অফবিট

পৃথিবীর সবথেকে ভয়ঙ্কর বিষ কি জানেন?

নিউজ ডেস্ক –  সবার প্রথমে জানতে হবে হেমলোক কি! আসলে বহু পূর্বে খুবই ভয়ানক বিষ হিসাবে পরিচিত ছিল হেমলক। সর্বপ্রথম হেমলক বিষ পান করে মৃত্যু হয়েছিল মহান শিক্ষক ও দার্শনিক সক্রেটিসের। 

সময় কলটা ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩৯৯ অব্দ। কোন এক পাপের অপরাধে হেমলক বিষ পান করতে হয়েছিল এই মহান দার্শনিককে। সেই সময় সিক্রেটিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এক পেয়ালা হেমলক  তাকে একবারে পান করতে হবে এবং তার একবিন্দুও যাতে নীচে না পরে। সিক্রেটিসও অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন সেই নির্দেশ। এক পিয়ালা বিষ্যএক নিঃশ্বাসে পান করে  নিয়েছিলেন তিনি। এরপর তাকে শাস্তি স্বরূপ বলা হয়েছিল এই বিষ পানের পরপর তাকে  পাইচারি করতে হবে যাতে সারা শরীরে ভালো করে সেই বিষ মিশে যেতে পারে। সেই মতো তিনিও পায়চারি করেছিলেন এবং আস্তে আস্তে ফুসফুস এবং হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস। 

এবার জানা যাক হেমলক বিষের সম্পর্কে। আসলে এই হিমলক বিষ কি এবং কোথা থেকে উৎপন্ন হয় ! 

হেমলক নামক গাছের রস থেকেই তৈরি হয় এই বিষ। এই গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম কনিয়াম ম্যাকুলেটাম। আইরিশরা এই গাছকে বলে ‘ডেভিল’স ব্রেড’। এই গাছ মূলত ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে  বেশি পরিমাণে দেখা যায়। কোন লালা নর্দমা কিংবা পুকুরের কোলে নিয়ে এসে জন্ম নেয় এই গাছ। পাঁচ থেকে আট ফুট লম্বা ও দীবর্ষজীবি গুল্ম জাতীয় এই গাছের ফুল সাদা রঙের হয় এবং এটি স্যাত স্যাতে জায়গাতেই পাওয়া যায়।  শুধুমাত্র যে হেমলক গাছের রসে বিষ  রয়েছে তাই নয় পাতা থেকে শুরু করে শিকড়, ফুল ,কান্ড সহ  গোটা গাছটাই বিষাক্ত।  কারণ গোটা গাছে কেনিইন নামক বিষাক্ত উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র মানুষ নয় তৃণভোজী প্রাণী ও পাখিরাও কোন সময় এই গাছের ফল কিংবা পাতা সেবন করেও মৃত্যুর মুখে ঢলে পরেছে।  

হেমলক বিষ কোন মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে প্রথমে এই বিষ স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে ‘নিউরো-মাসকুলার জাংশন’ আটকিয়ে দেয়। যে সব তন্তু স্নায়ুর সঙ্গে পেশির সংযোগ স্থাপন করে সেগুলোকে নিউরো-মাসকুলার জাংশন বলে। নিউরো-মাসকুলার জাংশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্নায়ুর সঙ্গে পেশির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পেশিকোষ অসাড় হয়ে পড়ে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে যে সব পেশি যুক্ত সেগুলোও অসাড়ত্ব প্রাপ্ত হলে আক্রান্ত প্রাণীর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। হৃদৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়ায় আক্রান্ত প্রাণী দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।

এমন বিষাক্ত বিষের বিষয়ে বহু নাটক সিনেমা সিরিয়ালে দেখানো  হয়েছে এমনকি মহান বিজ্ঞানী শেক্সপিয়ারও তার কিং লেয়ার, হ্যামলেট ও ম্যাকবেথ নাটকে এবং ইংরেজ কবি জন কিটস তার ‘de to a Nightingale’ কবিতায় হেমলকের কথা উল্লেখ করেছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *