ফিচার আর্টিকেল

পরমানু অস্ত্রের সংখ্যায় পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত

বহু বছর পর পরমানু অস্ত্রের সংখ্যায় অবশেষে ভারত পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেল। যখনই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমানু ওয়ারহেডের কথা আসে তখনই দেখা যায় পাকিস্তানের কাছে ভারতের তুলনায় সামান্য কিছু পরমানু ওয়ারহেডের সংখ্যা বেশী রয়েছে। এটা খানিকটা অদ্ভুত ছিল কারন সামরিক দিক দিয়ে ভারত বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী দেশ। পাকিস্তানের থেকে অন্তত দশ গুন বেশী আমাদের সামরিক বাজেট। পাকিস্তানের সামরিক বাজেট যেখানে ৭.৬ বিলিয়ন ডলার সেখানে ভারতের সামরিক বাজেট ৭৫-৮০ বিলিয়ন ডলার। ড্রোন প্রযুক্তি, সাইবার প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষনা সবক্ষেত্রেই পাকিস্তান ভারতের থেকে বহুগুন পেছনে রয়েছে। আজ প্রায় পনেরো বছর ধরে সেই পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের পরমানু অস্ত্র কম ছিল এই জিনিসটা খানিকটা অবাক করার মতোন ব্যাপার ছিল। যদি ভারতকে কখনও দু ফ্রন্ট যুদ্ধ অর্থাৎ পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে একসাথে যুদ্ধ করতে হয় তবে ভারতের পরমানু ওয়ারহেড বেশী থাকা প্রয়োজন। অবশেষে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি জানিয়েছে বিগত কয়েক দশকে প্রথমবারের জন্য ভারতের কাছে পরমানু অস্ত্রের পরিমান পাকিস্তানের থেকে বেশী রয়েছে। তবে এখনও চীনের তুলনায় ভারতের পরমানু অস্ত্রের সংখ্যা অনেকটাই কম, চীনকে অতিক্রম করতে এখনও কিছু সময় লাগবে। 

সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে অবস্থিত স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ সেন্টার প্রতিবছর প্রতিরক্ষা বাজেট, পরমানু অস্ত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে। এই সংস্থাটি নিরপেক্ষ ভাবে তথ্য প্রকাশ করে। সম্প্রতি সংস্থাটি জানিয়েছে ভারতের কাছে পরমানু অস্ত্রের সংখ্যা পাকিস্তানের থেকে বেশী রয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ২০২৪ এর তথ্য অনুযায়ী আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ভারত,,পাকিস্তান, ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়া এই নয়টি দেশের কাছে ১২,১২১টি পরমানু অস্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে আমেরিকা ও রাশিয়ার কাছেই বিশ্বের ৯০ শতাংশ পরমানু অস্ত্র রয়েছে। তবে স্টকহোমের রিপোর্টে ইরানের কাছে পরমানু অস্ত্র থাকার ব্যপারে কোনও তথ্য থাকার প্রমান পাওয়া যায়নি এখনও। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী ভারতের কাছে ২০২৩ সালে ১৬৪টি পরমানু অস্ত্র ছিল সেখানে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের কাছে পরমানু অস্ত্রের সংখ্যা বেড়ে ১৭২ হয়েছে এবং ভারত পরমানু অস্ত্রের সংখ্যার বিচারে নয়টি দেশের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। পাকিস্তান তার পরমানু অস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করেনি। পাকিস্তানের কাছে ২০২৩ সালেও ১৭০টি পরমানু অস্ত্র ছিল এবং ২০২৪ সলেও ১৭০টিই পরমানু অস্ত্র রয়েছে। চীনের পরমানু অস্ত্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে চীনের কাছে ৪১০টি পরমানু অস্ত্র ছিল সেখানে ২০২৪ সালে চীনের পরমানু অস্ত্রের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫০০টি। রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে নয়টি পরমানু শক্তিধর দেশের মধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান তাদের পরমানু অস্ত্রের আধুনীকরন করছে এবং বেশ কিছু দেশ ২০২৩ সালে পরমানু ওয়ারহেড বহনে সক্ষম নতুন অস্ত্র তৈরি করেছে। আগামী দশ বছরে ভারত তার পরমানু ওয়ারহেডের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করবে। 

সম্ভবত ভারত ৩০০ পরমানু অস্ত্র তৈরির করে ফেলবে আগামী দশ বছরে। স্টকহোমের রিপোর্টে বলা হয়েছে পাকিস্তান মূলত ভারতের বিরুদ্ধেই পরমানু অস্ত্র মোতায়েন রেখেছে যেখানে ভারত পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে পরমানু অস্ত্র মোতায়েন করেছে। স্টকহোমের রিপোর্টে বলা হয়েছে ১২,১২১টি পরমানু অস্ত্রের মধ্যে ৯,৫৮৫টি পরমানু অস্ত্রই সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে যার মধ্যে ৩,৯০৪টি ওয়ারহেড মিসাইল ও যুদ্ধবিমানে ইনস্টল করে রাখা হয়েছে, মূলত আমেরিকা, রাশিয়া ও চীন ২১০০ টি ওয়ারহেড যে কোনও মূহুর্তে ব্যবহারের জন্য প্রস্তত রেখেছে। এই রিপোর্টে দেখা গেছে উত্তর কোরিয়াও তার পরমানু ওয়ারহেডের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি করছে যা আমেরিকার জন্যও চিন্তার কারন। তবে পরমানু অস্ত্র তৈরি যেমন জটিল তেমনি এর রক্ষনাবেক্ষনও যথেষ্ট ব্যায়বহুল। স্টকহোমের রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২৩ সালে এই নয়টি পরমানু শক্তিধর দেশ পরমানু অস্ত্রের রক্ষনাবেক্ষনে ৯১.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে যার মধ্যে ৫১.৫ বিলিয়ন ডলার একা আমেরিকাই খরচ করেছে। ২০২৩ সালে ভারত পরমানু অস্ত্রের রক্ষনাবেক্ষনে ২.৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, ২০২৪এ এই খরচ আরও বৃদ্ধি পাবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *