নিমেষের মধ্যে ব্যবহারকারী চাইলে হরিণের মতো দৌড়ে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে যেতে পারবে। পারবে নিজের ওজনের চেয়েও অনেক গুণ ভারী জিনিসপত্র অনায়াসে বইতে।

আজ যে প্রযুক্তির কথা আলোচনা করা হচ্ছে তা কিন্তু মোটেই খুব একটা নতুন কিছু নয়। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সেই ১৯৯০ এর দশক থেকেই শক্তিশালী দেশগুলো এই ধরনের প্রজেক্ট নিয়ে নাড়াঘাটা শুরু করেছে। ভারত বহু বছর ধরে এই ধরনের প্রজেক্ট নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছে ঠিকই তবে এতদিন বিভিন্ন কারণে তা শুরু করতে পারেনি। কিন্তু, অবশেষে বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে অদূর ভবিষ্যতেই ফিউচারিস্টিক সোলজার তৈরির পরিকল্পনা আরম্ভ হয়ে গেছে। বর্তমানে ভারতীয় সেনার ডিভিশন SDO সিমুলেটর ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন  DRDO এর সাথে মিলিত ভাবে ভাবে এই ভবিষ্যৎ সৈনিক তৈরির কাজ শুরু করেছে। সেই সঙ্গে DRDO বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী উদ্দ্যোগের সাথে মিলিত হয়ে সমান তালে ভবিষ্যতে ভারতীয় সেনার আরো আধুনিকীকরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই গোটা প্রজেক্ট কড়া নজর রাখছে সেনার সেকেন্দারাবাদ ডিভিশন SDO বর্তমানের SID সিমুলেটর ইনোভেশন এন্ড ডিজাইন। কয়েকদিন আগেই বেসরকারি উদ্যোগের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার আশায় ভারতীয় সেনা জারি করেছে এক RFP। এই RFP অনুযায়ী  প্রাইভেট পার্টি টায়ার ২ আর ৩ ভেন্ডারের সহযোগিতায় গোটা প্রজেক্টটা চালনা করবে SDO /SID এবং এতে রয়েছে বেশ কিছু নির্দেশনামা ও।

যুদ্ধক্ষেত্রে যাতে সেনাকে কোন রকম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে না হয় বা শত্রুর সামনে পড়ে যাতে সৈন্যকে বিপদের মুখোমুখি না হতে হয় সেই জন্য এক্সো স্কেলেটন স্যুটে ১ ঘন্টার এনডিউরেন্স বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই স্যুট যেনো সহজে চার্জ করা যায় এবং যেকোনো দুর্গম পরিস্থিতি ও আবহাওয়ায় যেনো এটি কাজ করতে সমর্থ হয়। স্যুরকে হতে হবে সহজে বহন যোগ্য এবং মডিউলার। যাতে সুবিধা মত একে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া যায় এবং সরঞ্জাম যুক্ত করা যায়। টাইটেনিয়াম , আলমুনিয়াম আলয় যুক্ত কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরী এই স্যুটের ওজন ২৫ কেজির কম রাখা হবে বলেই এখনো পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে সেনাবাহিনীর দাবী অনুযায়ী এই স্যুট যাতে ৫০কেজি ওজন নিয়ে ঘন্টায় ৪থেকে ৫কিমি দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা হবে। এছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেল যুক্ত এই স্যুট যাতে ২৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরতে পারে সে ব্যাপারেও নজর রাখা হবে বলে দাবি করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য আন্টি গ্রাভিটি মডিউল প্রেশার ও ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রন রাখার ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানানা হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। এর ফলে স্যুটের ওজন অনুযায়ী কর্মক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা তো থাকবেই সেই সঙ্গে এর ফলে বেশি উচ্চতা থেকে লাফ মারলেও ব্যবহারকারী  নিখুঁত ভাবে মাটিতে ল্যান্ড করতে পারবে।

পজিশন সেন্সার ,এঙ্গেল সেন্সর  এমনকি জয়েন্ট সেন্সর রিচার্জেবল লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বা পলিমারব্যাটারী ও যুক্ত করা থাকবে এতে। কোনো রকম যান্ত্রিক গোলযোগের চোটে ব্যাটারি হঠাৎ গন্ডগোল করতে লাগল মুভমেন্ট করার সময় ব্যবহারকারী যাতে আঘাত না লাগে সেই জন্য বিভিন্ন সেফটি ফিচারও লাগানো থাকবে এতে। সূত্রের খবর আর সাত-আট মাসের মধ্যেই ইউজার ট্রায়ালের জন্য চলে আসবে প্রোটোটাইপ। আশা করা হচ্ছে আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ভারতীয় সেনাদের গায়ে এক্সো স্কেলেটন স্যুট চেপে যেতে পারে।

আপাতত প্রোগ্রামের জন্য মোট চারটি ফার্মকে সিলেক্ট করেছে SDO বা SID। যারা হলো:কিয়ারা ভার্চুয়ালাইজেশন টেক প্রাইভেট লিমিটেড,জয় রোবটিক্স,প্রেজেন্ট মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং গ্রীন সিটি রিসোর্স ইন্ডিয়া  প্রাইভেট লিমিটেড।

এখানে বিশেষ উল্লেখ্য, কাশ্মীর ও লাদাখের পার্বত্য অঞ্চলে যাতে এগুলো ব্যবহার করা যায় ঠিক সেভাবেই তৈরি করা হবে এই প্রযুক্তি। সেনা সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই যেহেতু সমস্ত প্রযুক্তি প্রায় তৈরি তাই গোটা প্রজেক্ট শেষ হতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে না। এখনো ভারতের এক্সো স্কেলেটন প্রজেক্ট এর কোনো ছবি প্রকাশ করা না হলেও অদূর ভবিষ্যতেই কিছু ছবি জনসাধারণের জন্য প্রকাশিত করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *