অহংকারের কারনেই পবনপুত্র হনুমান কেবল মাত্র একজনের কাছেই হারতে হয়েছিল? কে ছিলেন তিনি?
নিউজ ডেস্কঃ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী পবনপুত্র হনুমানকে সবথেকে শক্তিশালী যোদ্ধা বলে মনে করা হয়। তাই তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে বোধয় করোরই অজানা নয়।তিনি যে খুব অপরিসীম ক্ষমতা অধিকার ছিলেন তা সবারই জানা। তার এতটায় ক্ষমতা ছিল যে সে কারোর কাছে পরাস্ত হননি।কিন্তু পুরান থেকে জানা যায় যে পবনপুত্র হনুমান নাকি তার সম্পূর্ণ জীবন কেবল মাত্র একজনের কাছে নিজের হার স্বীকার করেছিলেন। কে সেই ব্যক্তি? কি করেই বা পবনপুত্র হনুমানকে পরাজিত করেছিলেন? নিশ্চয় জানতে খুব ইচ্ছে করছে।সেটায় স্বাভাবিক।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, একবার রামেশ্বরম এসেছিলেন মাছিন্দারনাথ।তিনি সেখানে আসে শ্রীরাম দ্বারা নির্মিত রামসেতুটি দেখে অত্যন্ত প্রসন্ন হলেন।তারপর তিনি ভগবান শ্রী রামের ভাবনায় মগ্ন হয়ে সমুদ্রে স্নান করতে লাগলেন।ওই সময় ওই স্থানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন রামভক্ত হনুমান। যিনি একজন বুড়ো বানোরের রূপ ধারন করেছিলেন।এরপর হনুমানের নজর যখন মাছিন্দারনাথের এর উপর গেল তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে এই ব্যাক্তি কোনো সাধারণ মানুষ নয় তিনি একজন সিদ্ধ যোগী। তা সত্বেও তিনি মাছিন্দারনাথের শক্তির পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবেন। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য হনুমান তার শক্তি প্রয়োগ করে সেই স্থানে প্রবল বর্ষণ শুরু করে। যখন হনুমান দেখলেন যে এই প্রবল বর্ষণও মাছিন্দানাথের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না তখন তিনি ক্রোধিত হয়ে গেলেন।এরপর ওই বৃদ্ধে বেশে থাকা হনুমান একটি পাহাড়ের কাছে গিয়ে পাহাড়টি খুরতে লাগলেন।মাছিন্দারনাথ তখন ওই বুড়ো বানরকে পাহাড়ের ওপর এইভাবে প্রহার করতে দেখেন।তখন তিনি ওই বানরটিকে বলেন যে হে বানর জল তেষ্ঠা পেলে তখন কেউ কুয়ো বানায় না তোমার মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা তোমার অনেক আগে থেকেই করে রাখা উচিত ছিল।বুড়ো বানরটির মাছিন্দানাথের মুখে এই কথা শুনে বলে উঠেন যে এই গোটা সংসারে হনুমানের থেকে শ্রেষ্ঠ এবং শক্তিশালী যোদ্ধা আর কেউ নেই। এছাড়াও তিনি বলেন যে কিছু বছর তিনি হনুমানে সেবা করেছিলেন যার জন্য হনুমান তাঁর উপরে অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে তার শক্তির কিছু অংশ তাঁকে দিয়েছিলেন। তারপর তিনি মাছিন্দারনাথকে তাঁর সাথে যুদ্ধ করার প্রস্তাব দেন এবং বলেন যে যদি তিনি খুব শক্তিশালী হয় তাহলে যেন তাঁর সাথে যুদ্ধ করে এবং তাঁকে এই যুদ্ধে পরাজিত করেন।তা না হলে তিনি যেন নিজেকে সিদ্ধ যোগী বলা পরিচয় না দেন।
এই শুনে মাছিন্দারনাথ বুড়ো বানরের সাথে যুদ্ধ করার জন্য রাজি হয়ে গেলেন।এরপর শুরু হল দুজনের মধ্যে প্রবল যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই হনুমান আকাশে উড়তে আরম্ভ করলেন এবং মাছিন্দার দিকে পাহাড় পাথর ছুড়তে লাগলেন। তখন মাছিন্দার তাঁর দিকে আসতে থাকা পর্বত দেখে তিনি তাঁর মন্ত্র বলের দ্বারা ওই সমস্ত পর্বতগুলিকে আকাশেই থামিয়ে দিলেন। এতে হনুমান প্রচন্ড ক্রোধিত হয়ে গেলেন। তারপর তিনি তার হাতের উপর সবথেকে বড় পাহাড়টিকে উঠিয়ে নিলেন এবং মাছিন্দানাথের দিকে সেটিকে ছুড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। যখন মাছিন্দারনাথ দেখলেন যে তাঁর দিকে ওই পাথরটি আসবে তখন তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য হাতে জল নিয়ে বার্তাকাশ মন্ত্র প্রয়োগ করে বসলেন হনুমানের ওপর। এই মন্ত্রবলের শক্তি এতটাই প্রবল ছিল যে সেই মন্ত্র প্রয়োগের কারনে হনুমান আকাশে স্থির হয়ে গেলেন। এবং এই মন্ত্র এতটায় শক্তি ছিল যে সে এতোটুকু নড়তে চড়তে পারছিলেন না। মাছিন্দারনাথের প্রয়োগ করা এই মন্ত্রবলের জন্য হনুমানের কিছু সময়ের জন্য তাঁর সব শক্তি শূন্য হয়ে পরেছিল। তাঁর সব শক্তি চলে যাওয়া জন্য তিনি আর পাহাড়টির ভার তার মাথার ওপর সহ্য করতে পারলেন না।এবং তার শরীরে এই ভারের কারণে প্রচন্ড ব্যথা হতে শুরু করলো। আর এই দেখে ভীত হয়ে হনুমানের পিতা কেশরি উপস্থিত হলেন সেখানে।এবং সেখানে এসে তিনি মাছিন্দারনাথের কাছে ক্ষমা চাইলেন হনুমানের হয়ে। মাছিন্দারনাথ হনুমানের পিতা কেশরির এই প্রার্থনা শুনে হনুমানকে ক্ষমা করেন। তারপর হনুমান তাঁর সমস্ত শক্তি ফিরে পান এবং মাটিতে পা রেখে হাত জোড় করে তিনি মাছিন্দারনাথকে বলেন যে সে জানতেন যে তিনি নারায়ণের অবতার। তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর শক্তির পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এই সব করেছিলেন।আর এই অপরাধের জন্য সে তাঁর কাছে ক্ষমা চান। হনুমানের এই কথা মাছিন্দারনাথ শুনে তাঁকে ক্ষমা করে দেন। আর এরপর তাদের দুজনের মধ্যে শেষ হল সেই প্রবল যুদ্ধ।