অফবিট

বহু প্রাচীন মন্দির ভেঙে তৈরি করা হচ্ছে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স

হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের পাশাপাশি অত্যাচারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি ভগবানও। ভেঙে দেওয়া হয়েছিল বহু হিন্দু মন্দির। আরো একবার সেই ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ইতিহাস। ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দির ভেঙে তৈরি করা হয়েছে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স। ঘটনাটি ঘটেছে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের যা পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে অবস্থিত। রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে এই ঘটনাটি। 

এই এলাকার মন্দিরটি ১৯৪৭ সালের পর থেকে বন্ধ পড়ে রয়েছে বলে খবর। দেশভাগের পর এই এলাকার সকল হিন্দুরাই চলে এসেছিলেন ভারতে। যার ফলে সেই থেকেই সেখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নিত্য পুজার্চনা। এই কারণেই  প্রশাসন মন্দিরটি ভেঙে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

মূল লেন্ডি কোটাল বাজারের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মূল এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি “খাইবার মন্দির” নামে পরিচিত ছিল। বছরের পর বছর ধরে সঠিক পরিচর্যার অভাবে মন্দিরটির ইট  ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে খসে পড়ছিল বলেও জানা গিয়েছে। যার ফলে ওই ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরটি আর না রেখে, সেটি ভেঙে বেশ কিছুদিন আগে শুরু হয়েছিল ওই ধ্বংসস্তূপের উপর নতুন কমপ্লেক্সের গাঁথনি এমনটিই জানা গিয়েছিল। 

যদিও এই মন্দিরটি ভাঙার প্রসঙ্গে সেভাবে কোন মন্তব্য করতে চাননি ওখানকার প্রশাসনিক আধিকারিকরা। এমনকি খাইবার নামে এই হিন্দু মন্দিরটির যে অস্তিত্ব ছিল সেটিও অস্বীকার করেছেন বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে কর্মকর্তারা। আবার অনেকে বলেছেন যে, নিয়ম মেনেই শুরু হয়েছে নির্মাণ কার্য। 

ইব্রাহিম শিনওয়ারি নামের  লান্ডি কোটাল এলাকার এই পাক সাংবাদিক বলেছিলেন যে, ‘এই খাইবার মন্দির ছিল  লান্ডি কোটাল বাজারের মধ্যমণি।  ১৯৪৭ সাল অর্থাৎ দেশভাগের পর কখনো আর খোলা হয়নি এই মন্দিরের দরজা। সেই থেকে পরিত্যক্ত মন্দির হিসাবে পড়েছিল এই মন্দির কারণ সেখানে বসবাস করা হিন্দুরা সকলে তাদের ঠিকানা বদলে নতুন ঠিকানা অর্থাৎ ভারতে চলে গিয়েছিলেন। আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছিল মন্দিরটি। এরপর ১৯৯২ সালে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর কিছু আলেম ও সেমিনারিয়ানরা এই খাইবার মন্দির নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন। এই সাংবাদিক জানিয়েছিলেন যে তিনি তার বাল্য বয়সে এই বিষয়গুলির সাক্ষী ছিলেন। তার কথায়, ‘তিনি এই মন্দির সম্পর্কে প্রচুর গল্প তাঁর বাপ-ঠাকুরদার কাছ থেকে শুনেছিলেন’। তাই লেন্ডি কোটালে ‘খাইবার মন্দির’ নামে যে একটি মন্দির ছিল, সেই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিখ্যাত এই মন্দিরটির সম্পর্কে সকলেই জানেন।

পাকিস্তানের হিন্দু মন্দির  ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে হারুন সরবদিয়ালের বক্তব্য ছিল যে জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের  দায়িত্ব ছিল যে যাঁরা মুসলিম নন, তাঁদের ধর্মীয় গুরুত্বের দিকে লক্ষ্য করে এই ঐতিহাসিক ভবনগুলির সুরক্ষা এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। তাঁর দাবি যে, প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগ, পুলিশ, সংস্কৃতি বিভাগ এবং স্থানীয় সরকারের ২০১৬ সালের পুরাকীর্তি আইন অনুযায়ী উপাসনালয় সহ এই ধরনের স্থানগুলিকে সংরক্ষণ করার কথা ছিল। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, যে ‘অ-মুসলিমদের উপাসনালয়গুলি, যেগুলি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, সরকারের উচিত সেগুলির সংস্কার করে কোনও সামাজিক কাজে ব্যবহার করা। ধ্বংস করে দেওয়া উচিৎ নয়।’

পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, লান্ডি কোটালের অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার মহম্মদ ইরশাদ এই গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর তিনি মন্দিরটি ভেঙে ফেলার বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে,’লান্ডি কোটাল বাজারের সম্পূর্ণ জমি সরকারের। সরকারি নথিতে এখানে কোনও মন্দির ছিল বলে উল্লেখ করা নেই। তিনি মন্দিরের জায়গায় নির্মাণ কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নন।এই প্রসঙ্গে তিনি আর বলেছিলেন যে, সরকারের তরফ থেকে লেন্ডি কোটাল বাজারে কিছু পুরনো দোকান সংস্কার ও মেরামতের জন্য  নো অবজেকশন সার্টিফিকেট  দেওয়া হয়েছিল নির্মাতাকে। এরপর উপজাতীয় জেলার সমস্ত বাণিজ্য কেন্দ্রে বাণিজ্যিক ভবন বা দোকান তৈরি করার এই অনুমতি দিয়েছিল পৌর কর্তৃপক্ষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *