ফিচার আর্টিকেল

তবে কী চীনা ঋনের নতুন শিকার নেপাল!

বিশ্বে এরকম ঘটনা খুব কমই দেখা যায় যেখানে একটি বড় দেশ ছোট একটি দেশের মিডিয়াকে জন সমক্ষে হুমকি দেয়। সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রদূত একজন নেপালি সাংবাদিককে প্রকাশ্যে হুমকী দেয় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই তথ্য ভাইরাল হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে নেপালের এক সাংবাদিক চীনের দ্বিচারিতার কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। ওই সাংবাদিক জানান ঋনের ব্যাপারে চীন প্রথমে যে শর্ত বিশ্বের সামনে দেখায় সেটা সত্যি নয়। চীন ঋন দেওয়ার ক্ষেত্রে যে সুদের হিসাব দেখায় সেটা সম্পূর্ম মিথ্যা, বাস্তবে সেই সুদের পরিমান আরও অনেক বেশী হয়। 

এশিয়ার ম্যাপ দেখলে দেখা যাবে চীন ও ভারতের মাঝে ছোট একটি পাহাড়ি দেশ নেপাল রয়েছে। নেপালের প্রধান শহর তাদের রাজধানী কাঠমান্ডু। এছাড়াও নেপালে আরও একটি গুরুত্বপূর্ন শহর রয়েছে পোখরা। এই পোখরা শহরে চীনের অর্থায়নে নেপাল পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করেছে। কিন্তু এই বিমানবন্দর এখন নেপালের সবচেয়ে বড় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে তেমন কোনও বিমানও আসেনা, যার জন্য এখানে ব্যবসাও হয়না বললেই চলে। যার জন্য এই বিমানবন্দর থেকে নেপাল সরকারের লাভ কিছুই হয়না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে গত মার্চ মাসে নেপাল সরকারি ভাবে চীনকে অনুরোধ করে এই বিমানবন্দরের জন্য দেওয়া ঋন মাফ করে দেবার জন্য কিন্তু চীন সরাসরি অস্বীকার করে। অবশ্য এখানে দোষ নেপালের সরকারেরই, সরকারের দূরদর্শিতার অভাবের কারনেই নেপাল প্রায় ২১৫ মিলিয়ন ডলার ঋন নেয় এখানে বিমানবন্দর তৈরির জন্য। 

চীন নেপালকে পোখরাতে বিমানবন্দর তৈরির প্রস্তাব দিয়ে বলেছিল ২০২৫ সালের মধ্যে এখানে ২,৮০,০০০ আন্তর্জাতিক যাত্রী আসবে। কিন্ত এখনও পর্যন্ত এখান থেকে কোনও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল করে না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেপালের এক সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানায় চীন পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য দেওয়া ঋনের জন্য দুই শতাংশ সুদের কথা বলে পাঁচ শতাংশ সুদ নিচ্ছে যা আন্তর্জাতিক সুদের হারের থেকেও অনেক বেশী। নেপালি সাংবাদিকের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের রাষ্ট্রদূত চেন সং রীতিমতো হুমকি দিয়ে লেখে তার জীবনে এত বড় মিথ্যা সে শোনেনি, এটা সম্পূর্ন ভুল খবর। এর জবাবে ওই সাংবাদিক লেখে তার কাছে সরকারি প্রমান আছে এই বিষয়ে। এই ঘটনার পরেই চীনের রাষ্ট্রদূতের সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

পোখরা বিমানবন্দরেের ঘটনায় আরও একবার চীন ঋনের ফাঁদের নীতি সামনে এল। চীন প্রথমে ছোট দেশগুলিকে ভুল প্রজেক্টে অতিরিক্ত অর্থ দেয় তারপর সেই দেশ অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে তাদের ভূমি, বন্দর লিজ নিয়ে নেয় দীর্ঘ সময়ের জন্য। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরও চীন এভাবেই ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে নিয়েছে। হতে পারে আগামী দিনে পোখারা বিমানবন্দরও চীন লিজ নিয়ে নেবে। তবে এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নেপাল এবার নিজেকে বাঁচানোর জন্য ভারতের কাছেই সহায়তা চাইবে। নেপাল এমন একটি দেশ যেটি স্ট্রাটেজিক ভাবে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ন কিন্তু নেপাল ভারতের কিছু অংশ তাদের বলে দাবী করে। যেমন সম্প্রতি নেপাল তাদের একশো টাকার নোটে মানচিত্রে লিপুলেখ, কালাপানি, লিম্পিয়ান্ধুরা মতোন ভারতীয় অঞ্চল তাদের বলে দেখিয়েছে। একদিকে যখন চীন নেপালের কাছ থেকে মোটা সুদ নিচ্ছে তখন গত জানুয়ারি মাসে ভূমিকম্পে ভারত নেপালকে ১০০০ কোটি টাকার সহায়তা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *