ডিফেন্স

মিয়ানমারকে চীন একতরফা বা অন্ধভাবে কেন সমর্থন করে?

মিয়ানমারে চীনের স্বার্থের কথা বিবেচনা করলে প্রথমেই বলতে হয় আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কথা যার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন। দুই পক্ষই মিয়ানমারকে হাত করতে হয় তাদের সরাসরি পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, নয়তো তাদের বিপক্ষে না গিয়ে নীরব থেকেছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে নৌশক্তির ভূমিকা ব্যাপক। আর এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে বঙ্গোপসাগরকেও দখলে রাখা গুরুত্বপূর্ণ । বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার তুলনায় মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা অনেক বেশি। 

স্বাভাবিকভাবেই মিয়ানমারের উপর সমর্থনের পাল্লা ভারী হওয়ার কথা। তার উপর  ২০২০ সালের নভেম্বরে চীনকে টক্কর দিতে ভারত, আমেরিকাসহ চারটি দেশ যৌথ নৌমহড়া চালিয়েছে বঙ্গোপসাগরে, চীন এর তীব্র বিরোধিতা করেছে। একটা কথা না বললেই নয়, চীনের সাথে বঙ্গোপসাগরের সরাসরি সীমান্ত নেই। সেক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা মিয়ানমার।

দ্বিতীয়ত, চীন কখনোই অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অংশ বলে স্বীকৃতি দেয়নি, এমনকি তারা ২০২০  সালের সেপ্টেম্বরে অরুণাচলকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছিল। এর আগে বেশ কয়েকবার চীনের সেনারা অরুণাচল প্রদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। ওদিকে ভারত অরুণাচল প্রদেশসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে যোগাযোগ সহজ করার জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মধ্য দিয়ে কালাদান নদীকেন্দ্রীক ‘কালাদান প্রোজেক্ট’ গ্রহণ করেছে। এটা সফল হলে ভারতের অরুণাচলসহ অন্যান্য রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহজ হবে যা চীনের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

কালাদান প্রোজেক্ট:

ভারত থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ সহজতর করার জন্য মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করছে, আর তা করতে পারলে এসব দেশে ভারতের প্রভাব বাড়বে। এখানেও চীনের কথা বলতে গিয়ে ভারতকে টানার কারণ চীন-ভারত দ্বন্দ্ব এবং মিয়ানমারকে কাছে টানার প্রতিযোগিতা। 

এবার ভারতকে বাদ দিয়ে দেখা যাক মিয়ানমারে চীনের সরাসরি কী কী স্বার্থ-

প্রথমত, মিয়ানমারে যে দেশটির বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি সেটি হলো চীন, গত ৩০ বছরে যার পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

দ্বিতীয়ত, চীন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মধ্য দিয়ে তার ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত গ্যাস ও তেলের পাইপলাইন স্থাপন করেছে যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা তেলগ্যাস এসব প্রদেশে সহজে নিতে পারছে। উল্লেখ্য, এই পাইপলাইন স্থাপনের সময়ে রোহিঙ্গারা বেশ বিরোধিতা করেছিলো। 

তৃতীয়ত, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কাইয়াকপুতে চীন একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে এবং ৭.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে যার ৭০ শতাংশ মালিকানা চীনের। সেক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব ঠেকানোর জন্য এবং মিয়ানমারে নিজেদের বিনিয়োগ ধরে রাখার জন্য মিয়ানমারে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে চীনের। আর মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব চীন বেশ ভালোমতোই জানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *