ডিফেন্স

চীন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়তে পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় ভারী অস্ত্র ব্যবহারের দিকে ঝুকছে ভারতবর্ষ

নিজস্ব সংবাদদাতা:বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে অন্যতম ভারতীয় সেনাবাহিনী। বর্তমানে ভারী অস্ত্র বলতে ভারতীয় বাহিনীতে রয়েছে ৫,২২০টি বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরির হেভী ১২২ এমএম, ১৩০ এমএম, ১০৫ এমএম, ১৫৫ এমএম টোয়েড আর্টিলারী এবং একাধিক রকেট লঞ্চার সিস্টেম। তবে, বর্তমানে আফগানিস্তানে তালিবানের পুনর্দখল এবং  চীনের সাথে সীমান্তে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া উত্তেজনার কথা মাথায় রেখে পার্বত্য অঞ্চল এবং উচ্চভূমিতে সহজে আর্টিলারী সিস্টেম মোতায়েনের স্বার্থে ভারত সরকার বেশি করে ঝুঁকছে ভারী অস্ত্র নির্মাণের দিকে। সেই ২০১৬ সালেই মার্কিন যুক্তরাজ্য থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৪৫টি এম-৭৭৭ অত্যাধুনিক Ultralight Field Howitzer (UFH) আর্টিলারী সিস্টেম ক্রয় করে তা তুলে দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় সেনার হাতে। বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে এই ধরণের মোট ১৩৫টি এম-৭৭৭ আল্টা লাইট হাউইটজার সিস্টেম রয়েছে ১৫৫ এমএম টোয়েড আর্টিলারী সিস্টেম হিসেবে। এর বিশেষত্ব হলো খুব সহজেই ভারী পরিবহণ হেলিকপ্টার বা সি-১৩০ হারকিউলিকস সামরিক পরিবহণ বিমানে পরিবহন করে এদের দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে মোতায়েন করা সম্ভব।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিএই সিস্টেম কর্পোরেশনের তৈরি অত্যাধুনিক এই এম-৭৭৭ আল্ট্রা লাইট হাউইটজার সিস্টেমটি তৈরিই হয়েছে পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে। ফলত এটি ওজনও বেশ হালকা। ৪.২ টন ওজন বিশিষ্ট এম-৭৭৭ আল্ট্রা লাইট হাউটজারের ক্যানন ১৫৫×৩৯ ক্যালিবারের এবং রেঞ্জ কার্যকরী হয় সাধারণত ২৫ থেকে ৩৯ কিলোমিটার পর্যন্ত।

১০.৭ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই হাউটজারের শুধুমাত্র ব্যারেলের দৈর্ঘ্যই ৫.০৮ মিটার এবং এটি পরিচালনা করতে প্রয়োজন পড়ে মোট ৮ জন ক্রু এর। ১৫৫ ক্যালিবারের এই হাউটজারে ১৫৫ এমএম তীব্র বিস্ফোরক প্রজেক্টাইল সেল হিসেবে এম-১০৭, এম-১৯৫ এ আরএফবি, এম-৯৮২ সেল ফায়ার করা যায় এবং সাধারণত মিনিটে দুটি এবং সর্বোচ্চ ৭টি সেল ফায়ার করার ক্ষমতা রয়েছে এর। এছাড়া এর আরেকটি বিশেষত্ব হলো যে হাউটজার ২৪ কিলোমিটার দূর থেকে যেমন এম-১০৭ প্রজেক্টাইল সেল ফায়ার করতে সক্ষম তেমনি ৩৭ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে এম-৭৯৫ সেল এবং ৩০ কিমি দূর থেকে তীব্র বিস্ফোরক এক্সপ্লুসিভ প্রজেক্টাইল সেল ফায়ার করতে সক্ষম। ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো এই অত্যাধুনিক ১৫৫ এমএম টোয়েডের আর্টিলারী হিসেবে এম-৭৭৭ আল্টা লাইট হাউইটজার সার্ভিসে আসে এবং এর প্রথম ব্যবহারকারী দেশগুলি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং সৌদি আরব।

সেই ২০০৫ সালে সার্ভিসে আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তানের যুদ্ধ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, ইরাকের গৃহযুদ্ধ এমনকি ২০১৫ সাল থেকে চলমান ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে অব্দি কোয়ালিশন বাহিনী সৌদি আরবের নেতৃত্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে এম-৭৭৭ আল্টা লাইট হাউইটজারের। চাইলেই এটি সরাসরি আমদানি করা যেতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মেক ইন ইন্ডিয়া নীতি মাথায় রেখে ভারতের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিএই সিস্টেমের সাথে যুক্তি করে ভারতীয় অটোমোবাইল প্রস্তুতকারী কোম্পানি মাহিন্দ্রা দেশের মাটিতেই হালকা ওজনের এই এম-৭৭৭এ২ আল্ট্রা লাইট হাউইটজার তৈরি আরম্ভ করেছে। এমনকি তৈরীর পরে এই সিস্টেম পরিবহন করার জন্য গাড়িও তৈরি করছে ভারতের অশোক লেল্যাণ্ড কর্পোরেশন।

মাহিন্দ্রা অটোমোবাইলস ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রথমবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি এম-৭৭৭এ২ সিরিজের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হালকা ওজনের তিনটি হাউইটজার সরবরাহ করেছে। চুক্তি মোতাবেক ১৪৫টি এম-৭৭৭ এর  মধ্যে ২৫টি সরাসরি বিএই সিস্টেম সরবরাহ করা হচ্ছে এবং অবশিষ্ট ১২০টি ভারতের মাটিতেই প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে মাহিন্দ্রা ইণ্ডাস্ট্রিয়াল গ্রুপের সাহায্যে তৈরি করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *