আমেরিকা থেকে শুরু করে চীন। কোন দেশের হাতে কতো পারমানবিক বোমা?
নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্তমানে বিশ্বের একাধিক দেশে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। আর এর মধ্যেই আতঙ্ক বাড়াচ্ছে পারমানবিক বোমা। বিশেষজ্ঞদের মতে অতীতে জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকির মত বর্তমানে পুনরায় এই অস্ত্রের ব্যাবহার হলে ধ্বংসের পরিমাণ হবে আরো বহুল। বেশ কয়েক বছর ধরেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তাতে পারমানিবক বোমা ব্যবহৃত হওয়ার কথা কানে ভাসছে। সেই ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ বারের মত ব্যবহৃত হয় পারমানবিক বোমা। কিন্তু তার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উঠে পরে লেগেছে এই ভয়ানক বোমা তৈরি করতে। বর্তমানে বিশ্বের একাধিক দেশ পারমাণবিক শক্তিধর। ভয়ের কথা হলো সরাসরি স্বীকার না করলেও বেশ কিছু দেশ বাস্তবে সরকারি নথিতে উল্লেখিত পারমাণবিক বোমার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় অস্ত্র মজুদ রেখেছে। বর্তমানে বিশ্বের নটি পরমাণু শক্তিধর দেশের কাছে রয়েছে আনুমানিক ১৬,৩০০টি পারমানিক বোমা। বেসরকারি হিসেব পরিষ্কার না হলেও আসুন আজ জেনে নেওয়া যাক কোন দেশের কাছে সরকারি ভাবে কতগুলি পারমানবিক বোমা মজুত রয়েছে।
রাশিয়া : পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো কথা উঠলেই সব চেয়ে প্রথমে নাম উঠে আসে রাশিয়ার। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে বর্তমানে বিশ্বের সব চেয়ে বেশি পারমাণবিক বোমা রয়েছে রাশিয়াতেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে, ১৯৪৯ সালে প্রথম পারমাণবিক গবেষণা শুরু হয় সেখানে। এখন আনুমানিক সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে সেখানে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: রাশিয়ার পরেই যদি সবচেয়ে শক্তিধর পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত কোনো দেশ হয়ে থাকে, তবে তা নির্দ্বিধায় আমেরিকা। আমেরিকাই এমন একটি দেশ যে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়েছিল এবং তা যুদ্ধে ব্যাবহার করেছিল। দেশটির কাছে বর্তমানে আনুমানিক সাত হাজার পারমাণবিক বোমা রয়েছে।
ফ্রান্স- পারমাণবিক শক্তিতে বিশেষ পিছিয়ে নেই ইউরোপীয় রাষ্ট্র ফ্রান্স ও। এই দেশটির কাছে রয়েছে প্রায় ৩০০ র মত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড। যার অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়েও ফ্রান্সের অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
চিন- চিন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী দেশগুলির লিস্টে নাম লিখিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এই চিন আবার এক পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন দেশ ও বটে। সরকারি ভাবে কিছু জানা না গেলেও সূত্রের খবর আড়াইশো’র মতো পারমাণবিক বোমা আছে চিনের কাছে৷ রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও মাথায় রাখা দরকার দ্রুত গতিতে বাড়ছে এই সংখ্যা। এমনকি, স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে এই বোমা ছোঁড়ার প্রযুক্তিও মজুদ রয়েছে চিনের কাছে।
ব্রিটেন-বিশ্বের পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে অন্যতম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ব্রিটেন। ১৯৫২ সালে প্রথম বারের মতো রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসাবে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ব্রিটেন। বর্তমানে এই দেশের কাছে মজুদ আছে দুইশো’র বেশি পারমাণবিক বোমা।
ভারত: পারমাণবিক শক্তিতে বিশেষ পিছিয়ে নেই ভারতও। ভারতে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও অল্প সময়ের মধ্যেই ভারত নব্বইটিরও বেশি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। অবশ্য ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে নিজে থেকে কোনো দেশকে কখনো পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হবে না, সেই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নেই এমন কোন দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত হবে না।
পাকিস্তান- পাকিস্তানের কাছে আদৌ পারমাণবিক বোমা আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও পাকিস্তানের দাবি প্রায় শতাধিক পারমানবিক বোমা মজুদ রয়েছে তাদের। পাকিস্তান পূর্বে তিনবার ভারতের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু কোন বারে পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করেনি। তবে অনেকেরই আশঙ্কা পাকিস্তানে সত্যিই যদি পারমাণবিক বোমা মজুদ থেকে থাকে তবে ভবিষ্যতে ভারত পাকিস্তানের লড়াই পারমাণবিক যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।
ইসরায়েল- ইজরায়েলে পারমানবিক বোমা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা। ইজরায়েলকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসাবে গণ্য করা হলেও এই দেশ নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যথেষ্ট গোপনীয়তা বজায় রাখে। জনসমক্ষে কোনো তথ্য প্রকাশ না করলেও অনুমান করা হয় এই দেশটির কাছে আনুমানিক 80 টির মত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আছে।
উত্তর কোরিয়া-উত্তর কোরিয়ার স্বৈরাচারী শাসক সাম্প্রতিককালে বেশ কয়েকবার আমেরিকার বিরুদ্ধে পারমানবিক বোমা নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন ঠিকই তবে এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের সমস্ত পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তলাতে রয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। মনে করা হয় দশটি পারমানবিক বোমা রয়েছে এই দেশে। কিন্তু তাও এত উন্নত প্রযুক্তির বোমা তৈরীর ক্ষমতা সত্যিই উত্তর কোরিয়ার রয়েছে কিনা তা নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা।