ডিফেন্স

নৌবাহিনীর “কো-অপরেটিভ এনগজমেন্ট” ড্রিল। চীণের থেকেও বেশি ভয়ের কারণ হতে চলেছে পাকিস্তানের কাছে

নিজস্ব সংবাদদাতা:ভবিষ্যতের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সৈন্যকে প্রস্তুত করার জন্য ভারত সরকার নিত্যনতুন অস্ত্রশস্ত্রে আমদানির সাথে জোর দিয়েছে ট্রেনিংয়ে। আর এরই অংশ হিসাবে কয়েকদিন আগে ভারতীয় নৌবাহিনী একটি এ্যন্টি এয়ার ড্রিল চালায় যাতে উৎক্ষেপণ করা হয় একাধিক বারাক-৮ সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল। পূর্বে যদিও বহুবার মিসাইল টেস্টিং করা হয়েছে তবে, এই ড্রিলটি ছিল অন্যান্যবারের তুলনায় বেশ খানিকটা আলাদা। হালফিলে ট্যাকটিক্যাল ব্যটেল ফিল্ডে ভারতীয় নৌ বাহিনীকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে “কো-অপরেটিভ এনগজমেন্ট” নামক এই ড্রিল। প্রশ্ন জাগতে পারে ঠিক কি এই “কো-অপরেটিভ এনগজমেন্ট”?

ধরা যাক ভারত ও চীনের নৌবাহিনী রণক্ষেত্রে একে অপরের মুখোমুখি এবং চীনের কাছে রয়েছে দুটি টাইপ ৫২ডি ডেস্ট্রয়ার ও ভারতের  রয়েছে দুটি কোলকাতা ক্লাস ডেস্ট্রয়ার। এবার আকাশ পথে বিমান বাহিনীর যুদ্ধে রেডার ক্রস সিগনেচার ও ইলেকট্রনিক ইন্টেলিজেন্স যেমন সবচেয়ে বড় অসুবিধার সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি ভারতের নৌবাহিনীর যুদ্ধে মূল অসুবিধা হলো সিগনেচার ইন্টেলিজেন্সকে নিয়ে কারণ পৃথিবী গোল হওয়ায় সমুদ্রে ভাসমান কোন জলযান 22 কিমির বাইরে গেলে তাকে সরাসরি দূর থেকে রেডার দ্বারা ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে ওঠে। তাই জাহাজের রেডার ক্রস সিগনেচার বেশি হলেও যুদ্ধের সময় যেকোনো জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্যসিভ সিগনাল ইন্টেলিজেন্সই সব থেকে বেশি কার্যকরী। জাহাজের রেডার ওয়েভের উৎসকে সহজেই খুঁজে বের করতে পারে এটি।  প্রযুক্তির এই ক্ষমতার জন্যই একে বলা হয়  ELINT বা Electronic intelligence। 

একই অঞ্চলে একাধিক জাহাজ একসাথে রেডার অন করে রাখলে রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে সহজেই ওই অঞ্চলে উপস্থিত সমস্ত জাহাজের অবস্থান জানতে পারা যায়। কিন্তু এখানে অসুবিধা হলো, দুটি কোলকাতা ক্লাস ডেস্ট্রয়ারের রেডার একই সাথে যাত্রা শুরু করলে তাতে দুটো রেডারই অন রাখলে ফুয়েলের অপচয় যেমন বাড়ে তেমনি শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় অনেকটা। আর ঠিক এই চিন্তা থেকেই তৈরি হয়েছে Cooperative Engagement। এক্ষেত্রে  একসাথে একাধিক জাহাজ সমুদ্রে যাত্রা করলে সমস্ত জাহাজের রেডার অন না করে চালু রাখা হয় শুধুমাত্র একটি জাহাজের রেডার। ফলে শত্রুপক্ষ সহজে বাকি জাহাজের অবস্থান জানতে পারে না।

এবার আবার ফেরা যাক পুরনো কথায়। রণক্ষেত্রে ধরুন চিন যদি ভারতের কোন জাহাজ লক্ষ্য করে তাদের Yj-18 ক্রুজ মিসাইল লঞ্চ করে সেক্ষেত্রে, আইএনএস কোলকাতা ডেস্ট্রয়ারের MF-STAR তৎক্ষণাৎ তা শনাক্ত করে ফেলবে এবং রেডার অফ থাকা কলকাতা ক্লাস ডেস্ট্রয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাটা লিংকের মাধ্যমে সমস্ত তথ্য আইএনএস চেন্নাইয়ের কাছে পাঠাবে। এরকম পরিস্থিতিতে আইএনএস চেন্নাই কোলকাতার রেডার গাইডন্সের সাথে Cooperative Engagement লঞ্চ করবে। এতে দুটো জাহাজ আলাদা আলাদা জায়গায় অবস্থিত হয়েও একটি জাহাজের মতোই কাজ করবে ফলে চিন বুঝতে পারবেনা ভারতের ফ্লিটে ঠিক কটা জাহাজ রয়েছে। আর কোনক্রমে বুঝতে পেরে গেলেও সেন্সর কেবলমাত্র একটি জাহাজকেই চিহ্নিত করতে পারবে।

এর আরেকটি দিক হল এর ফলে দুটি স্থানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা যায়। যার ফলে যে কোনো দেশের আর্লি ওয়ার্নিং কেপেবিলিটি বৃদ্ধি পায়। ধরা যাক, মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত ভারতের এ্যমিউনিশান স্টক লক্ষ্য করে চীন একটি ৩০০০কিমি রেঞ্জের CJ-10 ক্রুজ মিসাইল লঞ্চ করলো। এক্ষেত্রে তিব্বত থেকে লঞ্চ করা CJ-10 ক্রুজ মিসাইলটি সবার আগে নেত্রা এ্যওয়াক্সের বা ফ্যলকন এর নজরে পড়বে এবং মাইক্রো সেকেন্ডের মধ্যে সেটি পৌঁছে যাবে এস-৪০০ বা বারাক-৮ ব্যটারির কাছে । এস-৪০০ এর আর্লি ওয়ার্নিং রেডার ১০০০কিমি রেঞ্জের ট্রাম্বস্টোনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হয়তো লো ফ্লাই করে CJ-10 নিজেকে বাঁচাতে পারবে কিন্তু এ্যওয়াক্সের মতো বিমান যেটি ওপর থেকে ভার্টিকালি CJ-10 এর ওপর নজর রাখবে তার চোখ ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে ট্রম্বস্টোন অথবা গ্রেভস্টোন ফায়ার কন্ট্রোল রেডারের চোখে না এসেও এস-৪০০ এর মিসাইল সিস্টেম ফ্যলকন অথবা নেত্রার গাইডেন্সে খুব সহজেই CJ-10 ক্রুজ মিসাইলের মোকাবিলা করতে পারবে।

এস-৪০০ ভারতের IACCS network এর সাথে যুক্ত হলে Cooperative Engagement চীণের থেকেও বেশি ভয়ের কারণ হতে চলেছে পাকিস্তানের কাছে। কারণ জানতে হলে বুঝতে হবে, প্যসিভ সেন্সারের মাধ্যমে এস-৪০০ এর অবস্থান জানা খুবই সহজ ব্যাপার আর ঠিক তাই ই ভারত কখনোই বর্ডার এর কাছ থেকে এস-৪০০ কে সরাবে না পাকিস্তানের আর্টিলারি স্ট্রাইক থেকে বাঁচার জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র যদি রেডার অন থাকে তবেই তা সম্ভব কারণ লঞ্চারের রেডার ওয়েভ না থাকায় সেন্সর শুধু রেডারেরই অবস্থান জানাতে সক্ষম, লঞ্চারের নয়।

ভারত যদি কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও গুজরাট সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় ৪০০কিমি রেঞ্জের 40N6 মিসাইলের লঞ্চার রেডার ছাড়া  স্থাপন করে রাখে তবে, পাকিস্তান জানতে অব্দি পারবে না যে বর্ডারে এস-৪০০ এর সব থেকে ভয়ানক মিসাইল রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সব থেকে বড় অসুবিধা হলো পাকিস্তানের ভূখণ্ড পূর্ব থেকে পশ্চিমে মাত্র ১৮০-১০০০কিমি প্রর্যন্ত বিস্তৃত এদিকে নিজের  ফাইটার ফ্লিটকে ভারতের বিরুদ্ধে এ্যওয়াক্স সাপোর্ট দিতে গেলে বর্ডার থেকে অন্তত ১৫০কিমি দূরে রাখতে হবে। ফলে এ্যওয়াক্সটি ভারতের অভ্যন্তরে নিজের ফ্লিটকে সাপোর্ট দিতে পারবে মাত্র ১৫০কিমি প্রর্যন্ত।

এবার ধরা যাক ২৭ ফেব্রুয়ারির প্রাক্কালে  ভারত পাকিস্তানের বর্ডারে উত্তেজনা পৌঁছেছে চরমে। আমরা সবাই জানি পাকিস্তান এয়ারস্ট্রাইক করবে। একটি এ্যওয়াক্স অপর এ্যওয়াক্সকে ডিটেক্ট করছে। হঠাৎ এমন সময় পাক ফ্লিট যদি ভারতের দিকে ধেয়ে আসে তখন ভারতীয় বিমানবাহিনী একদিকে যেমন নিজের ডিফেন্সিভ মুভ নেবে তেমন অপর দিকে নেত্রে এ্যওয়াক্স মূল টার্গেট হবে পাকিস্তানের এ্যওয়াক্স Erieye। পাকিস্তান তখনও বুঝতে পারবে না যে ঠিক কি ঘটছে ফলে,Erieye তখনও নিজের জেএফ-১৭ ও এফ-১৬ কে ভারতের সু-৩০এমকেআই ও মিগ-২১ এর বিরুদ্ধে সাপোর্ট প্রদান করতে ব্যস্ত থাকবে। আর পাকিস্তানের ফাইটার ফ্লিট যেই গুজরাটের সীমান্তে পৌঁছাবে ওমনি সঙ্গে সঙ্গে নেত্রা এ্যওয়াক্স Erieye এর টার্গেট ইনফর্মেশান 40N6 এর লঞ্চারে শেয়ার করবে। ঠিক কি হলো বুঝে ওঠার আগেই পাকিস্তানের 40N6 Erieye এ্যওয়াক্সক নক আউট হয়ে যাওয়ায় একদিকে পাকিস্তানের ফাইটার ফ্লিট দিশেহারা হয়ে কিছুক্ষনের জন্য হলেও বাধ্য হবে নিজের ফাইটারের রেডার অন করত হবে। আর ঠিক এই ভুলটাই পাকিস্তানের সব পরিকল্পনা বানচাল করে দেবে। ভারতের প্রতিটি বিমান সাথে সাথে জানতে পেরে যাবে যে পাকিস্তানের ঠিক কটা বিমান ভারতে ঢুকেছে। রেডার কভারেজ কম থাকায় পাক ফ্লিটের বিভিআর এনগেজমেন্টের পসিবিলিটিও তখন তলানিতে নেমে যাবে। অপরদিকে এ্যওয়াক্স এর সাপোর্ট তখন ও থাকায় ভারত ফ্লিট এ্যগ্রেসিভ ম্যনুয়েভার করে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যেতে পারবে পাক ফ্লিটের কাছে। আর বাকি যেটুকু কাজ বেঁচে রইলো তা সামলানোর জন্য এর-৭৭ এবং আর-২৭ ই যথেষ্ট। Cooperative Engagement এর ফলে ১০০কিমি রেঞ্জের মধ্যে যেকোনো টার্গেটই ভারতের কাছে হয়ে যাবে জল ভাতের মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *