ডিফেন্স

কিভাবে স্বাধীনতা পেয়েছিল রাশিয়া?

পরাধীনতার হাত থেকে স্বাধীন হওয়া মুখের কথা নয়। স্বাধীনতা পেতে গেলে যেমন লড়াই করতে আর সেরকমই অত্যাচার সহ্য করতে হয়। সেরকমই জার শাসনের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেছিল রাশিয়ানরা। একটু বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে এভাবে শুরু করতে হয় যে – জার শাসনে পরে রাশিয়ার সাধারন জনগনের অবস্থান দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ ভূমিদাসে পরিণত হয়েছিল। যাদের অধিকাংশ ছিল কৃষক ও দিন মজুর শ্রমিক। তারা মাঝে মাঝেই অভিজাত শ্রেণী ও জারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শুরু করেছিল শোষণ ও নিপীড়নের জন্য। এমতাবস্থায় জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার পরিস্থিতি বুঝে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদ করে দেয়, সেই কারণে তাকে মুক্তিদাতা জার বলা হয়। এর পরবর্তীকালে কিছুকাল জারতন্ত্র বড় বিপদের সম্মুখীন না হলেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদানের ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। অস্থির অবস্থা ও শ্রমিক কৃষক সহ সমাজের নিপীড়িত সম্প্রদায়কে নিয়ে লেলিন জার তন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিয়েছিল। 

চরমপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতা লেলিন বর্তমান পরিস্থিতির জন্য জার তন্ত্রের তৎকালীন রাজা বা জার দ্বিতীয় নিকোলাস কি উৎখাত করার জন্য বিদ্রোহের আহ্বান করে প্রাভদা নামক পত্রিকায়। এরপর পেট্রোগ্ৰাড  শহরে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে ও জার তন্ত্রের উৎখাতের ডাক দেয়। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের শেষে জার তৃতীয় নিকোলাসকে উৎখাত করে লেলিন কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করে। এভাবেই অত্যাচারী জার তন্ত্র থেকে রাশিয়ার সাধারণ মানুষ প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল । এভাবেই কমিউনিস্ট শাসিত সোভিয়েত ইউনিয়ন আত্মপ্রকাশ করেন পৃথিবীর বুকে। তবে এত সহজেই সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাইনি রাশিয়া। জার তন্ত্রের হাত থেকে মুক্তি পেলেও কমিউনিস্টদের হাত থেকে সম্পূর্ণর উপর মুক্তি পাওয়া এখনও বাকি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে জয়লাভের ফলে মিত্রশক্তি দেশগুলি বিশ্বের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে । সমস্যাটা বাধে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি দুর্বল হয়ে পরলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকা বিশ্বের প্রধান দুই শক্তিতে পরিণত হয়। সৃষ্টি হয় ‘ঠান্ডা ‘লড়াই নামক স্নায়ুযুদ্ধের। একদিকে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন   পুঁজিবাদ ও অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন নেতৃত্বাধীন সমাজতন্ত্রবাদ, এই দুই আদর্শের সংঘাতে শেষ পরিণাম সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন নামমাত্র ব্যাক্তিস্বাধীনতা দিয়ে সামরিক শক্তির দিকে বেশি মনোনিবেশ করায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান অবনতি হয়েছিল। 

অন্যদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী দেশগুলির সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ও সমাজ ব্যবস্থা মোকাবিলা না করতে পারায় এই দেশ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ২৭টি দেশের বিভক্ত হয়ে পরে এবং পূর্বাতন USSR-র পতন হওয়ায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নতুনভাবে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *