অফবিট

স্বামী সন্তান সহ ৪০ জনকে খুন। কেন করেছিলেন এই মহিলা সিরিয়াল কিলার? জানলে অবাক হবেন

সাধারণত নারী মানে এক কোমল ও মমতাময়ী মূর্তি ভেসে ওঠে সবার মনে। কিন্তু বিশ্বে এমন অনেক মহিলা রয়েছে যাদের জীবন কাহিনী শুনলে অবাক হয়ে যাবেন আপনিও। কারণ নরওয়েতে বসবাসকারী এমন এক মহিলার জীবন কাহিনী প্রকাশ্যে এসেছে যিনি স্বামী ও সন্তান সহ মোট ৪০ জনকে খুন করেছেন। সকলকে প্রলোভন দেখিয়ে নিজের ফাঁদে ফেলে খুন করাই ছিল এই নারীর মূল পেশা তথা নেশা। সচরাচর কোন মহিলাদের সিরিয়াল কিলার হিসেবে দেখা প্রায় দুষ্কর। কিন্তু এই মহিলা নিজের জীবনে এতই নৃশংস ও নির্মম ছিল যে তিনি তার নৃশংসতার জন্য লেডি ব্লু বার্ড উপাধি পেয়েছিলেন। তাহলে একটু পরিষ্কার করে নরওয়েতে বসবাসকারী এই সিরিয়াল কিলার মহিলার জীবনী সম্পর্কে একটু বলা যাক। 

নরওয়েতে বসবাসকারী এই সিরিয়াল কিলার মহিলাটির নাম ছিল বেলি গানেস। শৈশবকাল শেষ হতেই নিজের নাম ও যশের খাতিরে মাত্র ২৩ বছর বয়সে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার জীবনে আমল পরিবর্তন না ঘটলেও ম্যাড সোরসান নামের এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। এরপরই আলাপ পরিচিতি বৃদ্ধি পেলে শুরু হয় প্রেম এবং তারপরে ১৮৯৩ সালে হয় বিবাহ। স্বামী স্ত্রী দুইজন মিলে একটা কনফেকশনারি চালাতেন।ক্যারোলিন, এক্সেল, মার্টল আর লুসি নাভে তাদের চার ছেলে মেয়ে ছিলো। জেনি নামের একটা পালিত মেয়েও ছিলো। ভালোই দাম্পত্য জীবন উপভোগ করছিলেন বেলি গানেস। তবে আচমকাই অর্থ পিপাসু হয়ে ওঠে গানেস। এরপরে নিজের দুই সন্তানকে হত্যা করেছিলেন নির্মম মাতা বেলি গানেস। সন্তান হত্যা দিয়ে হাতে খড়ি হয়েছিল গানেসের। এই হত্যার পেছনে মূল কারণ ছিল সন্তানদের নামে করে রাখা লাইফ ইন্সুরেন্সের টাকা হাতানো। ইন্সুরেন্সের টাকা পেয়ে গেলেই আরও টাকার লোভ জেগেছিল গানেসের। 

এরপর স্বামী স্ত্রী মিলে পরিকল্পনা করে একদিন নিজেদের কনফেকশনারি পুড়িয়ে দিলেন। দুজনেই ইন্সুরেন্সের টাকা পাওয়ার স্বপ্ন দেখলেও সেটি পুরোন হয়েছে মাত্র বেলির। কারণ ইন্সুরেন্সের টাকা পাওয়ার পরেই আচমকা অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু হয়েছিল ম্যাড সোরসানের। এই কান্ড ঘটানোর পরপরই তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন ইন্ডিয়ানাতে। সেখানে ৪২ একরের একটা ফার্ম কিনে নেন। যদিও পরে এই পরিচিতি পেয়েছিলো দ্য ডেথ গার্ডেন হিসেবে। এই বাগান বাড়িতেই তিনি তার বেশিরভাগ খুনগুলো করেছিলেন। 

পরবর্তীতে যদিও  প্রথম স্বামী এবং সন্তানদের মৃত্যুর পোস্টমর্টেমে ডাক্তার তাদের শরীরে এক রাসায়নিক পদার্থের  উপস্থিতি লক্ষ্য করেছিলেন কিন্তু সেভাবে ততটা গুরুত্ব দেননি। তবে এই ফার্ম কেনার  অল্পদিনের মধ্যেই তারা একাংশ পুড়িয়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র ইন্সুরেন্সের টাকার লোভে। এরপরই টাকা পাওয়া মাত্রই তার পৈশাচিক খেলা আরো ভয়ংকর রূপ নিতে শুরু করে।  পরবর্তীতে ১৯০২ সালের ১লা এপ্রিল তিনি পিটার গানেসকে বিয়ে করেন। বিয়ে বললে অবশ্য ভুল হবে, এপ্রিল ফুলের দিন তিনি আরো একটা শিকার জোগাড় করেন। দ্বিতীয় বিয়ের কয়েক দিন নাগাদ স্বামীর দুই মেয়ে সহ ওই ফার্মেই বসবাস করতেন তিনি। কিন্তু কয়েক মাস গড়াতেই পিটারের বড় কন্যার আচমকা মৃত্যু ঘটে। তবে এই মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয় সেই ইঙ্গিত পেয়েছিলেন পিটার। যার কারণে তিনি তার ছোট কন্যাকে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে পারলেও নিজের শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। বেলির নির্মম হত্যা লিলার শিকার হতে হয়েছিল তাকে। একদিন বাড়ি ফাঁকার সুযোগ পেয়ে জাতাকল দিয়ে তার দ্বিতীয় স্বামীকে হত্যা করেছিলেন বেলি। যদিও এই মৃত্যু ঘটনা অ্যাক্সিডেন্ট বলেই জানিয়েছিলেন বেলি। কিন্তু এই সব ঘটনা নিজের চোখে দেখেছিল তার দ্বিতীয় স্বামীর ছোট মেয়ে জেনি। অর্থাৎ ১৯০৩ সালে আরও দুজনের খুন করেছিলেন সিরিয়াল কিলার বেলি।  

পরবর্তীতে অবশ্য পোস্ট মর্টেমের সময় আবারও মৃতের শরীরে স্ট্রিকনাইনের সন্ধান পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, প্রথমে বিষ প্রয়োগ করে পরে দুর্ঘটনার ঘটনা সাজানো হয়েছিলো। কিংবা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্যও বিষ প্রয়োগ করা হয়ে থাকতে পারে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এই তথ্য দিলেও বেলির অভাবনীয় নাটক সবার চোখে একটি কালো পর্দা নামিয়ে দিয়েছিলেন।  দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই সেই পূর্বের মতোই বেলি ইনস্যুরেনসের টাকা তুলে নিয়েছিলেন এবং স্বামীর মৃত্যুর ছয় মাস পর তিনি এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। ছেলেটির নাম রাখেন ফিলিপ গানেস। মা হওয়ার পর বেশ কিছুদিন শান্তই ছিলেন বেলি। কিন্তু এই শান্তির মধ্যে একটা নোংরা খেলার ছক বানিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। 

বেলির পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছিল যে তিনি আর কোন বিয়ের ঝামেলায় যাননি। বরং একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে বিয়েতে আগ্রহী পুরুষকে অবশ্যই তার সেভিংসয়ের টাকা নগদ নিয়ে কনে দেখতে কনের “বাড়িতে” আসতে হবে। পৃথিবীতে প্রেমকাতর পুরুষের চেয়ে বোকা বোধ হয় আর কেউ নেই। এই বিজ্ঞাপন দেখে অনেক পুরুষই টাকা নিয়ে বেলির ফার্ম হাউসে যেতেন, কিন্ত আর কখনও ফিরে আসতেন না। লম্বা, দুইশো পাউন্ড ওজনের দানবীয় শরীরের বেলি যেকোনো পুরুষকেই সহজেই ধরাশায়ী করে ফেলতে পারতেন। জন মু, হেনরি গারহোল্ট, ওলফ সেভেনহার্ড, ওল বি বাডসবার্গ, ওলাফ লাইন্ডব্লুম, আন্দ্রে হেগেলিন সবাই ছিলেন সেই শিকারের তালিকায়। আরো অনেক মানুষই বেলির হাতে খুন হয়েছিলেন, যাদের সঠিক পরিচয় জানা যায়নি। 

পরবর্তীকালে, ১৯০৮ সাল নাগাদ বেলির গোটা ফার্ম হাউস আগুনে জ্বলে উঠেছিল। সে বাড়িতে কেউই আর বেঁচে ছিল না।  তবে আশ্চর্যজনক বিষয় যে বেলির কোন মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশাল দেহাকৃতির বেলির বদলে সেই পোড়ো বাড়িতে পাওয়া গিয়েছিল একজন রুগ্ন মানুষের মাথা কাটা দেহ। যদিও পুলিশের বিশ্বাস ছিল যে সেই মৃতদেহটি বেলির নয়। সেই কারণে এই রহস্যের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। গোটা বাড়িতে শুরু হলো চিরুনি তল্লাশি। কিন্তু সেই মৃতদেহের অর্ধেক মাথা খুঁজে না পাওয়া গেলেও পোরো বাড়ির মাটি থেকে উদ্ধার হয়েছে ১২ জনের কঙ্কাল। যারা দীর্ঘদিন ধরে  নিখোঁজ বলে পরিচিত ছিল তাদেরই আবার খোঁজ পেল পুলিশ। কিন্তু বেলির কোন চিহ্নই আর পাওয়া গেল না। 

যদিও ১৯৩১ সালে এস্টার কার্লসন নামের এক মহিলা লস অ্যাঞ্জেলসে বিচারাধীন অবস্থায় মারা যায়। তার বিরুদ্ধে এক লোককে বিষ দিয়ে হত্যার অভিযোগ ছিলো। কার্লসনের চেহারা এবং শারীরিক গঠনের সাথে বেলি গানেসের একটা মিল পাওয়া যায়। তারা প্রায় একই বয়সেরই ছিলেন। আবার কার্লসনের একটা ছবি পাওয়া যায় তার তিনটা সন্তানের সাথে। এটাও বেলি গানেসের সাথে মিলে যায়। তবে এরপরও এটা অনিশ্চিত। এবং নিশ্চিত করে আসলে কিছুই বলা যায় না। অর্থাৎ বর্তমানে বেলি গানেস জীবিত রয়েছেন নাকি মৃত সেই সম্পর্কে এখনো যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে একজন মহিলার এরকম মানসিকতা কি করে আসলো তার খোঁজ করতে বেলির শৈশবের জীবন সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে তদন্তকারীরা। আর সেই তদন্তের মাধ্যমে উঠে এসেছে যে বেলি নিজ দেশে থাকার সময় উনিশ বছর বয়সে প্রেগনেন্ট অবস্থায় বারে নাচতে গিয়েছিলেন। সেখানে একজন বড়লোকের ছেলে তার পেটে লাথি মারেন, এবং এতে তার গর্ভপাত হয়ে গিয়েছিলো। এর কিছুদিন পরেই ঐ বড়লোকপুত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এবং ঐ সময় থেকেই বেলি গানেসের আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। পরবর্তীতে আমেরিকায় এসে তিনি পরিণত হন ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত এবং নিষ্ঠুর সিরিয়াল কিলারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *