ডিফেন্স

মানুষ নয় সুপার হিউম্যান সেনা বা বায়নিক সেনা তৈরি করা হচ্ছে। এগিয়ে কোন কোন দেশ?

নিজস্ব সংবাদদাতা:প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে নতুন নতুন অস্ত্র তৈরি চেষ্টায় নেমে পড়েছে বিভিন্ন দেশ। এর মধ্যেই আবার হালফিলে উন্নত দেশগুলির মধ্যে কথাবার্তা চলছে সুপারহিউম্যান বায়োনিক সেনা তৈরি করা নিয়ে। এটি আপাদমস্তক আদৌ রোবট নাকি সিনেমায় দেখানো সুপারহিউম্যানদের মতো হবে তা নিয়ে বিস্তর কৌতূহল ও জল্পনা দেখা দিয়েছে সমস্ত মহলে। মানুষের মতো দেখতে রোবট তৈরি করে তাকে দিয়ে সমস্ত কাজ করানোর এক চিত্র ফুটে উঠেছিল ভারতীয় চলচ্চিত্র  রোবট’ এও। নায়ক রজনিকান্তের এই সিনেমাটি  সেই সময় জনগণের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। অবিকল সেই রকমই বায়োনিক সেনা তৈরি করে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা বাস্তবে সম্ভব কিনা তা নিয়েই উঠছে এবার প্রশ্ন।

প্রথমবার বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের  দাবি ছিলো, রাশিয়ার নিজস্ব স্পুটনিক নিউজ এজেন্সিই নাকি ফাঁস করেছে যে রাশিয়া মানবদেহের জেনেটিক কোড পরিবর্তন করছে এবং গোপনে দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নানা পরিবর্তন ঘটিয়ে অতি মানবীয় ক্ষমতার অধিকারী সুপারহিউম্যান তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে। 

স্পুটনিকের তথ্যকে হাতিয়ার করেই পেন্টাগনের বেশকিছু আধিকারিক দাবি করেছিলেন যে ‘বায়োনিক সুপারহিউম্যান সোলজার’ তৈরি করে তাদের সাধারণ সৈনিকের বদলে যুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে  অত্যন্ত গোপনে এক প্রকল্পের মাধ্যমে মানব দেহের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের নির্দেশে পুরো দমে লেগে রয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর গবেষোণা শাখার বেশ কিছু গবেষক। এতো বড় প্রজেক্টর জন্য ঠিক কতটা গবেষণার প্রয়োজন তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আর তাই ধারাবাহিকতা অর্জনের উদ্দেশ্যে দেহের শক্তি বাড়িয়ে তুলতে প্রয়োজনীয় অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা দেহে সুপার মাইক্রোচিপ ইমপ্ল্যান্ট করার মত বিষয়গুলির ওপর রাশিয়া এখনো ব্যাপক গবেষণা এবং উন্নয়ন জারি রেখেছে বলেই দাবী পেন্টাগনের। শোনা যাচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে এই অতিমানবিক শক্তিসম্পন্ন সুপার হিউম্যান সোলজার যাতে পুরো মাত্রায় ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে সেইজন্য রাশিয়া নাকি গবেষণার মাধ্যমে চেষ্টা করছে সৈন্যের জেনেটিক কোড পরিবর্তন করার। 

উল্লেখ্য দীর্ঘকাল সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে সমস্ত রকম ধকল সহ্য করে একইরকম কার্যক্ষমতা বজায় রাখা কোনো সাধারণ মানুষের শরীরের পক্ষেই সম্ভব নয়। আর তাই সেনা যাতে কার্যক্ষমতা না হারায় এবং ধকল সহজে সহ্য করার উপযোগী হয়ে উঠতে পারে সেই জন্য নানা ধরনের স্টেরয়েড এবং উদ্দীপক ওষুধ নিয়েও গোপনে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালাচ্ছে বলে দাবি পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের।  যদিও রাশিয়ার পুতিন প্রশাসন পেন্টাগনের এরকম অভিযোগের বিরুদ্ধে কখনোই মুখ না খোলায় গোটা বিষয়ের সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়। 

তবে এ কথা সত্যি যে বাস্তবে কোন দেশ যদি সুপার হিউম্যান বা বায়নিক সোলজার তৈরিতে সক্ষম হয় তবে যুদ্ধের গতিবিধি পুরোটাই পাল্টে দিতে সক্ষম হবে তারা। এই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সফল হলে একজন বায়নিক সোলজার যুদ্ধক্ষেত্রে যে কোন পরিস্থিতি অনায়াসে সহ্য করতে পারবে, দেশের মধ্যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে এবং শত্রু নিকাশ করা তার কাছে হয়ে উঠবে খুবই সহজ। অপরদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য যাতে কেন্দ্রীয় কমান্ড বাধাহীনভাবে মানতে বাধ্য হয় সেইজন্য মাইক্রো অ্যাডভান্সড চিপ সুপার হিউম্যান এর মস্তিষ্কে বসানোর পদ্ধতি নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছে বেশ কিছু দেশ। এছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে প্রায়ই আহত হন সৈন্যরা এই রকম পরিস্থিতিতে কোনো রকম চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়াই সৈন্য যাতে নিজেই নিজের ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারে সেই লক্ষ্যে নানারকম আণুবীক্ষণিক প্রযুক্তি ব্যবস্থায় প্রয়োগ করার চেষ্টা চলছে। 

এ প্রযুক্তির মাধ্যমে সেনার দেহে বসিয়ে দেওয়া হবে কাঙ্ক্ষিত চিপসসহ অতিক্ষুদ্র যান্ত্রিক ডিভাইস এবং সেনার দেহকে সুপার হিউম্যানের আকার দিতে অর্থাৎ আরো শক্তিশালী করার জন্য দেহে বসানো হবে বহির্কঙ্কাল বা এক্সো-এস্কেলেটন সিস্টেম। তাছাড়া বায়নিক সোলজারের হাত, পা, বাহুতে যোগ করা হবে অত্যন্ত শক্তিশালী যান্ত্রিক হাত, পা কিংবা বাহুসহ আরো নানা ধরণের বহির্কাঠামো বা বাড়তি দেহ কাঠামো। এর ফলে বায়োনিক সেনা চাইলেই যুদ্ধক্ষেত্রে তার হাত, পা বা ব্যাবহার করে  সহজেই তার শত্রু পক্ষকে পরাস্ত করতে সক্ষম হবে। একই সাথে একজন বায়নিক সেনা যাতে তার বাড়তি দেহ কাঠামোকে ইচ্ছেমতো এবং প্রয়োজন মাফিক নাড়াতে বা ব্যবহার করতে পারেন তারও ব্যবস্থা করবে এই আণুবীক্ষণিক এবং উচ্চ প্রযুক্তির ডিভাইস।

আসলে হলিউডের সিনেমায় এক্স-ম্যান বা আয়রন ম্যানের মতো যে সমস্ত শক্তিশালী সুপার হিউম্যানদের দেখে আমরা অভ্যস্ত অদূর ভবিষ্যতে গবেষণার মাধ্যমে ঠিক সেই রকমই হিউম্যান সেনা তৈরি করা হয়তো সত্যিই সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে গোটা বিষয়টিকে কল্পবিজ্ঞান বলে মনে হলেও ভবিষ্যতে হয়তো সত্যিই একদিন সম্ভব হবে রাশিয়ান সুপারহিউম্যান তৈরি করা।

অপরদিকে রাশিয়ার ওপর কড়া নজরদারি চালালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেও কিন্তু এ বিষয়ে পিছিয়ে নেই। গোপন গবেষণাগারে মার্কিন সরকারের ডিফেন্স অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি বা ‘ডারপা’ এই সুপার হিউম্যান সোলজার তৈরির গবেষণার বৈধতা পেতে সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে। আর ঠিক এই কারণেই কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আমেরিকা নিজের দিক থেকে নজর ঘোরাতে ইচ্ছা করেই রাশিয়ানদের সুপার হিউম্যান তৈরির গবেষণার বিষয়টিকে এতো ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। 

যুদ্ধক্ষেত্রে সুপার হিউম্যান সোলজার ব্যবহারের গোপন গবেষণায় একেবারেই পিছিয়ে নেই ব্রিটেনও। আগামী 30 বছরের মধ্যে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যে যুদ্ধক্ষেত্রে অতিমানবিক ক্ষমতাসম্পন্ন সুপার হিউম্যান বায়োনিক সোলজারের সক্ষমতা যাচাইয়ের চেষ্টা করবে সেটাও ২০১৫-১৬ সালে ফাঁস হওয়া এক গোপন নথীতে জানা গেছিলো । অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেইলি মেইলে ২০১৭ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আমেরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তার অভিযোগ ছিল মানবদেহের জেনেটিক কোড পরিবর্তনের এক ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু ডিফেন্স ডেভেলপমেন্ট ফার্ম। 

পিছিয়ে নেই চীনও। কোনো রকম লুকোছাপা না করেই ২০২০ সালের শেষের দিকে চীন ঘোষণা করেছে যে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন সেনা বা সুপার সোলজার বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা। চীনের এই ঘোষণার পরে ফ্রান্সও তাদের সৈন্যদের শারীরিক ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। এসব সেনারা ক্লান্ত না হয়েই ঘন্টার পর ঘন্টা দ্রুত দৌড়াতে পারবে। পাবে না খিদেও। আবার সর্বক্ষণ শত্রুপক্ষের সাথে লড়াই ও করতে পারবে। ইতিমধ্যেই এই ধরনের এক প্রজাতি ‘হোমো রোবোকোপাস’ এর নাম ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেরিয়েছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *