অফবিট

কাঁচা লঙ্কা বেটে নাকি চিবিয়ে খাবেন! কোন লঙ্কা খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর জানা আছে!

ঝাল ফুচকা, ঝালমুড়ি থেকে মাছের ঝাল কিংবা চিলি চিকেন থেকে মটন কষা, এগুলি নানা রকম লঙ্কার মিশেলেই সুস্বাদু হয়। ঝাল না হলে খেয়ে তৃপ্তি আছে না কি! কিন্তু ঝাল খাওয়ার এই প্রবণতা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সেটা কি খাওয়ার আগে কেউ ভাবে? 

সেই সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন রুবি জেনারেল হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. সুনীলবরন দাস চক্রবর্তী। 

হাতে বা মুখে লঙ্কা লাগলে তো জ্বালা করে কিন্তু সেই লঙ্কায় পেতে গেলে তার কি কোনো ক্ষতিকর দিক আছে? 

হ্যাঁ, ক্ষতি তো বটেই। বেশি ঝাল খাবার বা লঙ্কার ঝাল নিত্য খাদ্যনালির মধ্যে দিয়ে যেতে থাকলে অতিরিক্ত ঝালে খাদ্যনালিরও ক্ষতি হয়। বিশেষত যাঁদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাঁরা বেশি লঙ্কা খেলে পাকস্থলীতে একটা জ্বালাভাব শুরু হয় এবং বেশি পরিমাণে গ্যাসট্রিক অ্যাসিড তৈরি হয়।

হজমের গোলমাল, তার উপর ঝাল খেলে গলা, বুক ও পেট জ্বালা করে ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত লঙ্কার ঝাল ডায়েরিয়াও সৃষ্টি করে। যাঁদের বারংবার মলত্যাগ করার সমস্যা আছে তাদেরও বেশি লঙ্কা খাওয়া অনুচিত। একদম চোখ-মুখ লাল করা ঝাল খাবার বা লঙ্কার ঝাল পেটে আলসারের ঝুঁকিও ডেকে আনে। কাঁচালঙ্কাও বেশি খেলে ক্ষতি।

খুব ছোটরা বা বয়স্করা যদি বেশি ঝাল খান তাহলে কি ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি?

এটা যে কোনও বয়সের জন্যই ক্ষতিকারক। তবে বাচ্চাদের ঝাল না খাওয়ানোই ভালো। বয়স্কদেরও এটা মেনে চললে ভালো। কারণ, বয়স্কদের খাদ্যনালির স্ফিঙ্কটার বা গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল স্ফিংকটার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হতে থাকে। তার উপর বেশি ঝাল খেলে গলা বুক জ্বালা, পেট জ্বালা ও বদহজমের সমস্যা বাড়তে পারে।

গুড়ো লঙ্কা বা শুকনো লঙ্কার ঝালের থেকে কাঁচা লঙ্কার ঝাল কি স্বাস্থ্যসম্মত? 

বেশি ঝাল, সে যে প্রকার লঙ্কারই ঝাল হোক না কেন, তা মোটেই ভাল নয় শরীরের জন্য। তবে অল্প ঝাল খেতে হলে কাঁচালঙ্কাই সে ক্ষেত্রে ভালো। 

কারণ কাঁচা ও টাটকা সবুজ লঙ্কায় ভিটামিন ই ও সি থাকে। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটা ক্যারোটিন ত্বক ও চোখের জন্য খুব উপকারী। উপরোক্ত সমস্ত খাদ্য উপাদান আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম ও ইমিউনিটিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

এই কাঁচালঙ্কাকে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করলে তার থেকে জল বেরিয়ে যায় ও বেশ কিছু গুণাগুণ বিশেষ করে বিটা ক্যারোটিন কমে যায়। লাল লঙ্কা বা শুকনো লঙ্কায় ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কম থাকে। লাল লঙ্কার গুঁড়োকে দেখতে ভালো করার জন্য নানা কেমিক্যাল, ভেজাল ব্যবহার করা হয়, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। কাঁচালঙ্কা , শুকনো লঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি ভালো। বেশি মশলা বা লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে রান্না করা খাবারের খাদ্যগুণ অনেকাংশে  কমে যায়। 

কাঁচালঙ্কা ভালো সে তো বুঝলাম। কিন্তু রান্নায় কাঁচা লঙ্কা বাটা সেটা ভালো নাকি চিবিয়ে কাঁচা লঙ্কা খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর? 

কাঁচালঙ্কা তরকারিতে দিয়ে বা কোনওভাবে ভেজে খাওয়ার পরিবর্তে চিবিয়ে খেলে গুণাগুণ অপরিবর্তিত থাকে। সাধারণত কোনও সবজিকে রান্না করলেই তার গুণ নষ্ট হয়। সুতরাং অল্পবয়সি থেকে বয়স্ক সবাই নিজের চাহিদা, ঝাল সহ্য করার ক্ষমতা অনুযায়ী লঙ্কা খেতে পারেন। তবে উপকারী ভেবে যথেচ্ছ  পরিমাণে কাঁচালঙ্কার ঝাল খাবেন, সেটা কিন্তু নয়।

অতিরিক্ত ঝাল পেটের সমস্যা ছাড়া আর কী কী খারাপ করে শরীরের?

মাত্রাতিরিক্ত ঝাল খেলে চোখ, নাক দিয়ে জল পড়া, গরম বা জ্বালাভাব তৈরি হয় শরীরে যা কষ্টদায়ক। রাতে ঘুমানোর আগে খাবারের সঙ্গে বেশি ঝাল লঙ্কা খেলে গলা পেটে গরমভাব বা জ্বালা উৎপন্ন হয়ে একটা অস্বস্তিবোধ থেকে ইনসমনিয়া বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। লঙ্কার ঝাল কারও ত্বকের সংস্পর্শে এলে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। সহ্য করতে পারেন বলে বেশি ঝাল খাবেন তা একেবারেই নয়।

প্রচন্ড পরিমাণে ঝাল খেয়ে ফেললে এবং তার অনুভূতি সৃষ্টি হলে তার হাত থেকে কি করে বাঁচবেন? 

সাধারণত প্রচণ্ড ঝাল অনুভূত হলে আমরা প্রচুর জল খেয়ে শান্তি পেতে চাই। যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ঝাল থেকে বাঁচতে দুধ, পাউরুটি ও ভাত খাওয়া ভালো।

গর্ভাবস্থায় খাবারে ঝালের পরিমাণ কতটা হওয়া উচিত?

একটি মেয়ে ছোট থেকে বাড়িতে যতটা ঝাল খায় সে গর্ভাবস্থায় সমান ঝাল খেতে পারে। কিন্তু এই সময় প্রয়োজনের বেশি ঝাল খেলে প্রথম তিনমাস যাদের খুব বমি হয় তাদের বমিভাব আরও বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং তখন ঝালকে এড়িয়ে চলা শ্রেয়। 

পরবর্তী ৬-৯ মাসের গর্ভাবস্থায় হরমোনাল ভারসাম্যহীনতার কারণে নিম্ন খাদ্যনালির স্ফিঙ্কটার বা গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল স্ফিংকটার রিল্যাক্স থাকে। সেই সময় ঝাল খেলে বুকজ্বালা অম্বলের সমস্যা বাড়ে। ঝালের কারণে মায়ের বমি বা হজমের সমস্যা বাড়লে ভ্রূণের বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *