রাশিয়াতে গুপ্তচর নিয়োগ করছে ফ্রান্স!
হিউম্যানিটারিয়ান ডায়ালগ বা এইচডি নামক সংস্থায় কাজ করা এক ফ্রান্সের নাগরিককে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে ওই ব্যক্তি রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্য সংগ্রহ করছিল। মস্কোতে একটি ক্যাফে থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার ভিডিও প্রকাশ করেছে রাশিয়া। প্রথমে ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা না গেলেও পরে সুইজারল্যান্ডের হিউম্যানিটারিয়ান ডায়লগ নামে একটি এনজিও সংস্থা জানায় লরেন্ট ভিনাটিয়ার নামে তাদের এক কর্মকর্তাকে রাশিয়ার রাজধানীতে গ্রেফতার করা হয়েছে। এইচডি নামক এনজিও সংস্থাটি তৈরি করেছে জাতিসংঘের প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল কোফি আন্নান। এনজিও সংস্থাটি জানিয়েছে তাদের প্রধান কাজই বিশ্ব জুড়ে হওয়া সশস্ত্র যুদ্ধকে কুটনৈতিক ভাবে সমাধান করা৷ ইতিমধ্যেই লরেন্ট ভিনাটিয়ার মুক্তির জন্য রাশিয়ার সাথে আলোচনা শুরু করেছে ওই এনজিও সংস্থাটি। তবে রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে ফ্রান্সের ওই ব্যক্তিটি জরুরী কাগজ দেখাতে পারেনি তাদের, ব্যক্তিটি বিগত কয়েক বছরে অনেকবারই রাশিয়া এসেছে এবং বেশ কিছু রাশিয়ান নাগরিকের সাথে বৈঠক করেছে।
২০১২ সালে রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন বিদেশী এজেন্টদের আটক করার ব্যাপারে আইন তৈরি করে। আইন অনুযায়ী এই ধরনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলে অপরাধীর পাঁচ বছর কারাদন্ড হবে। গতবছর রাশিয়ান আমেরিকান সাংবাদিক আলসু কুরমাশেভাকেও এইরকম গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। রাশিয়া জানিয়েছে লরেন্ট ভিনাটিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে গ্রেফতার করা হবে অদূর ভবিষ্যতে। ফ্রান্স এক ফরাসী নাগরিকের রাশিয়াতে গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা স্বীকার করে নিয়েছে তবে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোন লরেন্ট ভিনাটিয়া নামে ওই ফরাসী নাগরিকের ফ্রান্সের এজেন্ট হয়ে কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশ্ব রাজনৈতিক মহলের ধারনা ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি একটি বার্তা দিতেই রাশিয়া ওই ফ্রান্সের নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোন ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দেওয়ার কথা ঘোষনা করার পরেই রাশিয়ার এমন পদক্ষেপ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ন বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমন করে যার মাধ্যমে বর্তমান দশকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সূচনা হয় যা আজ দুইবছর পরেও বিদ্যমান। তখন থেকেই আমেরিকা সহ পশ্চিমা দেশগুলো, যাদের মধ্যে ফ্রান্সও রয়েছে, রাশিয়াকে ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়া শুরু করে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোন ইউক্রেনকে মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান দেওয়ার ঘোষনা করে। ইতিহাসে ৬ জুন তারিখটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। আজ থেকে ৮০ বছর আগে ১৯৪৪ সালের ৬ জুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানির স্বৈরাচারী শাসক অ্যাডলফ হিটলারের নাজিসেনার থেকে ফ্রান্সকে মুক্ত করতে অপারেশন ওভারলোর্ডের পরিকল্পনা করে, যাকে অপারেশন নেপচুনও বলা হয়। ৬ জুন ফ্রান্সের নরম্যান্ডি উপকূলে ল্যান্ড করে মিত্রশক্তি। নরম্যান্ডির যুদ্ধের মাধ্যমে ফ্রান্সে নাজি সেনাকে পরাজিত করা হয় এবং সমগ্র পশ্চিম ইউরোপকে হিটলারের শাসন থেকে মুক্ত করা হয়। ইতিহাসে এই ৬ জুন তারিখটিকে ডি ডে বলা হয়। ডি ডের স্মরনে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি জানান ফ্রান্স তাদের বহরে থাকা মিরাজ ২০০০-৫ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দেবে এবং ইউক্রেনের পাইলটদের প্রশিক্ষন দেবে। ফ্রান্সের কাছে ২৬টি মিরাজ ২০০০- যুদ্ধবিমান এবং ৬৫টি পুরোনো মিরাজ ২০০০ ডি যুদ্ধবিমান রয়েছে।