অফবিট

নারায়ণের দুই দ্বারপাল জয় এবং বিজয় কেন পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল?

নিউজ ডেস্কঃ বৈকুণ্ঠে নারায়ণের দুই দ্বারপালের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিজয় যিনি এক ব্রাহ্মণ এর কাছ থেকে অভিশপ্ত হয়েছিলেন। অভিশাপ অনুযায়ী তাঁকে তিনবার মর্ত্যলোকে জন্ম করতে হবে এবং তাঁকে সেই অভিশাপ্ত থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভগবান বিষ্ণু। সেই অনুসারে তৃতীয়বার জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিজয়। কিন্তু তৃতীয় বা শেষ জন্মে কি রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নারায়নের এই দ্বারপাল? কে ছিলেন এবং কিভাবেই বা মুক্তি লাভ করেছিলেন তাঁর এই জন্ম থেকে?       

চেদী রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থিত করূষ রাজ্যের রাজা বৃদ্ধশর্মা এবং বসুদেব ও কুন্তীর ভগিনী শ্রুতদেবার পুত্র ছিলেন দন্তবক্র৷  করূষ রাজ্যের রাজবংশের সন্তান হওয়ার জন্য বাকা কৌরূষ্য  নামেও পরিচিত ছিলেন  দন্তবক্র। তার পিতা মাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন  দন্তবক্র। বাকিরা ছিলেন, নীল, বহন্ত, বসুদন এবং বিদুরথ৷ জন্মের পর থেকেই তার দাঁতের পাটি বাঁকা থাকার কারনে তার নাম রাখা হয়েছিল “দন্তবক্র”৷

আসলে দন্তবক্র এবং তার মাসতুতো ভাই শিশুপাল পূর্ব জন্মে ছিলেন বৈকুণ্ঠে  নারায়ণের দুই দ্বারপাল জয় এবং বিজয়। যারা একবার তাদের ঔদ্ধত্যের কারনে  এক ব্রাহ্মণ এর কাছ থেকে অভিশপ্ত হতে হয়েছিলেন। তিনি অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তাদের মর্ত্যলােকে তিন জন্ম নাস্তিক আর নিষ্ঠুর হয়ে কাটাতে হবে । প্রচন্ড দেব বিরােধিতা করে অসুর মনােভাব নিয়ে অত্যাচার করে  কাটাতে হবে তাদের  ওই তিনটি জন্মই। তখন তারা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পথ জানতে চান ভগবান বিষ্ণু কাছে। ভগবান বিষ্ণু তখন তাদেরকে বলেন যে তিনি স্বয়ং নিজে মর্তে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আনবেন ।দন্তবক্র  এবং শিশুপালের এটি ছিল মর্ত্যলোকে তৃতীয় ও শেষ জন্ম বলে মনে করা হয়৷ 

হিন্দুদের মহাকাব্য মহাভারত অনুসারে, করূষদেশের রাজপুত্র দন্তবক্র দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভাতে উপস্থিত ছিলেন ৷ তাঁর পিতা বৃদ্ধশর্মা সন্যাস গ্রহণ করলে তিনি রাজসিংহাসনে বসেন৷ সেই সময় পূর্ব ভারতে জরাসন্ধ মগধ অঞ্চল থেকে তাঁর আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন ৷ দন্তবক্র নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং নিজের রাজ্য বাঁচাতে মিত্রতাপত্র পাঠিয়ে ছিলেন জরাসন্ধের কাছে। যা তিনি গ্রহণ করে নিয়েছিলেন৷ এরপরে তাঁর সাথে  রাজকুমারী ভদ্রা ও বিশালার সাথে বিবাহ ঠিক হলে তাদের দুজনকেই অপহরণ করেন চৈদ্য শিশুপাল। যাতে তিনি অত্যন্ত রুষ্ট হয়েছিলেন৷

পদ্মপুরাণের অনুসারে,  দন্তবক্র ছিলেন চৈদ্য রাজকুলেরই সন্তান ৷ তাঁর রাজ্যাভিষেকের পরে তিনি জরাসন্ধ ছাড়াও সন্ধি করেছিলেন কংস, শল্ব ও পুণ্ড্রকের সহিত ৷ 

রাজসূয় যজ্ঞের সময় যুধিষ্ঠির দক্ষিণদেশে সহদেবকে পাঠিয়েছিলেন। সহদেব করূষ রাজ্য দখল করতে অগ্রসর হন৷ এরপর দন্তবক্রের সাথে  যুদ্ধের হয় সহদেব ও তার সৈন্যদলের। ওই যুদ্ধে সহদেব  তাঁকে পরাস্ত করেন এবং বাধ্য করেন ইন্দ্রপ্রস্থতে রাজকর দিতে৷ পরে আবার সহদেব  করূষের চুক্তবদ্ধ রাজা হিসাবে দন্তবক্রকে নিয়োজিত করেছিলেন৷ তবে তিনি তাদের আমন্ত্রন গ্রহন করলেও ইন্দ্রপ্রস্থে রাজসূয় যজ্ঞে উপস্থিত ছিলেন না। কারন  তার মিত্র জরাসন্ধকে পাণ্ডবরা  হত্যা করেছিলেন বলে ৷শল্বরাজার মিত্র  ছিলেন  শিশুপাল৷ যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সভাস্থলেই কৃষ্ণ তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে  শিরোচ্ছেদ করেন  শিশুপালের৷ এতে  কৃৃষ্ণকে আক্রমণ করেন  মিত্রবদ্ধ শল্বরাজ ৷ কিন্তু কৃষ্ণের হাতে শল্ব নিহত হয়৷ কৃষ্ণ তাঁর মিত্র শল্বরাজকে হত্যা করার কারনে তিনি অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে গদা নিয়ে হাজির হন কৃৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা নগরীতে৷ তিনি কৃষ্ণকে বলেন যে তিনি তার ভ্রাতা হলেও তাঁর মিত্রের মৃত্যুর জন্য তাঁকে শাস্তি দিতে এসেছেন দ্বারকায় তিনি৷ এরপর দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণ এবং দন্তবক্রের মধ্যে গদা যুদ্ধে শুরু হয়। দন্তবক্র তার গদা দিয়ে কৃষ্ণর মাথায় আঘাত করলে কৃৃষ্ণের ইশারায় তার কৌমোদকীর ধারালো অংশ দ্বারা দন্তবক্রের হৃদয় বিদারিত করলে তার হৃৎপিণ্ড দ্বিখণ্ডিত হয় এবং মৃত্যু হয় দন্তবক্রের৷ আর এইভাবে  শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা দন্তবক্র মর্ত্যলোকে তাঁর শেষ জন্ম থেকে মুক্তি লাভ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *