অফবিট

হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করা সায়নী ঘোষ! নাকী ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়! কাকে ভোট দেবে যাদবপুর বাসী?

ইতিমধ্যেই দেশব্যাপী পঞ্চম দফার ভোট অধিগ্রহন সম্পূর্ন হয়ে গেছে। গত ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সাধারন নির্বাচনের আর মাত্র দুই দফার ভোট বাকী আছে। শেষ মুহুর্তের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব রাজনৈতিক দলই রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের দিকে বিশেষ নজর রয়েছে দেশের রাজনৈতিক মহলের। ঐতিহাসিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কখনও ক্ষমতায় আসতে পারনি। মূলত বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও তৃনমূল কংগ্রেসেরই প্রাধান্য রয়েছে এখানে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু ২০১৯ সালে চিত্রটা বদলে যায়। ঐ বছর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮ টি তেই বিজেপি প্রার্থী জয়ী হয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে উঠে আসে। তারপর থেকে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তার সংগঠন মজবুত করেছে অনেকটাই। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ৩৫টি আসনে জয়ের লক্ষ্য নিয়েছে। এর জন্য পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনে বেছে বেছে শিক্ষিত, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি যুক্ত দক্ষ প্রার্থী নির্বাচন করেছে বিজেপি। এমনই একজন বিজেপি প্রার্থী হলেন ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় যাকে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মনোনীত করেছে বিজেপি। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র রাজ্য রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। বামদের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচত যাদবপুরে বিগত তিন লোকসভা নির্বাচনে তৃনমূল কংগ্রেসই জয়লাভ করেছে কিন্তু এবারে যাদবপুরের হিসাব একটু জটিল। লাগামছাড়া দূর্নীতি এবং বিজেপি প্রার্থী ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের দক্ষ নেতৃত্বের কারনে যাদবপুরের শাসকদল যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে, এমনটাই জনমত। আগামী ১জুন সপ্তম দফায় যাদবপুর কেন্দ্রে ভোট গ্রহনকে কেন্দ্র করে শাসকদল তৃনমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে জমজমাট নির্বাচনী লড়াই হতে চলেছে।

দক্ষিন ২৪ পরগনার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র ভাঙড়, বারুইপুর পূর্ব, বারুইপুর পশ্চিম, যাদবপুর, সোনারপুর উত্তর, সোনারপুর দক্ষিন এবং টালিগঞ্জ এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত। তবে ভারত স্বাধীনতা হওয়ার পর এই আসনের নাম যাদবপুর ছিলনা তখন এই কেন্দ্রের নাম ছিল কলকাতা দক্ষিন পূর্ব। ১৯৫২ সালে কংগ্রেস প্রার্থী অসীম কৃষ্ণ দত্ত এবং তারপর নির্দল প্রার্থী বীরেন রায় এখানের সাংসদ ছিলেন। বীরেন রায়ের সময় থেকে অর্থাৎ ১৯৬০ এর দশক থেকে যাদবপুরে বামেরা শক্তিশালী হতে থাকে। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত টানা ২৪ বছর ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত ও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যাদবপুর বামেদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি ছিল। এর মধ্যে ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রের নতুন নাম হয় আলিপুর। ১৯৭৭ সালে পুনরায় নাম পরিবর্তন হয়ে যাদবপুর হয়। কিন্তু বামেদের এই অক্ষত দূর্গে ১৯৮৪ সালে প্রতাপশালী বামপন্থী নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরবর্তী কয়েকটি লোকসভা নির্বাচনে কখনও সিপিআইএম, কখনও কংগ্রেস আবার কখনও তৃনমূল কংগ্রেস জয়লাভ করে এই কেন্দ্রে। 

২০০৯ সাল থেকে একটানা তিনটি লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুরে তৃনমূল কংগ্রেসই জিতে আসছে। কিন্তু এবারে যাদবপুর কেন্দ্রে উলটপূরণ হতে পারে যার নেপথ্যে শাসকদল প্রার্থী সায়নী ঘোষ এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। অতীতে একাধিক কর্মকান্ডের জন্য সায়নী ঘোষ বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুরে জয়লাভ করেছিল তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী কিন্তু এবার সায়নী ঘোষকে যাদবপুরে প্রার্থী করেছে তৃনমূল কংগ্রেস। এরপরেই সায়নী ঘোষের পুরেনো একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ট্যুইটারে সায়নী ঘোষ একটি পোস্ট করে যাতে দেখা যায় শিবরাত্রি উপলক্ষে শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরাচ্ছে বুলাদি। প্রসঙ্গত এডসের বিপক্ষে সামাজিক সচেতনতার জন্য বুলাদি চরিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল। এমন জঘন্য কর্মকান্ডের জন্য সেসময় যথেষ্ট সমালোচনার শিকার হয় অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। চাপের মুখে সেসময় অভিনেত্রী জানিয়েছিল তার ট্যুইটার হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। সেই সায়নী ঘোষকেই যাদবপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করায় রীতিমতো সমালোচনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া ও ভগবান মহাদেবের অপমানের জন্য হিন্দু ধর্মের বড় অংশ সায়নী ঘোষের বিপক্ষে চলে গেছে। সায়নী ঘোষের মতো নকল হিন্দুকে যাদবপুরবাসীর ভোট দেওয়া কি উচিৎ? প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল। যাদবপুরে নির্বাচনী প্রচারের জন্য সোনারপুর উত্তরে একটি শিবলিঙ্গে পুজো করে সায়নী ঘোষ, এরপরে একটি বড় অংশের সাধারন মানুষের সমালোচনার শিকার হয় তৃনমূল প্রার্থী। কেউ কেউতো বলেন হিন্দু ধর্মের অপমানকারী, ভগবান শিবের অপমানকারী এরকম মানুষকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া উচিৎ নয়। লোক দেখানো সহানুভূতিরও অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। বিজেপি প্রার্থী ডঃ অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ও কড়া সমালোচনা করে জানায় প্রচারের জন্য সায়নী ঘোষ শিবলিঙ্গ ব্যবহার করছে, সনাতনীরা সব বোঝে, এসবই ভোটের রাজনীতি। তবে সায়নী ঘোষের এটাই প্রথম নির্বাচন নয়, এর আগে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল দক্ষিনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি কিন্ত সেখানে হেরে যান তিনি। এবার দল তার উপর আবার আস্থা রেখে যাদবপুরে প্রার্থী করেছে। সায়নী ঘোষের উপর শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে কারাবন্দী তৃনমূল নেতা কুন্তল ঘোষের সাথে সায়নী ঘোষের যথেষ্ট যোগাযোগ ছিল যার জন্য ইডি তাকে দীর্ঘক্ষন জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। এসব ঘটনার মাঝে সায়নী ঘোষের হলফনামা ঘিরেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ২০২১ সালে নির্বাচনের আগে তার দেওয়া আয়ের হিসাব এবং চলতি লোকসভা নির্বাচনে হলফনামাতে দেওয়া আয়ের হিসেবে পার্থক্য রয়েছে।

২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় সায়নী ঘোষ জানান ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে তার মোট উপার্জন ৫ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৩ টাকা কিন্তু এবার নির্বাচনের আগে সায়নী ঘোষ জানিয়েছেন তার ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে তার মোট উপার্জন ছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬০ টাকা। একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষেও তার মোট আয়ের পরিমান নিয়ে সায়নী ঘোষ দুইবার দুইরকম তথ্য দিয়েছেন একবার বলেছেন ৪ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৮ টাকা এবং আর একবার বলেছেন ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৩০ টাকা। দুইবার নির্বাচনে এরকম পরস্পর বিপরীত তথ্যের জন্য স্বাভাবিক ভাবেই প্রার্থীর সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *