ফিচার আর্টিকেল

নিজের কাজে এত টাই মগ্ন থাকতেন যে নিজের পেটেন্ট করতেই ভুলে যেতেন। নিকোলা টেসলার আইডিয়া চুরি- প্রথম খণ্ড

নিকোলা টেসলার জন্ম হয় ক্রোয়েশিয়াতে ১০ জুলাই ১৮৫৬ সালে। তাঁর বাবা মিলুটিন টেসলা ছিলেন একটা সাইবেরিয়ান অর্থডকস চার্চ এর প্রিস্ট, আর মা ডুকা বাড়িতে বিভিন্ন রকম জিনিস দিয়ে হ্যান্ডক্রাফট জিনিস তৈরি করতেন। তাদের পরিবারে দুই ভাই আর তিন বোনের মধ্যে নিকোলা টেসলা ছিল সব থেকে ছোটো। ছোটবেলা থেকে পরিবেশের প্রতি এক অদ্ভূত টান ছিল টেসলার।

কিন্তু হলো ঠিক উল্টো টা, এডিসন এর নোংরা রাজনীতির জন্যই সারাজীবন বিজ্ঞান এর পিছনে সময় দেওয়া কাজ পাগল এই বিজ্ঞানীর শেষ জীবন কেটেছিল নিউ ইয়র্ক এর এক হোটেল এর রুম এর মধ্যে নিঃসঙ্গ আর অসম্ভব অর্থ কষ্টে। হোটেল এর সেই রুম এর দরজা ভেঙে রুগ্ন মৃত দেহ দেখতে পেয়ে ছিল সেখানে কাজ করা এক হোটেল বয়।”

ছোটো বেলা তে অসম্ভব মেধাবী ছিলেন নিকোলা টেসলা। অংকের বই এর কঠিন কঠিন সব সমাধান কাগজে না লিখেই সমাধান করে ফেলতে পারতেন টেসলা। ছয় টির বেশি ভাষা জানতেন এই মহান বিজ্ঞানী। স্কুল এ প্রায় সব বিষয়ে প্রথম হতেন টেসলা। মাত্র চার বছরের স্কুল এর পড়া শুনা তিন বছরেই শেষ করে ফেলে ছিলেন টেসলা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই টেসলার উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী ছিল সব শিক্ষক।

টেসলার বয়স যখন মাত্র আট তখন ঘোড়া থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তার দাদা “ডেন” এর, এই ঘটনা মারাত্মক ভাবে মানসিক আঘাত পান নিকোলা টেসলা, নিজের অটো বায়োগ্রাফি তে সেই কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

এরপর স্কুল এ পড়ার সময় বাল্য বয়সে মারাত্মক ভাবে কলেরা তে সংক্রমিত হলেন টেসলা। যদিও খুব তাড়াতাড়ি কলেরা কে জয় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন টেসলা। স্কুল শেষ করে বেশিরভাগ ছেলে মেয়েরা যখন সেই সময়ে প্রিস্ট এর কাজে অথবা সেনাবাহিনী তে যোগ দেয় তখন ছেলের এই অসম্ভব মেধার জন্যই বাবা তাকে তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠায়।

উনিশ বছর বয়সে অস্ট্রিয়ার গ্রাজ এ পলিটেকনিক কলেজ এ ভর্তি হন নিকোলা টেসলা। সেখানেও রাতারাতি কলেজ এর সেরা ছাত্র হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন টেসলা। কিন্তু এই কলেজ এ পড়ার সময় টেসলা জীবনে এমন এক ঘটনা ঘটলো যেটা মোর ঘুরিয়ে দিল তার গোটা জীবনের।

ফিজিক্স এর ক্লাস এ প্রফেসার ডাইরেক্ট কারেন্ট দিয়ে চলা একটা ডায়নামো এর যান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপ ছাত্র দের বোঝাচ্ছিলেন,যেখানে ছাত্র দের মধ্যে স্বয়ং টেসলা উপস্থিত ছিলেন।

ডাইরেক্ট কারেন্ট এর ক্ষেত্রে একটা তারে মধ্যে ইলেকট্রন একই দিকে যায়, কিন্তু যদি ওই তারে ইলেকট্রন যদি প্রথমে আগে যায় এবং পরে পিছনে আসে তখন তাকে অলটারনেটিভ কারেন্ট বলে। অলটারনেটিভ কারেন্ট এর এই ক্রিয়া ভালো করে জানতেন টেসলা, তাই প্রফেসার কে থামিয়ে দিয়ে টেসলা বললেন “যদি এই জায়গায় ডিসি এর জায়গায় এসি ব্যাবহার করা হয় তাহলে এটাকে সুন্দর ভাবে বানানো যেতে পারে। টেসলার কথা মত, ওই ডায়নামো থেকে কমিটেটর কে সরিয়ে দিলেন প্রফেসার, যেটা এসি কে ডিসি তে কনভার্ট করত, কিন্তু এখানে প্রফেসার জয়ী হলেন, কমিটেটর যেটা এসি কে ডিসি তে কনভার্ট করত সেটা সরিয়ে নেওয়াতে ডায়নামো কাজ করাই বন্ধ করে দিলো। স্বাভাবিক ভাবেই ক্লাস এ সবার সামনে নাক কাটা গেলো তার আর কড়া.ধমক খেতে হল প্রফেসারের কাছে।

এই ঘটনাই টেসলা এর জীবনের মোর ঘুরিয়ে দিল। অলটারনেটিভ কারেন্ট দিয়ে কি ভাবে মেশিন চালানো যায় সেটা নিয়েই গবেষণা করবেন বলে লক্ষ স্থির করলেন, এরপর টেসলা জীবনে যতো কিছু আবিষ্কার করেছেন তা সব কিছুই এই অলটারনেটিভ কারেন্ট ভিত্তিক। কলেজ এর শেষ বছর গুলতে পড়াশুনার উপর ক্রমশ আগ্রহ হারাতে থাকেন টেসলা। ফাইনাল ইয়ার এর আগেই কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নিকোলা টেসলা। টেসলা কলেজ ছাড়ার কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর (১৮৮২) বাবা মারা যান, এর পর টেসলা ও ক্রোয়েশিয়া ছেড়ে বুদাপেসট এ এসে থিউগাভ পুসকাস এর কোম্পানি তে সামান্য টেলিফোন লাইনের তার ঠিক করা এর কাজে যোগ দিলেন। কিন্তু এই সামান্য কাজেও নিজের প্রতিভার প্রমাণ রাখলেন টেসলা।

নিজের বায়োগ্রাফিতে টেসলা লিখেছেন “তার আই কিউ এত শক্তি শালী ছিল যে কোনো রকম কাগজ পেন ছাড়াই পার্ক এ ঘুরতে ঘুরতে গোটা একটা গোটা মেসিন এর যান্ত্রিক পদ্ধতি তিনি কল্পনা করতে পাড়তেন”। বর্তমান যুগের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চালানোর প্রধান ধারনা “রোটেটিং ম্যাগনেটিং ফিল্ড” তাঁর কল্পনা প্রসুত।

টেসলার কাজে থিউগাভ পুসকাস খুশি হয়ে চিঠি লিখলেন নিজের একজন ভীষণ প্রিয় বন্ধু আর অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী থমাস অ্যালভা এডিসন কে। এবং তার কোম্পানি (কনটিনেনটাল এডিসন) তে একটা চাকরি এর ব্যাবস্থা করে দেন। সেখানে এডিসন এর অ্যাসিস্ট্যান্ট চার্লস ব্যাচেলর এর নজরে আসেন টেসলা। চার্লস ব্যাচেলর টেসলা এর কাজে খুশি হয়েই টেসলার হয়ে এডিসন কে একটি প্রশংসা পত্র লেখেন। সেই প্রশংসা পত্র পেয়ে টেসলা কে ডেকে পাঠান এডিসন। যদিও এরই মধ্যে টেসলা এসি ইনডাকসান মোটর বানাতে সফল হন। টেসলা অলটারনেটিভ কারেন্ট এর ভবিষ্যত নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলেন,তিনি জানতেন ডাইরেক্ট কারেন্ট মূল সমস্যা ছিল পাওয়ার স্টেশন থেকে আধ মাইল এর বেশি সেটাকে পাঠানো সম্ভব হতো না। কিন্তু এসি কারেন্ট এর ক্ষেত্রে এই সব সমস্যা ছিল না। কিন্তু নিজের ক্ষমতায় বানানো এসি মোটর এর পেটেন্ট এডিসন কে দেখাতেই তা প্রত্যাখ্যান করেন এডিসন।

উল্টে এডিসন তাকে তারই তৈরি করা কিছু মেশিন নতুন করে ডিজাইন করতে বলেন, এবং কথা দেন যদি টেসলা এতে সফল হয় তাহলে তিনি টেসলা কে পঞ্চাশ হাজার ডলার পুরস্কার দেবেন, এডিসন এর এই কথা তে রাজি হয়ে টেসলা সফল ভাবে সেই সব মেশিন নতুন করে ডিজাইন করে এবং সফল ভাবে ব্যবহার এর উপযোগী হয়। কিন্তু এরপর এডিসন তার কাজে খুব খুশি হলেও তাঁকে তার প্রাপ্য পুরস্কার পঞ্চাশ হাজার ডলার দিতে অস্বীকার করে এবং বলেন যে “কথাটা একটা সস্তা আমেরিকান জোক মাএ। এডিসন এর এই কাজে বিরক্ত হয়ে ওই কোম্পানি এর চাকরি ছাড়েন, নিকোলা টেসলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *