একসময় রাজ্যের মূর্তিমান আতঙ্ক লাল সন্ত্রাসী মাওবাদী নেতা কিষেনজি
কমিউনিজম দর্শনটাই একটি কাল্পনিক রূপকথা যার বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। আসলে কমিউনিজম একটি মানসিক ব্যাধি যার কারনে মানুষের শুভবুদ্ধিকে লোপ পেয়ে যায়। বিশ্বের ইতিহাসে কমিউনিজমের মাধ্যমে উন্নত দেশ বা জাতি গঠনের কোনও উদাহারনই নেই বরং উন্নত দেশকে কমিউনিজম ধ্বংস করে দিয়েছে। কমিউনিজমের সবচেয়ে নিষ্ঠুর রূপ দেখা গিয়েছিল জোসেফ স্টালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়নে এবং মাও জে-ডং এর নেতৃত্বে চীনে। মোঙ্গল শাসক চেঙ্গিস খানের পর বিশ্বে সবচেয়ে কুখ্যাত শাসক ছিল মাও জেডং। উগ্র কমিউনিস্ট নেতা মাওয়ের শাসনে চীনে অনাহরে, অত্যাচারে, কারাগারে, গনহত্যার মাধ্যমে অন্তত ৪০ থেকে ৮০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। মাও জে-ডং এর উগ্র কমিউনিস্ট মতবাদই ছড়িয়ে পড়েছিল ভারতে যার কারনে ভারতে তৈরি হয় সিপিআই(এম) বা কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মাওয়েস্ট) অর্থাৎ মাওবাদী। ভারতের নিষিদ্ধ এই উগ্র বামপন্থী এই সংগঠনের অত্যাচারে বহু মানুষের প্রান গেছে। ভারতে এই মাওবাদী সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এই মাওবাদী সংগঠনের প্রধান ছিল কিষেনজি।
মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও বা কিষেনজি আজ থেকে দেড় দশক আগে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল রাজ্যবাসীর কাছে। জঙ্গলমহল সেসময় মাওবাদীদের দুর্গ ছিল রীতিমতো। বিমল, মুরালি, প্রদীপ, জয়ন্ত সহ একাধিক নামে পরিচিত কিষেনজি ১৯৮২-১৯৮৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট) পিপলস ওয়ারের হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে সক্রিয় ছিল। ইংরেজি, সাঁওতালি, তেলেগু, বাঙালি, ওড়িয়া ও হিন্দি এই ছয় ভাষাতেই সাবলীল কথা বলতে পারতো কিষেনজি।
১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত অতি বাম সংগঠনের দণ্ড কারন্য ইউনিটের দায়িত্ব পালন করে কিষেনজি। ১৯৯২ সালেই দল তাকে উত্তরপূর্ব ভারতে পাঠায়। সেখানে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সাথে যৌথভাবে ২০০০ সাল পর্যন্ত উত্তরপূর্ব ভারতেই সক্রিয় ছিল কিষেনজি। ২০০০ সালে অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে এসে ঘাঁটি তৈরি করে কিষেনজি। ঝাড়খন্ড সীমান্তের কাছে জঙ্গলমহলে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য পিপলস ওয়ার গ্রুপ এবং মাওয়েস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার অফ ইন্ডিয়াকে জোটবদ্ধ করে মাওবাদী সংগঠন তৈরি করে কিষেনজি। উগ্র বামপন্থী দল মাওবাদীর মাধ্যমে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর উপর একাধিক হামলা করে কিষেনজি।
মাওবাদীরা ২০১০ সালে পশ্চিমবঙ্গের সিলদা ক্যাম্পে আধাসামরিক সংগঠন ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের ২৪ জন সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে কিষেনজীর নির্দেশে। মাওবাদীর মহিলা কম্যান্ডোরদের দ্বারা এই আক্রমন করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়, এদের একজনকে পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর সকালে সিআরপিএফের ১০০০ কোবরা কম্যান্ডো লালগড়ের বুড়িশোলের জঙ্গল ঘিরে ফেলে। সিআরপিএফের কাছে খবর ছিল কিষেনজি জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল। এবার আর পালিয়ে যাবার কোনও উপায় ছিলনা কিষেনজির কাছে। কিছু ক্ষন গুলি বিনিময়ের করেই ৯:৩০ নাগাদ মারা যায় কিষেনজি। কিষেনজির মৃত্যুর পর রাজ্যে মাওবাদী সংগঠন দুর্বল হয়ে যায়।