প্রবেশ করলেই মৃত্যু হয় পৃথিবীর কোন জঙ্গলে?
নিউজ ডেস্ক – গোটা পৃথিবীকে মুড়ে রয়েছে এক রহস্যময়ী চাদর। যা ভেদ করা বিশেষজ্ঞদের পক্ষে অসম্ভব নয়। পৃথিবীর একাধিক রহস্যময় স্থান এর মতই এক রহস্যময়ী আবরণে ঢাকা জঙ্গল হলো বেনিংটনের জঙ্গল। এখানে একবার মানুষ প্রবেশ করলে তার বেঁচে ফিরে আসা খুবই দুর্মূল্য। যার কারণে এই জঙ্গলকে অনেকেই মৃত্যুর গুহাও বলে থাকেন। এই রহস্যভেদী জঙ্গলের সম্বন্ধে একাধিক ঘটনা কথিত আছে। সবিস্তারে তো বলতে গেলে সেই গল্প কাহিনী বইয়ের পাতা উল্টে দেখা প্রয়োজন।
প্যারানরমাল গল্প লেখক জোসেফ এ সিত্রো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম ভারমন্টে অবস্থিত রহস্যজনক এক স্থানের নাম দেন ‘বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল’। শোনা যায় এই জঙ্গলে কেউ একবার প্রবেশ করলে না তো সে ফিরে আসে এমনকি এই জঙ্গলের ভেতর থেকে একাধিক রহস্যময় আওয়াজও শুনতে পাওয়া যায়।১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলে ঘটেছিল এমন কয়েকটি নিখোঁজের ঘটনা, যার রহস্যভেদ করা এখনো কোনো সার্চ টিম বা তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। রহস্যভেদী এই জঙ্গলে প্রথম রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৪৫ সালের ২ নভেম্বর। ৭৫ বছর বয়সী মিডি রিভার্স নামের একজন গাইড ৪ জন শিকারীকে নিয়ে পাহাড়ে গেলেন শিকারের উদ্দেশ্যে। দলটিকে নিয়ে ফিরে আসার সময় লং ট্রেইল রোড ও ৯ নম্বর রুটের কাছাকাছি এসে রিভার্স তার সহযাত্রীদের থেকে সামান্য এগিয়ে যান। এরপর থেকে তার সহযাত্রীরা তার আর কোনো হদিসই পাননি। হঠাৎই ওই জায়গা থেকে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পরে স্থানীয় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকের দল চিরুনি অভিযান চালিয়েও রিভার্সের দেখা তো দূরে থাক, তার দেহ পর্যন্ত খুঁজে পায়নি। শুধুমাত্র একটি ঘটনায় নয় প্রত্যেক বছরই কোনো না কোনো মানুষকে প্রাণ খোয়াতে হতো ওই জঙ্গলের কারণে।
মিডি ডিভোর্সের মৃত্যুর ঘটনার পর যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেই বছরটি ছিল ১৯৪৬ সালের ১লা ডিসেম্বর। বেনিংটন কলেজে অধ্যয়নরত পলা ওয়েল্ডেন নামের এক ১৮ বছরের যুবতী ভ্রমণের নেশায় লং ট্রেইলের উদ্দেশ্যে বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলের বনের মধ্যে ঢুকে পড়েন। তার পরিচিত অনেকেই তাকে বনের মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছে। কিন্তু সে আর জঙ্গল থেকে কখনো ফিরে আসেনি। তবে অনেকেই মনে করেন সেই যুবতী আর প্রেমিকের সঙ্গে কানাডায় পালিয়ে গিয়েছে। আবার অনেকের কল্পনা অনুযায়ী নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে এর জঙ্গলে কোন এক অজানা আস্তানায় রয়েছে তিনি। সর্বোপরি তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় যথেষ্ট থাকলেও তার কোন দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি।
এরকমই এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিলো প্রায় তিন বছর পর। ১৯৪৯ সালের ১ ডিসেম্বর তারিখে। জেমস ই টেটফোর্ড নামের একজন প্রবীণ সামরিক ব্যক্তি তার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করার জন্য সেইন্ট এলবান থেকে বাসে করে বেনিংটনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। বাসে যাত্রী ছিলেন মাত্র ১৪ জন। তবে আশ্চর্যের বিষয় গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর জেমস ই টেটফোর্ড নামের ওই ব্যক্তিটি কে তার নির্দিষ্ট সিটি আর কেউ দেখতে পাননি। কিন্তু সকলের দাবি গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর আগে বাসটি কোন জায়গায় বিশ্রাম রত করেননি অর্থাৎ থামেনি। তাহলেই সকলের একটাই প্রশ্ন কি করে একজন জলজ্যান্ত মানুষ বাসের মধ্যে থেকে উধাও হয়ে গেল! সেই বিষয়েও পুলিশের তদন্তে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
পরের ঘটনাটি ঘটে পল জেপসন নামের এক আট বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে। ১৯৫০ সালের ১২ অক্টোবর এক সকালের ঘটনা। জেপসন ছিল তার মায়ের সাথে, তিনি এ সময় শুকরছানাদের খাবার খাওয়াচ্ছিলেন, আর জেপসন বাড়ির চারপাশে ছোটাছুটি করছিল। ঘণ্টাখানেক পর মা ঘরে এসে দেখেন, জেপসন ঘরের আশেপাশে কোথাও নেই। জেপসনের গায়ে ছিল লাল রঙের জ্যাকেট, দূর থেকেও যা সকলের চোখে পড়ার কথা। কিন্তু সার্চ টিম অনেক অনুসন্ধান করেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। একটি-দুটি নয় এমন রহস্যময় জঙ্গলের গল্প বলতে গেলে খাতার পৃষ্ঠা শেষ হয়ে যাবে কিন্তু এর অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড কারখানা কোনদিন শেষ হবেনা।
এই ঘন জঙ্গলের বসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে ১৯৩৭ সালের পূর্বে এলাকাটি বেশ জনবহুল ছিল। কিন্তু ১৯৩৭ সালের দিকে গ্লসটেনবারি শহরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারি দেখা দেয়, ফলে অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটে। বর্তমানে পরিসংখ্যা করে দেখা গিয়েছে সেখানেই মোট আটটি পরিবার বসবাস করছে। তবেই ধ্বংসাত্মক জঙ্গলে কারণেই সেখানে নতুন করে বসত বাড়ি বানাতে সাহস পায় না কেউই। এমনকি বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে ওই এরিয়াটিকে ভৌতিক বলেও ঘোষণা করা হয়েছে।