ভারতবর্ষের নৌবাহিনীর ফ্লিটকে লিড করতে কত গুলি ডেস্ট্রয়ার সার্ভিসে রাখার চিন্তা করছে নৌসেনা?
নিউজ ডেস্কঃ ভারতের নৌবাহিনীর জন্য এই দশক স্মরণীয় হতে চলেছে। কারন একাধিক যুদ্ধজাহাজ থেকে শুরু করে বিরাট পরিমানে সাবমেরিন নৌসেনার সার্ভিসে আসতে চলেছে। সত্যি কথা বলতে কি বহু বছর ধরে ভারতের নৌবাহিনীর কাছে এত যুদ্ধাস্ত্র আসলেও বিরাট এক সমস্যায় ভুগছে ভারতের নৌবাহিনী। আসলে বহু বছর ধরে নৌবাহিনীর উপর নজর দেওয়া হয়নি, আর সেই কারনে বিশেষভাবে সমস্যায় পরেছে ভারতের নৌবাহিনী। আগামি দিনের কথা ভেবে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ খুব শীঘ্রই।
ভারতের নৌবাহিনীর কাছে বর্তমানে ৯ টি ডেস্ট্রয়ার থাকলেও ভবিষ্যতে তা ১০ টি হতে চলেছে। আসলে হিসাবে ১ টি ডেস্ট্রয়ার বাড়লেও ৪ টি নতুন ডেস্ট্রয়ার আসছে। কারন কিছু বছরের মধ্যে রাজপুত ক্লাসের ডেস্ট্রয়ার গুলিকে অবসর করিয়ে নেওয়া হতে চলেছে আর তার বদলে ৪ টি ভিশাখাপত্তনাম ক্লাস ডেস্ট্রয়ার যুক্ত হবে। অর্থাৎ বর্তমানে ভারতের ৯ টি যে ডেস্ট্রয়ার আছে তার মধ্যে ৩ টি দিল্লী ক্লাস, টি কলকাতা ক্লাস এবং ৩ টি রাজপুত ক্লাস। রাজপুত ক্লাস ডেস্ট্রয়ার গুলিকে অবসর করিয়ে নিলেও চিন্তা থেকে যায় দিল্লী ক্লাস ডেস্ট্রয়ার গুলিকে নিয়ে, কারন এগুলির পুরনো হওার পাশাপাশি খমতার দিক থেকে অচল। সবথেকে বড় কথা হল এই যে দিল্লী ক্লাস ডেস্ট্রয়ার গুলিকে আর ডেস্ট্রয়ার বলা যায় না। কারন, ডেস্ট্রয়ারের কাজ অফেন্সিভ যুদ্ধাস্ত্র হিসাবে গন্য হয় যদিও প্রথমে একে ডিফেন্সিভ যুদ্ধাস্ত্র হিসাবে গন্য করা হত। এর কাজ নেভাল ফ্লিটকে নেতৃত্ব দিয়ে শত্রুর অভ্যন্তরে অপরেশানের জন্য নিয়ে যাওয়া এবং রক্ষা করা। এই ডেস্ট্রয়ারের কাজ হবে শত্রুর আঘাত থেকে ফ্লিটকে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে তাড়াতাড়ি ম্যনুয়েভারেবেল হওয়ার সুযোগে শত্রুর বিরুদ্ধে আক্রমণ করে দেওয়া।
দিল্লী ক্লাসের ডেস্ট্রয়ার গুলিতে এখানেই বিরাট বড় সমস্যা রয়েছে, কারন যুদ্ধজাহাজ গুলিতে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হিসাবে লং রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স মিসাইলের ভিএলএস নেই। ৪৮টি শ্টিল-১ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল রয়েছে যার রেঞ্জ ৪০+কিমি। সেমি এক্টিভ হোমিং। ১০কিমি রেঞ্জের ভিএলএস ভিত্তিক বারাক-১ রয়েছে যা না থাকার সমান। শ্টিল-১ দুটি আর্ম লঞ্চারের মাধ্যমে ভিতর থেকে ম্যগাজিনে লোড থাকা মিসাইল তুলে লঞ্চ করে। ফলে শত্রুর হামলার জবাব দিতে প্রচুর সময় নিয়ে নেবে। আজকালকার দিনে শত্রুরা ভিএলএস এর ব্যবহার করছে তখন এই ধরনের লঞ্চিং সিস্টেম অতটা কার্যকারী নয়। এবার ভেবে দেখুন এই পুরনো যুদ্ধজাহাজটিকে কিভাবে এই পুরো ফ্লিটকে প্রতিরক্ষা দেবে?
পাশাপাশি এই যুদ্ধজাহাজটিতে এ্যন্টি শিপ মিসাইল হিসাবে ব্রহ্মস নেই। ১৩০কিমি রেঞ্জের Kh-35 সাবসনিক ক্রুজ মিসাইল রয়েছে। ফলে এর অফেন্সিভ স্ট্রাইকের ক্ষমতাও কম। এই যুদ্ধজাহাজ গুলিতে স্টেলথ ক্ষমতা না থাকার কারনে বাইরের দেশের জলসীমাতেঢুকতে পারবেনা। এর বহন ক্ষমতা ৬২০০ টন। যা শিবালিক শ্রেণীর সমান।
অতয়েব দিল্লী ক্লাসকে আর আধুনিক ডেস্ট্রয়ারের মধ্যে ফেলা যায় না। বেশ কিছু কারন ব্যখ্যা করলে দেখা যায় দিল্লী ক্লাস গুলিকে ডেস্ট্রয়ার থেকে নামিয়ে ফ্রিগেটে ক্লাসে রাখা উচিৎ এমনটাই মত সামরিক বিশেষজ্ঞদের। সেই জায়গায় অতিরিক্ত ৩টি ভিশাখাপত্তনাম অর্ডার করা যেতে পারে।
বর্তমানে ভারতের মাজাগাঁও ডক গুলি অর্ডারের অভাবে ভুগছে। নতুন তিনটি জাহাজ অর্ডার পেলে সেগুলি নিজের প্রোডাক্সান লাইন চালু রাখতে পারবে। পাশাপাশি নৌবাহিনী খুব তাড়াতাড়ি জাহাজ গুলি ডেলিভারি পাওয়া যাবে।
ফ্রিগেটের কাজ আর্মামেন্ট অনুযায়ী দিল্লীর জন্য উপযুক্ত। এটি নিজের অভ্যন্তরীণ জলসীমা প্রতিরক্ষা করার পাশাপাশি সিভিল জাহাজ গুলি রক্ষা করবে। ১৬টি এ্যন্টিশিপ মিসাইল পাকিস্তান নেভির বিরুদ্ধে অনেক বড় হুমকি হিসাবেও কাজ করবে।
বলা বাহুল্য যে এই যুদ্ধজাহাজ গুলি ১৯৯৭ সালে সার্ভিসে আসে, ইতিমধ্যে ২১ বছর বয়েস হয়েগেছে। সবথেকে বড় কথা হল এই যে চীনের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ গুলির সামনে এটি কোন কাজেই আসবে না। বর্তমানে যদি নতুন যুদ্ধজাহাজ সার্ভিসে আসে সেক্ষেত্রে ভারতবর্ষের ফ্লিটটি বেশ মজবুত হবে। পাশাপাশি এই ফ্লিটের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাবে। বর্তমানে নৌবাহিনীর ৭টি নিলগীরি আর ৪টি তলোয়ার ক্লাস অর্থাৎ ১১ টি স্টেলথ ফ্রিগেট আছে। ব্রহ্মপুত্র ক্লাসের জাহাজটি ২০০৫ সালে সার্ভিসে এসেছে অর্থাৎ এর সার্ভিস লাইফ এখনও অনেকটা বাকি অর্থাৎ তিনটি যুদ্ধজাহাজ অবসরে গেলে তার বদলে এই দিল্লী ক্লাসের ডেস্ট্রয়ার গুলিকে সার্ভিসে আনা যেতে পারে। এরকম হলে নৌবাহিনীর পাশাপাশি মাজাগাও ডকের ও বিরাটভাবে লাভ হবে।