ভালবাসার কারনেই ২৫ বছর ঘরে আটকে রেখে দেওয়া হয়ছিল
নিউজ ডেস্ক – প্রাচীন যুগ থেকেই রোমিও-জুলিয়েট হোক বা রাম সীতা বহু প্রেমী অপূর্ণ। কারোর ভালোবাসা পরিণতি পেয়েছে তো কারোর পায়নি। যে সকল ব্যক্তির ভালোবাসা অসম্পূর্ণ রয়েছে আজ গোটা যুবসমাজকে অনুপ্রেরিত করে তাদের অপূর্ণ ভালবাসা। কিন্তু এমন একটি মেয়ে রয়েছে যার ভালোবাসাকে পূর্ণতা না দেওয়ার জন্য তার মা দীর্ঘ ২৫ বছর ঘরবন্দি করে রেখেছিলো। যদিও পরবর্তীতে চিকিৎসা করে আর ফেরানো যায়নি সেই মেয়েটিকে। তার নাম ব্ল্যাঞ্চ মনিয়ের। দেখতেই যেন স্বর্গের অপ্সরা থেকে কোন অংশে কম নয়। কিন্তু অপ্সরা হয়ে এক সামান্য উকিলকে ভালোবেসেই পাপ করেছিল ব্ল্যাঞ্চ। তাহলে জানা যাক ভালোবাসার নির্মম পরিণতির এই গল্পটি।
১৮৪৯ সালের ১লা মার্চে ফরাসী এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে মেয়ে। যার নাম ব্র্যাঞ্চ মনিয়ের। ম্যাডাম মনিয়ের একটি মেয়ে ও একটি ছেলে মারসেল মনিয়ের যিনি পেশায় উকিল ছিলেন, খুব ভালোভাবেই দিন কাটছিল তার। কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন মেয়ের বয়স ২৫ হয়। যথারীতি সমাজের নিয়মানুসারে মেয়ের জন্য এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলের সঙ্গে বিবাহ ঠিক করেন মা ম্যাডাম মনিয়ের। তবে মনিয়ের মন দিয়ে বসে এক সাধারন পরিবারের সাদামাটা উকিলকে। পরবর্তীতে মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষুব্ধ হয়ে পরে মা। কোন মতেই তাকে ওই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবে না যার কারণে মেয়েকে এক প্রকার পায়ে শিকল বেঁধে ঘর বন্দী করে রাখে। তবে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটি শর্ত রেখেছিল ম্যাডাম মনিয়ের। তার শর্তানুসারে যদি ধনী কোনো ছেলের সঙ্গে ব্ল্যাঞ্চ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তবেই সে মুক্তি পাবে অন্যথা সারা জীবন তাকে ঘরবন্দী থাকতে হবে। মায়ের মতো মেয়েও ছিল সমান জেদি। কোন রকম ভাবেই নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় হয়নি কেউ। যার কারণে ঘরবন্দি অবস্থাতেই দীর্ঘদিন কাটাতে হয়েছে ব্ল্যাঞ্চকে।
পরবর্তীতে ১৮৮৫ সালে শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারণে মৃত্যু হয় ব্র্যাঞ্চের ভালোবাসা ওই উকিল ছেলেটির। তার পরেও মেয়েকে ছাড়েননি তার মা। এমনকি নৃশংসতার চরম সীমানায় পৌঁছে গিয়ে গোটা সমাজের রটিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ে হারিয়ে গেছে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ঘর বন্দী অবস্থায় এক নরকীয় জীবন যাপন করছিলেন ব্ল্যাঞ্চ। তবে ১৯০১ সালে, প্যারিসের এটর্নি জেনারেলের কাছে বেনামে একটি চিঠি পৌঁছে। যেখানে লেখা ছিল মনিয়ের একজনকে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি করে রেখেছে। যদিও প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস হচ্ছিল না কিন্তু তারপরেও ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে এই চিঠির ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করেন জেনারেল। জেনারেলের নেতৃত্বে বহু সৈনিকরা মেনিয়েরের বাড়িতে গিয়ে চিরুনি তল্লাশি চালায়। তবে প্রাথমিক দিকে কিছু না পেয়ে ফিরে আসার সময় এক বিকট গন্ধের ঘ্রান পায় তারা। সেই ঘ্রাণ অনুসরণ করে চিলেকোঠার ঘরে পৌঁছালে সেখানে দেখতে পায় একটি তালাবন্ধ ঘর। সেই তালা খুলতে বীভৎস এক সত্য উন্মোচন হয়। সেখানে দেখতে পায় একটি মেয়ে পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় খাটের উপর শুয়ে রয়েছে এবং পাশে রয়েছে পঁচা খাবারের থালা। এমনকি সারা গায়ে পোকায় ধরে গেছে মেয়েটির।২৫ বছর ধরে বদ্ধ ঘরে থেকে তার ওজন হয়ে গিয়েছিল ২২ কেজি। অপ্সরার মতন রূপ ও জৌলুসতা প্রায় নেই বললেই ভাল হয়।
পরবর্তীতে সেই মেয়েটিকে অর্থাৎ ব্ল্যাঞ্চকে হাসপাতলে ভর্তি করেন তারা। পাশাপাশি অভিযুক্ত মনিয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে তাঁকে কারাগারে বন্দি করে জেনারেল। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হওয়ার হওয়ায় জামিনে ছাড়া দেওয়া হয় মুনিয়েরকে। তবে ততদিনে গোটা শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এক মায়ের নির্মম অত্যাচারের কথা। যার কারণে বাড়ি আসার পরেই এলাকাবাসীর রোষের মুখে পড়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় তার। অন্যদিকে দীর্ঘ ২৫ বছর বন্ধ থাকার কারণে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি ব্র্যাঞ্চ। যার কারণে দীর্ঘদিন মেন্টাল ডিজেবলের জন্য মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসা করেও মৃত্যু হয় তার। ভালোবাসার অপরাধে এমন নির্মম শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে এমন প্রথম মহিলা মনে হয় গোটা পৃথিবীতে একমাত্র রয়েছে ব্ল্যাঞ্চ।