ডিফেন্স

স্পেশাল আর্মড ফোর্স, কাউন্টার টেররিস্ট গ্রুপ, এসটিএফ ও অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াডকে ট্রেনিং দেন। কে এই শিফুজি?

নিজস্ব সংবাদদাতা:শিফুজি! এনার নাম শুনেছেন অনেকেই আবার অনেকের কাছেই নামটা বেশ অজানা। তবে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর মূল কান্ডারী কিন্তু ইনিই। সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে মুম্বাই পুলিশ কমান্ডো বাহিনী পুরোটাই তার নিজের হাতে গড়া। লাল চিনা সেনাবাহিনী হোক বা পাক জঙ্গি, ভারতের শত্রুদের কাছে এখন ত্রাসের একটিই নাম- শাওলিন থেকে শত্রুবশের কৌশল শিখে আসা এই শিফুজি।

বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে অন্যতম ভারতীয় সেনা। প্রতিনিয়ত প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তারা সীমান্ত আগলে রেখেছে বলেই পাশে শত্রুদেশ থাকা সত্ত্বেও সে আঁচ এসে লাগে না আমাদের গায়ে। বিশ্বমানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ভারতীয় সেনাকে প্রায়ই জঙ্গিদের মুখোমুখি হতে হয়। আর এই সেনাবাহিনীকে এতটা শক্তিশালী করে তোলার পেছনে রয়েছে শিপুজির অনেকটাই অবদান। মার্শালার্ট, কুং ফু থেকে শুরু করে সবেতেই অসামান্য প্রতিভা রয়েছে তার। দিনের-পর-দিন প্রতিভাশীল এই মানুষটির কাছেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছে ভারতীয় সেনার জওয়ানরা।

‘মিশন প্রহার’, ‘মিশন প্রচণ্ড ভারত’, ‘মিশন মেরি মিট্টি’ এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে তার হাত ধরে। যোগা শিরোমণি শিবশঙ্করজী (দাদু) ও চিনের শাওলিন টেম্পলের গ্র্যান্ড মাস্টার শি দে ইয়াং-এর যোগ্য শিষ্য শিফুজি আধ্যাত্মিকতার পাঠ নিয়েছেন বিখ্যাত নাগা মহালাল বাবুজি-র কাছ থেকে। 

কিন্তু, শিফুজির আসল পরিচয়ই বা কি?

সেই ২০০৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতের সেরা কমান্ডো ট্রেনার হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে। মধ্যপ্রদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শিফুজী ট্রেনিং দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর হক কমান্ডো, স্পেশাল আর্মড ফোর্স, কাউন্টার টেররিস্ট গ্রুপ, এসটিএফ ও অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াডকে। শত্রুকে নিকেশ করার জন্য Shatru Vinashak Killing Skills, Extreme Urban warfare & Military Martial Arts, Special modified Close Quarter Battle & Special Commandos VIP Protection skills of the Elite Special Forces সহ বেশ কিছু নিত্য নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন তিনি। 26/11 মুম্বাই জঙ্গি হামলার পর থেকেই তিনি রয়েছেন স্পেশাল অ্যান্টি টেরর ট্যাকটিকস ইনস্ট্রাক্টরের পদে। শিফুজী একদিকে যেমন মুম্বই QRT কমান্ডোর মেন্টর তেমনই অপরদিকে  সেনাবাহিনীর ফাইটিং রেজিমেন্টের স্পেশাল কমান্ডো ট্রেনারের দায়িত্ব ও বর্তেছে তাঁর ওপরেই। শোনা যাচ্ছে তাঁর উদ্যোগে গড়ে ওঠা নিতুন ‘মিশন প্রহার’ এ অন্তত ১ কোটি মহিলাকে আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হবে। এছাড়া ‘মিশন মিট্টি’, ‘মিশন ভগৎ সিং’, ‘মিশন প্রচণ্ড ভারত’ সবই তার মস্তিষ্কপ্রুত। এমনকি সিনেমায় স্টান্ট, অ্যাকশনের ট্রেনিং দেওয়া থেকে শুরু করে মিস্টার ও মিস ইন্ডিয়াকে ট্রেন করা অব্দি সবেতেই দক্ষ তিনি। 

এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক শিফুজিকে নিয়ে কিছু অজানা কথা। শিপুজি নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম দীপক দুবে। তাঁর শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনের হাতে খড়ি বাবা-মায়ের কাছে ছোটবেলা থেকেই। অল্প বয়স থেকেই মার্শাল আর্টস যোগা প্রভৃতিতে তার ছিল অগাধ আগ্রহ। তাঁর প্রথম শিক্ষাগুরু ছিলেন খ্যাতনামা গোর্খা ফাইটার সেনসাই খেম বহাদুর গুরুং। প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে ওঠার আগেই নিজ প্রতিভা ও অধ্যবসায়য়ে তিনি হয়ে ওঠেন যোগাগুরু। শিফুজীর দুই শিষ্য যেমন মিস্টার ও মিস ইন্ডিয়া খেতাব জিতেছেন তেমনি একের পর এক যোগাসন সম্রাট, ভারত আর্টিস্টিক যোগা সম্রাট, ভারত যোগাসন সম্রাজ্ঞিনী সম্মানও এসেছে তাঁর শিষ্যদের ঝুলিতে। কুংফু হোক কিংবা মার্শালার্ট প্রত্যেকটা ছিল তার নখদর্পণে। সামনে শত্রু অতর্কিত হামলা চালালে তাকে কি করে নিকেশ করতে হয় বা জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা জঙ্গির সাথে কিভাবে লড়াই চালাতে হয় সবটাই নিখুঁতভাবে সৈন্যদের শিখিয়ে চলেছেন তিনি। ভগৎ সিং-এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ এই মহাগুরু মনে প্রাণে বিপ্লবে বিশ্বাসী। জানলে অবাক হবেন ভারতে মঙ্ক ট্র্যাডিশনের পথ প্রদর্শকও কিন্তু তিনি। হঠ যোগার পর বিশ্বের সবথেকে পুরনো মার্শালার্ট কেরলের কাল্লারিপায়াতে শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি।

 ভারতের যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে মিশন নির্ভয়ও তাঁরই উদ্যোগে চালু করা হয়।  শিফুজি তাঁর নিজস্ব ট্রেনিং-এর মাধ্যমে যুব সমাজের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তুলতে চান। তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত ‘প্রচণ্ড ভারত’ গড়তে  জওয়ানদের মানসিক ও শারীরিক ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তাদের মধ্যে জাগিয়ে তোলেন দেশপ্রীতি।  ‘প্রচণ্ড ভারত’ কে তাঁর স্বপ্নের এক প্রজেক্ট বলা চলে। যেখানে তিনি প্রত্যেকটা মানুষের সিলেবাসে দেখতে চান কঠোর সেনার ট্রেনিং।

নিজেকে ‘লার্নার অফ রেভোলিউশন’ বলতে পছন্দ করা শিফুজি দেখতে চান আত্মরক্ষা এবং আত্মনির্ভরতায় সক্ষম এমন এক ভারতবর্ষ যেখানে মহিলারা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারবেন। সব লড়াইয়ে যেমন ভারতীয় জওয়ানদের এগিয়ে চলার শক্তি যোগান তিনি তেমনি সেনাবাহিনীকে নিয়ে ভারতবাসীর এতো গর্ব ও অহংকারের পেছনেও রয়েছেন তিনি। শিফুজীর দৃঢ় বিশ্বাস একদিন ঠিক সফল হবে তাঁর স্বপ্ন, গড়ে উঠবে ‘প্রচণ্ড ভারত’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *