অফবিট

দীর্ঘদিনের বন্ধু আমেরিকা হঠাৎ ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কেন কমিয়ে দিয়েছে? সত্যি কি পুতিনের কোনও হাত রয়েছে?

কোনও দেশ যখন যুদ্ধে অবতীর্ন হয় তখন সেই দেশটির সাধারনত অনেক মিত্রদেশ থাকে যারা তাকে সমর্থন করে। কিন্তু যুদ্ধের মাঝে যদি মিত্র দেশগুলোর সমর্থন কোনওকারনে সেই দেশটি হারিয়ে ফেলে তাহলে আন্তর্জাতিক স্তরে সেই দোশটি যথেষ্ট সমস্যায় পড়ে যায়৷ বর্তমানে ঠিক সেই অবস্থাটাই হয়েছে ইসরায়েলের সাথে। হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুকে সমর্থন করছে না তার নিজের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভা, আইডিএফ বা ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স পর্যন্ত তাদের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করছেনা। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বন্ধুদেশ বলা হয় আমেরিকাকে। ইসরায়েল গঠনের সময় থেকেই আমেরিকা ইসরায়েলকে পূর্ন সহায়তা করছে। এজন্য অনেকে ইসরায়েলকে আমেরিকার অঘোষিত প্রদেশও বলে। গত অক্টোবর মাস থেকে চলা হামাস ইসরায়েল যুদ্ধে প্রথম থেকেই আমেরিকা ইসরায়েলকে সহায়তা করে আসছে। কিন্তু এবার সেই আমেরিকাই ইসরায়েলকে কীছুটা সমর্থন করা বন্ধ করে দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আজ দেশের রাজনীতিতে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে খানিকটা একঘরে হয়ে গেছে। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে যুদ্ধবিরতি ঘোষনা ছাড়া তেমন করবার কিছুই নেই। 

বিশ্বরাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি খুবই তাৎপর্যপূর্ন। একদিকে যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তখন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধবিরতি চাইছে। ভ্লাদিমির পুতিন বর্তমানে এশিয়া সফরে বেরিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সাথে সামরিক চুক্তি সাক্ষরের পর পুতিন ভিয়েতনাম গেছে। অর্থাৎ পুতিন প্রাক্তন সোভিয়েত ঘনিষ্ঠ কমিউনিস্ট দেশগুলোতে একে একে সফর করছে রাশিয়ার সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করার জন্য। আবার একইসময়ে আমেরিকাকে চাপে রাখার জন্য রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন বহর প্রথমে কিউবা এবং পরে সেখান থেকে ভেনিজুয়েলা গেছে। আমেরিকার যুদ্ধ পদ্ধতি যদি লক্ষ্য করা যায় দেখা যাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরিয়ান যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ইরাক, আফগানিস্তান যুদ্ধ কোনও যুদ্ধই আমেরিকার ভূখন্ড বা তার আশেপাশে হয়নি, আমেরিকা থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে এসব যুদ্ধ হয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিন ঠিক এটাই চাইছে, পুতিন চাইছে মধ্যপ্রাচ্যে, দক্ষিন চীন সাগরে যেখানেই যুদ্ধ হোকনা কেন তা যেন রাশিয়া থেকে দূরে হয়। পুতিন রাশিয়া থেকে পশ্চিমা দেশগুলোকে দূরে রাখতে চাইছে কারন অন্যকোথাও যুদ্ধ হলে পশ্চিমা দেশগুলো বিভক্ত থাকবে। ঠিক এইজন্যই ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছে রাশিয়া ইউক্রেনের যতটা জায়গা দখল করেছে ততটা রেখেই যুদ্ধবিরতি হোক। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর কথায় ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে না করে দিয়েছে। এই মূহুর্তে ইউরোপ বিভিন্ন রাজনৈতিক কারনে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় সংসদের নির্বাচনে ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব দেখা গেছে। সুতরাং এই সুযোগে এবং হামাস যুদ্ধের কারনে পুতিন চাইছে যুদ্ধবিরতি করতে কিন্তু আমেরিকা রাজি হয়নি। আমেরিকা ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে যাতে ইসরায়েল হামাসের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে দেয় তাহলে আমেরিকা রাশিয়ার দিকে পূর্ন মনোনিবেশ করতে পারবে। এজন্য গত একমাস ধরে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ইসরায়েলকে প্রিসিশন মিসাইল, ২০০০ কেজি বোম্ব সরবরাহ এবং অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। জো বাইডেনের এমন সিদ্ধান্তের প্রধান কারন সামনেই আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। জো বাইডেনের রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটাররা সাধারনত যুদ্ধের বিপক্ষে। আবার আমেরিকাতে ইহুদি লবিও শক্তিশালী। সেজন্য জো বাইডেন চাইছে নয়মাস যুদ্ধ হয়ে গেছে, ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে তার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে, এবার যুদ্ধবিরতি ঘোষনা হোক। জো বাইডেন জানে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি করলে আগামী নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সে সুবিধা পাবে। কিন্তু বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধবিরতি করতে চাইছেনা। নেতানিয়াহু দল জোট রাজনীতির মাধ্যমে সরকার গঠন করেছে এখন সেই জোটই ভেঙে যাবার উপক্রম হয়েছে। মোসাদ, আইডিএফ পর্যন্ত নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু বলেছিলো হামাসকে পূর্নভাবে শেষ করে দেওয়া হবে। কিন্তু নয়মাস যুদ্ধের পরও হামাস সম্পূর্ন রূপে শেষ হয়নি। উপরন্তু গাজাতে হাজার হাজার সাধারন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এরই মধ্যে, কোথাও কোথাও সংখ্যাটা ৫০,০০০ বলা হচ্ছে। আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নরওয়ে, আর্মেনিয়া সহ বেশ কীছু দেশ প্যালেস্টাইনকে আলাদা দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধপরাধী ঘোষনার দাবীও উঠছে আন্তর্জাতিক স্তরে। কিন্তু তাও নেতানিয়াহু পূর্ন যুদ্ধবিরতি করতে চাইছেনা নেতানিয়াহু জানিয়েছে মানবিক সহায়তার জন্য যুদ্ধবিরতি যদি হয় তবে তা অস্থায়ী হবে, হামাস পূর্নভাবে ধ্বংস না হওয়া অবধি যুদ্ধ থামবেনা। কাতার, মিশর, চীন সহ বেশ কীছু দেশ ইসরায়েল ও হামাস দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করেছিলো কিন্তু কোনও লাভ নেই। 

জো বাইডেন যুদ্ধবিরতির চুক্তির কথা জনসমক্ষে ঘোষনাও করে দিয়েছিল কিন্তু তবু যুদ্ধ থামেনি। উপরন্তু বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জনসমক্ষে ঘোষনা করেছে আমেরিকা তাদেরকে ততটা সমর্থন করছেনা। এই ঘোষনার কারনে আমেরিকাতে থাকা শক্তিশালী ইহুদি লবি জো বাইডেনের থেকে দূর সরে গিয়ে বাইডেনের বিরোধী রিপাবলিক দলকে সমর্থন করবে। এই জন্য আমেরিকাতে ডেমোক্রেটরা নেতানিয়াহুর সমালোচনা করছে। আইডিএফ নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে জানিয়েছে হামাসকে পূর্নভাবে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। কারন হামাস শুধু একটি সংগঠন নয় হামাস একটি চিন্তাধারা। হামাসের সব সদস্যকে শেষ করে দেওয়া হলেও আবারও হামাস তৈরি হবে। তাছাড়া হামাসের শীর্ষ নেতারা বর্তমানে কাতার পালিয়ে গেছে, সুতরাং যুদ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করা প্রয়োজন। তাছাড়া সৌদি আরবের নেতা মহম্মদ বিন সালমান পর্যন্ত প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা দাবী করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *