মেজর রাজেশ। শরীরে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানের ঘাঁটি কেড়ে নেওয়া এক নায়কের অজানা অধ্যায়
নিজস্ব সংবাদদাতা:কার্গিল। শব্দটা এখনও রক্তাক্ষরে গেঁথে রয়েছে ভারতবাসীর মনে। তিন মাস ধরে বরফ ঢাকা পাহাড়ে চলেছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হাড় হিম করা এই তীব্র যুদ্ধ। কারগিলের বরফ প্রত্যেকদিন রাঙা হয়ে উঠেছি বীর সেনার রক্তে। তবে স্থলপথ ও আকাশ পথে ক্রমাগত অভিযানের মাধ্যমে ভারত শেষ পর্যন্ত শত্রুদের হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। বীর শহীদদের সেই ঋণ আজও মনে রেখেছে প্রত্যেকটা ভারতবাসী।
কিন্তু ঠিক কি হয়েছিল ওই ৩০ মে যা ভারতের জয় সুনিশ্চিত করে তুলেছিল?
ভারতীয় বায়ুসেনা শত্রুদের অতর্কিত আক্রমণ চালাতে আকাশ জুড়ে নানা অভিযান চালাচ্ছিল। এরই মধ্যে 30 শে মে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ভারতীয় বায়ুসেনার Mirage 2000 যুদ্ধবিমান যেমন একদিকে বোমা বর্ষণ করে তেমনি অপরদিকে ভারতীয় সেনা স্থলপথেও ক্রমশ ঘিরে ফেলছিল পাকিস্তানী বাহিনীকে। সেনাবাহিনী প্যাট্রলিং শুরু করে দিয়েছিল গোটা কার্গিল জুড়ে।
কারগিলের যুদ্ধে টোলোলিং হয়ে উঠেছিল পাক সেনার এক সহজ ঘাঁটি। পাকিস্তান পুরো মাত্রাই সুবিধা নিচ্ছিলো এই ঘাঁটির। তাই যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই টোলোলিং থেকে শত্রুদের হঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় মেজর রাজেশ সিং অধিকারীকে। নিজের জীবনের ওপর বাজি রেখে সারা শরীরে বুলেটের ক্ষত নিয়েও থেমে থাকেননি তিনি। প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে ভারতের নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি ওই শত্রুঘাঁটি। শুধু মাত্র তার মনের জোর ও অপরিসীম সাহসের জেরেই পয়েন্ট ৪৫৯০ ক্যাপচার করা সহজ হয় ভারতীয় সেনার পক্ষে। যুদ্ধশেষে মরণোত্তর মহাবীর চক্রে সম্মানিত করা হয় মেজর রাজেশ সিং অধিকারীকে।
অপরদিকে অত্যন্ত সন্তর্পণে বাটালিক সেক্টরের দিকে লাদাখ স্কাউটকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মেজর সোনম ওয়াংচুক। শত্রুদের অবস্থান চিহ্নিত করে প্রস্তুতির বিন্দুমাত্র সময় না দিয়ে অতর্কিতে তাদের ঘিরে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল ভারতীয় সেনা। মেজর ওয়াংচুকের গুলিতে সেদিন নিহত হন দুই পাক সেনা। তার এই অসীম সাহসিকতার নিদর্শন দেখে পরবর্তীকালে তাকে মহাবীর চক্রে সম্মানিত করা হয়।
কারগিলের যুদ্ধ জয়ের প্রসঙ্গ উঠলে আরো যে দুজনের নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় তারা হলেন সুবেদার ছেরিং স্তবদাং ও হাবিলদার রিগজিন সেওয়াং। সেদিন বরফের খাড়া দেওয়াল ধরে ওঠার চেষ্টা করছিল শত্রুপক্ষ। কিন্তু, বাটালিকের এক অত্যন্ত দুর্গম অংশে পৌঁছে সুবেদার ছেরিং স্তবদাং ও হাবিলদার রিগজিন সেওয়াং পাহাড়ে উঠে, সেখান থেকে শত্রুদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করেন। তাদের বীরত্বের কারণেই পাকিস্তানী সেনা আর ওই অংশ দখল করতে সক্ষম হয়নি। যুদ্ধ শেষে দু’জনকেই বীর চক্রে সম্মানিত করা হয়।