বড় হতে না চাওয়ার একটি রোগ। পুরুষরা আক্রান্ত হয় বেশী- দ্বিতীয় খণ্ড
বড় হতে না চাওয়ার একটি রোগ। পুরুষরা আক্রান্ত হয় বেশী- প্রথম খণ্ড
লক্ষণ ও উপসর্গ
দুইটি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত পিটার প্যান সিনড্রোমের সকল লক্ষণ এবং উপসর্গ:
- স্বাভাবিক কর্মজীবন পরিচালনা ও সম্পর্ক রক্ষায় ব্যর্থতা
- যেকোনো দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাওয়ার মানসিকতা
পিটার প্যান সিনড্রোমের বেশী কিছু উপসর্গ থাকে। যদি নিম্নলিখিত উপসর্গগুলোর অধিকাংশই কোনো ব্যক্তির মধ্যে দেখা দেয় তাহলে ভেবে নিতে পারেন যে ওই ব্যক্তি একজন পিটার প্যান। পিটার প্যান সিনড্রোমের প্রধান কিছু উপসর্গগুলি মধ্যে অন্যতম হল-
স্থায়ী ক্যারিয়ার গঠনে ব্যর্থতা
যদি মনে করেন যে পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যদের থেকে দক্ষতার বিচারের দিক থেকে কম। তাহলে ভুল ভাববেন। উল্টে তারা অপেক্ষাকৃত বেশি দক্ষ ও মেধাবীও হতে পারে। তবে সমস্যা হল যে বয়সের সাথে সাথে সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিপক্বতা আসে। যার ফলে তারা বুঝতে পারে কর্মক্ষেত্রে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি কিভাবে নিজের ছোট ছোট খারাপ লাগাকে অবদমিত রেখে কাজ করে যেতে হয় এই সমস্ত বিষয় তারা বুঝতে পারে। তবে পিটার প্যানরা মানসিক পরিপক্বতার অভাবের কারণে তারা এটা বুঝতে পারে না, যার ফলে তারা ধৈর্য অল্পতেই হারিয়ে ফেলে, হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে অবশেষে কাজের সুযোগ হারিয়ে ফেলে। আর এই রকম কিছুদিন পরপরই চাকরি পরিবর্তন করার ফলে একটি স্থায়ী ক্যারিয়ার গঠন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
অর্থনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণে ব্যর্থতা
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনে আর্থিক সমস্যা লেগেই থাকে, আর এর পেছনের কারন হল স্থায়ী ক্যারিয়ার গঠনে ব্যর্থতা। খুব কম সময়ের জন্য তারা অর্থনৈতিকভাবেও স্থিতিশীল হয়ে থাকে। আবার এটাও বলা যেতে পারে যে অর্থনৈতিক দায়িত্বশীলতার প্রয়োজনীয়তাটাও পিটার প্যানরা উপলব্ধি করতে পারে না। কারন তারা যদি এই বিষয়টি উপলব্ধি করতেই পারত তাহলে তারা অন্তত টাকার কথা চিন্তা করে হলেও আরো বেশি সাবধান হত কর্মক্ষেত্রে, এইভাবে ঝোঁকের বশে বারবার চাকরি পরিবর্তন করত না।
এক কাজে বেশিদিন মন বসাতে ব্যর্থতা
যদি মনে করেন যে পিটার প্যান সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রেই বেশি দিন মন বসাতে ব্যর্থ হয় তাহলে ভুল ভাববেন। কারন এরা শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয় কোন কিছু শখ হোক বা পছন্দসই কোন কাজেই হোক না কেন তাতেও খুব বেশী দিন আগ্রহ ধরে রাখতে পারে না। এদের কাছে আজ হয়ত নতুন কোনো একটি কাজ ভালো লেগে গেল। সেটি কয়েকদিন খুব উৎসাহ সহকারে করল। এরপরই তাদের ওই কাজটির প্রতি বিরক্তি ধরে গেল এবং কাজটি করা তারা একেবারে ছেড়ে দিল। এই বিষয়টিকে তুলনা করা যেতে পারে অনেকটা ছোট বাচ্চাদের খেলনা নিয়ে খেলার মতো। যেমন কোন বাচ্চা নতুন কোনো খেলনা পাওয়ার পর সেটিকে নিয়ে কয়েকদিন মহানন্দে খেলতে থাকে তারপর আর সেটির দিকে ফিরেও তাকায় না।
অবাস্তব স্বপ্ন দেখা
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। কারন স্বপ্ন দেখার জন্য কোনো পরিশ্রম করতে হয় না এবং কষ্টও করতে হয় না। এছাড়াও তারা মনে করে যে স্বপ্ন দেখার মাধ্যমেই অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। আর সেই জন্য তারা নির্দ্বিধায় অবাস্তব স্বপ্ন ও অলীক কল্পনায় দিন কাটাতে থাকেন। যার ফলে তাদের কাজের পরিধি সীমাবদ্ধ থাকে এই স্বপ্ন দেখা ও কল্পনা করাতেই। সেগুলি যে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করতে হয় সেই বিষয়ে তারা পাত্তায় দেয় না। তারা জানেই না যে কিভাবে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হয় বা সেটি করবে কীভাবে।
লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা
সামাজিকভাবে নারী এবং পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা কিছু স্বতন্ত্র দায়িত্ব রয়েছে যেগুলি পালন করাকে জরুরি বলে মনে করা হয়ে থাকে। কিন্তু একজন পিটার প্যান ব্যক্তি এই লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। আর এটি বেশিভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষদের মধ্যেই দেখা যায়। কারন ছোটবেলা থেকে নারীদের উপর অনেক দায়িত্ব জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং সে না চাইলেই তাকে সেগুলো পালনে বাধ্য করানো হয় অর্থাৎ তাকে সেগুলো করতেই হবে। অপর দিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর তারা না চাইলে তাদেরকে সেগুলো করতে বাধ্য করা যায় না। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে নির্দিষ্ট লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্ব সমবয়সী দুজন নারী-পুরুষের মধ্যে নারীরাই বেশী পালন করে থাকে।