অফবিট

পতিতাদের চুল স্বর্ণকেশী রঙ করা বাধ্যতামূলক ছিল। প্রাচীন রোমের অবাক করা আইন

প্রাচীন রোম চিকিৎসার পদ্ধতি, অত্যাধুনিক জিনিসপত্র আবিষ্কার করা থেকে শুরু করে তাদের কাছে নদীর গভীরতা মাপার মতো জিনিস ছিল এবং প্রাচীন রোমেই প্রথম মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এছাড়াও রাজনীতি জগতেও রোমান সাম্রাজ্যের প্রভাব দেখা যায় অর্থাৎ বলা হয় যে প্রাচীন রোমের প্রজাতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতি দাড়িয়ে থাকত। তবে সেখানে এমন কিছু আইন ও রীতিনীতি প্রচলিত ছিল যা ছিল সত্যিই খুব অদ্ভুত এবং বর্তমানের আধুনিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যথেষ্ট আলাদা।

প্রাচীন রোমে প্রচলিত এই রকম ৬টি আশ্চর্যজনক আইন হল – 

বেগুনি রঙের পোশাক পরিধান করা একটি অপরাধ ছিল

অভিজাত শ্রেণীর মানুষ এবং সাধারণ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ করার এই প্রথাটা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। আর এই প্রথার বাইরে ছিল না প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যও। সেই সমাজেও প্রচলিত ছিল এই প্রথাটি। এই প্রথাটাকে আরও শক্তিশালী বানানোর জন্য তারা তাদের পোশাক বাছার ক্ষেত্রে বাঁধ সাধে সেখানকার আইন। সেখানকার আইন অনুযায়ী, সাধারণ মানুষের বেগুনি রং পরা নিষেধ ছিল। বেগুনি রঙের পোশাক সংরক্ষিত ছিল শুধুমাত্র অভিজাত শ্রেণীদের জন্য। এখানকার সাধারণ মানুষদের পোশাক বা কিছু উপকরণ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র প্রাপ্ত করা থেকে বিরত রাখার জন্য পাশ করানো হয়েছিল ব্যায়নিয়ন্ত্রণ আইন। অন্যদিকে বেগুনি পোশাকের ক্ষেত্রে, যে সমস্ত রঞ্জকগুলির প্রয়োজনীয় হতো সেগুলি উৎপাদন করা ছিল অবিশ্বাস্যভাবে ব্যয়বহুল। এই জন্য  সবচেয়ে ধনী এবং অভিজাত শ্রেণীর মানুষদের জন্য সংরক্ষিত ছিল বেগুনি রঙের পোশাক।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মহিলাদের কাঁদতে অনুমতি দেওয়া হতো না

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পেশাদার শোককারীদের ব্যবহার করা হত এই  প্রথাটির কথা তো আমরা সবাই শুনেছি যার চল বর্তমানে রাজস্থানের কিছু কিছু জায়গায় এখনও রয়েছে। তবে ভাবুন তো যদি এই প্রথাটির ঠিক উল্টো কাজটা করা হয়, অর্থাৎ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় মহিলারা কাঁদতে পারবে না। কি শুনে অদ্ভুত লাগলো তো ? তাহলে বলে রাখি যে এইরকমই একটি প্রথার প্রচলন ছিল প্রাচীন রোমে। আইনতভাবে সেখানকার মহিলাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় কাঁদার অনুমতি ছিল না। তবে কেন এইরকম নিয়মের প্রচলন ছিল প্রাচীন রোমে?

মনে করা হত যে একজন ব্যক্তির মৃত্যুতে যখন বেশি লোক শোক প্রকাশ করে, তখন সেই ব্যক্তিটি আরও জনপ্রিয় এবং আরও মর্যাদা পেত তাদের প্রতিবেশী এবং বন্ধুবান্ধবদের প্রভাবিত করার জন্য, ধনী পরিবারগুলি তাদের মৃত সদস্যকে সম্মান জানানোর জন্য প্রচুর শোকার্তদের (ভাড়াটে) নিয়োগ করতো।

এই প্রথাটি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল প্রাচীন রোমে, যার কারণে তারা মহিলাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় কান্না করার থেকে বিরত রাখার জন্য একটি আইন পাশ করেছিল। আইনটি পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য ছিল না কারণ পুরুষদের জনসাধারণের মধ্যে কাঁদা মানে সেটি তাদের ক্ষেত্রে একটি সর্বজনীন অসম্মান হিসাবে মনে করা হত।

পতিতাদের চুল স্বর্ণকেশী রঙ করা বাধ্যতামূলক ছিল

প্রাচীন রোমানরা মনে করতেন যে সমাজে মহিলাদের চুলের রঙ কালো হবে। তবে প্রাকৃতিক ও বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণের কারণে স্বর্ণকেশী চুলের অধিকারী হতো অনেকেই। কিন্তু এই বিষয়টির মান্যতা দিত না রোম সমাজ। কারণ তারা মনে করত যে কখনও কোনো রোমান নারীর কেশ স্বর্ণ রঙের থাকতে পারে না। 

রোমান নারীদের মধ্যে যাতে স্বর্ণকেশী চুলের অধিকারী হওয়ার ইচ্ছে না জন্মায় তার জন্য জোড় করে রোমের যৌনকর্মীদের চুলের রঙ স্বর্ণ করানো হতো। যার ফলে এই সমাজে এইরকম ধারণার জন্ম হয় যে যার সোনালী রঙের চুল সে পতিতা ও নিকৃষ্ট নারী। এইভাবে রোমান নারী এবং রোমের যৌনকর্মীদের মধ্যে একটা ভেদাভেদ সৃষ্টি করা হয়েছিল । 

বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তিদের দাফন করার অনুমতি দেওয়া হতো না

রোমানরা ছিল খুব কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তবে এই বিষয়টিকে অনেকে মান্যতা দেবে আবার অনেকে মান্যতা দেবে না। তবে এটা সম্পূর্ন আলাদা একটা বিষয়।

এখানকার মানুষেরা বিশ্বাস করে যে বজ্রপাত হল সৃষ্টিকর্তার একটি কাজ।  আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে চাইলে বলা হয় যে এটি দেবতা বৃহস্পতির একটি কাজ।  

তাই যদি কোনো ব্যক্তি বজ্রপাতের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলে মনে করা হয় যে ওই ব্যক্তিকে বৃহস্পতি দেবতা নিশ্চয়ই ঘৃণা করতো।

আবার বজ্রপাতে মৃত সেই ব্যাক্তিকে যদি কেউ দাফন করে তাহলে তারা সেটিকে দেবতা বৃহস্পতি থেকে একটি বালি চুরি হিসাবে দেখত, আর এই কাজ করার জন্য সেই ব্যাক্তিকে বৃহস্পতির জন্য বলিদান করা হত।

পিতারা অস্থায়ীভাবে তাদের বাচ্চাদের দাসত্বের জন্য বিক্রি করতে পারতো

রোমান সমাজে পিতাকে পরিবারের ‘প্যাটারফ্যামিলিয়াস’ হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হত অর্থাৎ একটি পরিবারের উপর তার পিতার ক্ষমতা ছিল নিরঙ্কুশ। 

আর এই ক্ষমতার জেরে একজন রোমান পিতা চাইলে তার সন্তানদের অস্থায়ীভাবে দাসত্বের জন্যবিক্রি করে দিতে পারতো ক্রেতার কাছে। ক্রেতারা চুক্তির ভিত্তিতে এই শিশুদের কিনে নিত। এরপর সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতারা তাদের ইচ্ছে মতো এই শিশুদের সাথে যা কিছু করতে পারত।

নারীরা তাদের স্বামীদের আইনি সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছিল

রোমান আইন অনুযায়ী বলা হত যে, যদি কেউ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছুর অধিকারী হন তাহলে সেই অধিকারটি তার আইনি সম্পত্তি হয়ে ওঠে। আইনগত এই নিয়মটি মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল।

যেমনঃ- স্ত্রী।

তবে এই আইনের থেকে বেরিয়ে আসার পথও ছিল রোমান স্ত্রীদের কাছে। যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীর আইনগত অধিকার হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে চায় তাহলে তাকে প্রতি বছর কমপক্ষে তিন দিনের জন্য তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *