ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রস্তত হচ্ছে ফিলিস্তিনি হামাসের ব্রিগেড। জানুন বিস্তারিত
নিউজ ডেস্কঃ পৃথিবীতে এমন কোন দেশ থেকে যাকে সারা পৃথিবী সমীহ করে চলে তাহলে সবার আগে নাম উঠে আসবে ইসরায়েলের। কারন ইতিমধ্যে অর্থাৎ ২০২১ সালে এসেও তারা প্রমান করে দিয়েছে যে এই ইহুদী গোষ্ঠী কতোটা শক্তিশালি।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্র ইসরায়েল ফিলিস্তিনের হামাসের সাথে এক ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। যার ফলে উভয় পক্ষের ব্যাপক প্রাণহানি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাস্তবে গাজায় ফিলিস্তিন সাধারণ মানুষেরা ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায়। যদিও ইসরায়েলের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকায় সেভাবে ক্ষতি করতে পারেনি হামাস বাহিনী। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপে অবশেষে অস্ত্রবিরতির মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার চলা ১১ দিনের ভয়ংকর যুদ্ধের অবসান ঘটেছিল।
ধ্বংসাত্মক ১১ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল এবং হামাস একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের সর্বোচ্চ সামরিক সক্ষমতা প্রয়োগ করে। প্রথম এর সুত্রপাত হয় হামাস গাজা থেকে প্রায় ৪৫০০ রকেট হামলা করেছিল যদিও এর ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রকেট আকাশ পথেই আটকে দিয়েছিল তবে বাকি যে রকেট গুলি ইসরায়েলের মূল ভুমিতে এসে পরে তাতে প্রচুর ক্ষতি হয়। এর জবাব ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দিতে শুরু করে তারা ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। গাজার বড় বড় ভবন এবং টানেল ধ্বংস করে দিয়েছিল ইসরায়েলের ভয়ঙ্কর যুদ্ধবিমান গুলি। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য হামাস ইতিমধ্যে ৫০০০০ এর বেশি রকেট আর্টিলারি ও মাল্টিপল রকেট এবং মিসাইল মজুদ করে রেখে দিয়েছে । কিছুদিন আগে ইসরাইলের মিডিয়া এই ব্যাপারে Isreal Defence Force বা IDF কে সর্তক করেছে ।
সম্প্রতি এই যুদ্ধে যা ৪৫০০ এর মতো মিসাইল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল যার মধ্যে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রকেট আকাশ পথেই আটকে দিয়েছিল ইসরায়েলের আয়রম ড্রোন। ফিলিস্তিনের সামরিক গ্রুপ হামাসের অস্ত্র ভাণ্ডারে বর্তমানে বিভিন্ন সিরিজের স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার রকেট মজুত রয়েছে। যা দিয়ে তারা কার্যত ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন প্রতিরোধ করে থাকে।
তবে প্রশ্ন হল এই হামাস কারা? কে তৈরি করে এই হামাস বাহিনী?
ইয়াহিয়া আয়াশ ১৯৮৭ সালে হামাস তৈরি করেছিলেন। আয়াশ ছিলেন অত্যান্ত মেধাবী,পদার্থবিদ ও IED বা উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক তৈরির বিশেষজ্ঞ। তিনিই সর্বপ্রথম হামাসের সুইসাইড বোম এবং লোকবল তৈরি করেন যাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়তে পারা যায়। তবে প্রথমদিকে এই হামাস কোন সশস্ত্র সংগঠন ছিল না। ১৯৯৩ সালের দিকে হামাস নিজেদের সংগঠন থেকে তৈরি করে যার নাম দেওয়া হয় Izz ad-Din al-Qassam । যারা সামরিক অস্ত্র বিষয়ে বেশি জ্ঞান আছে যারা তাদের কাছে এরা কাসাম ব্রিগেড নামে পরিচিত।
আর এই ইজ আদ দিন আল কাসাম হচ্ছে হামাসের সশস্ত্র শাখা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে এদের তৈরি করা হচ্ছে। এই বাহিনীতে ৫০০০০ এর বেশি যোদ্ধা রয়েছে, তবে এই যোদ্ধাদের সম্পর্কে সঠিক খবর পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত। কে এদের বাবা মা অথবা ভাই বোন তা অত্যান্ত কাছের মানুষরাও জানে না। এদের পরিচয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়না।
একাধিক আন্তর্জাতিক সুত্রের মতে এই কাসাম ব্রিগেডকে ৩ টি স্পেশাল অপারেশানে ভাগ করা হয়। এগুলি হচ্ছে যথাক্রমে স্পেশাল অপারেশন কমান্ডো ব্যাটালিয়ন, সুইসাইড বোম্বার বা আত্মঘাতী হামলায় দক্ষ একটি গ্রুপ , স্নাইপার স্কোয়াড ব্রিগেড । যারা স্নাইপিং এ বিশেষভাবে দক্ষ।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস বেশ কিছু অস্ত্র ব্যবহার করে যা সারা পৃথিবী জুড়ে ব্যবহার রয়েছে পাশাপাশি বিধ্বংসীও বটে। AK-47 অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে শুরু করে AK-74 অ্যাসল্ট রাইফেল, M4A1 কারবাইন রাইফেল, PKM জেনারেল পারপোজ মেশিনগান, MG-3 জেনারেল পারপোজ মেশিনগান, Dshk হেভি মেশিনগান ছাড়াও আরো বেশকিছু মেশিনগান ও অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করে থাকে । Sniper Rifle এর মধ্যে ,Dragonov SVD স্নাইপার রাইফেল,PGS-1 স্নাইপার রাইফেল,HS-.50 অ্যান্টি মেটারিয়াল লং রেঞ্জ স্নাইপার রাইফেল বেশি ব্যবহার করে থাকে।
এছারাও এমন কিছু রাইফেল তারা ব্যবহার করছে বিশেষ করে Sniper Rifle ব্যবহার করে থাকে যেগুলার নাম জানা যায় না । অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইল হিসাবে তাদের হাতে রয়েছে Bulsae-2, Konkurs-M, 9K11 Malyutka,Milan, RPG-7 ও নিজেদের তৈরি Yasin অ্যান্টি ট্যাংক যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। একাধিক সুত্রের মতে হামাসের কাছে ৮০০০ এর আশেপাশে অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইল রয়েছে। এয়ার ডিফেন্স বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে SA-7B ম্যানপ্যাড, SA-18 ম্যানপ্যাড, SA-24 ম্যানপ্যাড ছাড়াও বেশ কিছু মোবাইল বেশ অ্যান্টি এয়াক্রাফট মিসাইল ব্যবহার করে থাকে। হামাস M-302 নামে দূরপাল্লার রকেট ব্যবহার করে যেটা R-160 নামে পরিচিত। এই মোবাইল বেস রকেটগুলো ১৬০ কিঃমিঃ দূর পর্যন্ত নিখুতভাবে হামলা চালাতে সক্ষম।
পাশাপাশি হামাসের অস্ত্র ভাণ্ডারে কাসাম সিরিজের অজানা সংখ্যক শর্ট রেঞ্জের রকেট রয়েছে। আর এই কাসাম রকেটের রেঞ্জ মাত্র ১০কিলোমিটার। ১৬ কিলোমিটার পাল্লার কুদস-১০১ শর্ট রেঞ্জের রকেট ব্যবহার করে। হামাসেরে এই মিডিয়াম পাল্লার গ্রাড রকেটের রেঞ্জ আবার ৫৫ কিলোমিটার। এছারাও হামাস এম-৭৫, ফজর এবং জে-৮০ নামের তিনটি মিডিয়াম রেঞ্জের রকেট ব্যবহার করে থাকে যেগুলোর রেঞ্জ ১০০ কিলোমিটার। দীর্ঘ পাল্লার প্রজেক্টাইল হিসেবে যে রকেট ব্যবহার করা হয় তাদের ১৬০ রকেটের রেঞ্জ ১২০ কিলোমিটার এবং এম-৩০২ লং রেঞ্জের রকেটের রেঞ্জ প্রায় ২০০কিলোমিটার।
তবে একটা কথা না বললেই নয় যে ইসরায়েলের অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র গুলি হামাসের এই সব অস্ত্রকে যেকোনো মুহূর্তে অকেজো করে দিতে পারে। কারন ইতিমধ্যে ইসরায়েলের প্রমান করে দিয়েছে যে তাদের হাতে থাকা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম গুলি কতোটা শক্তিশালি। কারন হামাস যেভাবে রকেট হামলা চালিয়েছিল তা মাঝ আকাশে আটকে দিয়ে রীতিমতো নজীর সৃষ্টি করেছে এই ইহুদী রাষ্ট্রটি।