ডিফেন্স

পণ্ডিত নেহেরু কি নিজে অনুচ্ছেদ নাম্বার ৩৭০ এর বিরুদ্ধে ছিলেন? তাহলে ভুলটা কোথায় করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী?

নিউজ ডেস্কঃ ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে প্রায়শই জহরলাল নেহেরু এবং তার কাশ্মীর ইস্যু সমাধান নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা শোনা যায়। সংসদে বিভিন্ন সময় তিনি কাশ্মীরে বিশৃঙ্খলা চলার জন্য দোষারোপ করেছেন পন্ডিত জহরলাল নেহেরুকে। সত্যি বলতে এর মধ্যে কাশ্মীরে রাজনৈতিক অস্থিরতার দায় পুরোপুরি নেহেরুর ওপর চাপানো না গেলেও কিছু দোষ যে তার ছিলোই একথা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই। 

বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে গোটা ঘটনা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় সেই সময় জহরলাল নেহেরু বেশ কিছু ভুল সির্ধান্ত যদি এড়াতে পারতেন তবে বর্তমানে পরিস্থিতি হয়তো হতো অনেকটাই আলাদা। POK গঠন করে তা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পাড়া তো বটেই সেই সঙ্গে এই ভুলের তালিকায় রয়েছে আরও এমন বেশ কিছু জিনিস যা সেই ১৯৪৭ সাল থেকে এখনো জম্মু কাশ্মীরের মানুষকে ক্রমাগত ভুগিয়ে চলেছে। আজ আসুন আলোচনা করা যাক এগুলো নিয়েই।

জাতিসংঘে কাশ্মীর ইস্যু: ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি পন্ডিত নেহেরুর নেতৃত্বে কাশ্মীর ইস্যু সমাধানের জন্য ভারত দ্বারস্থ হয় জাতিসংঘের। উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কাশ্মীর বিতর্কে সম্পূর্ণরূপে এক ছেদ টানা। কিন্তু, এখানে প্রশ্ন হল জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে আদেও কি কোনো বিতর্ক থাকার কথা? সহজ উত্তর হলো, না।  কারণ ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর জম্মু-কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংহ স্বয়ং জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসাবে মেনে নিয়ে জমি অধিগ্রহণের নথিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। এমনকি লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কাছে একটি চিঠিতেও তিনি জানিয়েছিলেন:

“আমার রাজ্যের বর্তমান অবস্থা এবং জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভারতের সাহায্য   প্রার্থনা ছাড়া অন্য পথ খোলা নেই আমার কাছে। ফলত আমি সেই সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছি এবং ভারত সরকারকে কাছে এক ভারতীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবে যোগদানের  ক্ষেত্রে স্বীকৃতি প্রার্থনা করি। “

শুধু মহারাজা স্বয়ং যে এই চুক্তিকে স্বীকার করেছিলেন তা কিন্তু নয়। সেই সঙ্গে GOI অব্দি স্বীকৃতি দিয়েছিল এই গোটা বিষয়টিকে। সুতরাং এ কথা নতুন করে বলা নিষ্প্রয়োজন যে জমি অধিগ্রহণ চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে মহারাজা যেহেতু জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল তাই এটি কখনোই এক বিতর্কিত রাজ্য ছিল না। তাই শুধু শুধু জাতিসংঘে এই মামলাটি নিয়ে যাওয়ার কোনো দরকারও ছিল না নেহেরুর। সেই ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি থেকে মামলাটির জাতিসংঘে স্থগিত রয়েছে আর পন্ডিত নেহেরুর সেই ব্যর্থতার কারণে ভুগতে হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর সহ সমগ্র ভারতের অসংখ্য মানুষকে। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের জাতিসংঘের দ্বারস্থ হওয়াকে কেন্দ্র করেই এখনো পর্যন্ত পাকিস্তান সহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ক্রমাগত প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কাশ্মীর ভারতের অংশ নয়।  কিন্তু মহারাজের চিঠি বা যোগদানে তার সম্পূর্ণ সম্মতির কথা এক বারের জন্যেও উল্লেখ করছে না তারা। নেহেরু যদি জাতিসংঘে না যেতেন তাহলে পাকিস্তান এবং উপত্যকার সীমান্ত প্রদেশগুলোতে ভুল খবর প্রচারের কোন কারনই থাকতো না।

সরদার প্যাটেল কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আর্টিকেল 370 এর বিরুদ্ধে ছিলেন এবং এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন:

“শেখ আবদুল্লাহ বা গোপালস্বামী স্থায়ী নন কেউই কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ভারত সরকারের শক্তি এবং সাহসের ওপর।  আর আমরা যদি নিজেরাই নিজেদের শক্তির ওপর আস্থা না রাখতে পারি তাহলে জাতি হিসাবে বেশিদিন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবো না আমরা”।

কিন্তু, পণ্ডিত নেহেরু কি নিজে অনুচ্ছেদ নাম্বার ৩৭০ এর বিরুদ্ধে ছিলেন? বিষয়টি নিয়ে নাড়াঘাঁটা করলে দেখা যাবে তিনি না তো এই আইনের বিরুদ্ধে ছিলেন আর না তো পক্ষে। বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী দাবি করেন, নেহেরু সম্পূর্ণরূপে আর্টিকেল ৩৭০ এর বিরোধী ছিলেন। কিন্তু, তাই যদি হবে তবে দীর্ঘ ১৬ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে থেকেও তিনি সম্পূর্ণরূপে এই আইন বাতিল করেননি কেনো? এক্ষেত্রে মনে প্রশ্ন জাগে  নেহেরুর বদলে সর্দার প্যাটেল যদি সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হতেন, তবে কি কোনোভাবে আর্টিকেল ৩৭০ ভারতীয় সংবিধানের অংশ হওয়া থেকে আটকানো যেত? 

শেখ আবদুল্লাহর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া নিয়েও কিন্তু শেষ নেই বিতর্কের। আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ভারতের প্রতি অনুগত থাকার ভান করে এদেশে থেকেই দেশ বিরোধী নানা কার্যকলাপে জড়িয়েছিলেন এমনকি দুই জাতি তত্ত্বের প্রচারও করেছেন। প্যাটেলের চাপে আব্দুল্লাহকে সেইসময় নেহেরু জেলে পাঠিয়েছিলেন ঠিকই তবে ১৮৬৪ সালের ৮ই এপ্রিল মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। শোনা যায় সেই সময় নেহেরু এবং জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জি.এম.  সাদিক উভয়ই বেশ নরম মনোভাবাপন্ন হয়ে পড়েছিলেন শেখ আবদুল্লাহর প্রতি। এই মোহো ভাঙ্গতে অবশ্য সময় লাগেনি বেশি।  মুক্তির পরপরই পুনরায় উপত্যকায় বিভিন্ন দেশবিরোধী কার্যক্রম শুরু করেন আবদুল্লাহ। এমনকি প্রতিবেশী পাকিস্তানের সমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়ে আইয়ুব খানের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেন তিনি। এমনকি ১৯৬৫ সালে চিনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন-লাইয়ের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। ফিরে আসার পর তাকে যদিও বা দিল্লি বিমানবন্দর থেকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তাকে তবু, ১৯৫০ সালে সরদার প্যাটেল হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা না গেলে হয়তো পন্ডিত নেহেরুর এই আরেকটা ভুলও হয়তো তার চেষ্টায় সহজেই এড়ানো যেত এবং কাশ্মীরের গন্ডগোল নিয়ন্ত্রণে আনা যেত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *