ডিফেন্স

৪০ জন ডাকাতের বিরুদ্ধে লড়ে একটি মেয়েকে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন ভারতীয় সেনার এই জওয়ান। কোথায় হয়েছিল এই ঘটনা?

নিউজ ডেস্কঃ ভারতীয় সেনাবাহিনী যে সারা বিশ্বে সবথেকে প্রফেশানাল সেনাবাহিনী তা একাধিকবার বেশ কিছু রিপোর্টে বেড়িয়ে এসেছে। এবং সেনাবাহিনীর একাধিক রিপোর্টে বেশ কিছু তথ্য বেড়িয়ে এসেছে যা বেশ ভয়ংকর, অর্থাৎ ভারতের সেনাবাহিনী যেকোনও সময় বিপক্ষকে পরাস্ত করতে পারে তা আর নতুন করে কিছু বলার নেই।

ভারতীয় গোর্খার এমন এক জওয়ান, নাম শুনলেই গায়ের শিহরণ হবে। পুরোটা সিনেমার গল্পের মত মনে হতে পারে। কিন্তু এর একটুও বানানো না।

বিষ্ণুর শ্রেষ্ঠা। ভারতীয় সেনার গোর্খা রাইফেল্সের একজন জওয়ান। ২০১০ সাল আর বিষ্ণুর বয়স তখন ৩৫। স্বভাবতই তাঁকে অবসর গ্রহন করতে হয়। অবসর নেওয়ার পর তিনি তাঁর ব্যগ গুছিয়ে রওনা দিলেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। তাঁর বাবাও একজন সৈনিক ছিলেন।

মৌর্য এক্সপ্রেসের জানলার সিটে বসে বিষ্ণু বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রেনে করেই বাড়ি ফিরছিলেন, আর ট্রেন পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তখন আসছে। ইতিমধ্যে মধ্যরাতের দিকে ট্রেনটি হঠাৎ থেমে গেল এবং সশস্ত্র ডাকাত দল ট্রেনে প্রবেশ করা শুরু করল। আর তাদের মধ্যেই বেশ কিছু যাত্রী তাদের মধ্যে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল। সহযাত্রীদের ভয় দেখানো শুরু করলো তারা। যথারীতিছু রি, ক্লাব এবং তরোয়াল দিয়ে তাদেরকে লুটপাট করত  শুরু করে দিল। তার মধ্যে ৪০ জন ডাকাত হাতে ছুরি নিয়ে মারার ভয় দেখিয়ে মানিব্যাগ, গহনা, ল্যাপটপ থেকে হাত ঘড়িও লুঠ করতে থাকে।

যথারীতি ডাকাতদল বিষ্ণুর কাছে গিয়ে বিষ্ণুর সমস্ত টাকা এবং মূল্যবান জিনিস তাদের হাতে দেওয়ার কথা বলল,  তখন বিষ্ণু চিৎকার জানিয়ে দেন যে তিনি একজন প্রাক্তন সেনা কর্মী। শুনে ডাকাতরা একটু পিছু হটে অন্যদের লুঠ করতে শুরু করল আবার।

সবই ঠিকঠাক চলছিল তবে হটাত করে একটি মেয়ের চিৎকারের আওয়াজ শোনা গেল। ডাকাতরা একটা ১৮ বছরের মেয়েকে টেনে নিয়ে আসল মেয়েটিকে তারা গনধর্ষন করার উদ্দেশ্যে এবং সবার সামনে। এমনকি তার মেয়েটির বাবা মা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বিষ্ণুর তখন ব্যাগ থেকে বার করলো বিখ্যাত খুকড়ি। এক হুংকার দিল “ জয় মা কালি! আয়ো গোর্খালি” আর ঝাপিয়ে পরলো তাদের ওপর। আর শুরু করে দিল তার তাণ্ডব। বিষ্ণু একা আর ওদিকে ৪০জন ডাকাত। তারপর যে ধ্বংস লীলা চলেছিল তা হয়ত সেখানে থাকা কেউ কোনোদিন ভেবেও দেখেনি।

বিষ্ণু প্রথমে শুরু করল তাকে দিয়ে যে মেয়েটিকে ধরে নিয়ে এসেছিল। তারপর তাকে মনব ঢাল বানিয়ে কোপাতে শুরু করল একের পর এক ডাকাতকে। ৩জনকে হত্যা আর গুরুতর আহত হল ৮জন। বাকিরা নিজেদের প্রান হাতে নিয়ে সেই স্থান ছেড়ে চলে গিয়েছিল। বিষ্ণু বাঁম হাত বাজে ভাবে চোট লেগেছিল। লড়াই চলেছিল প্রায় ২০মিনিট পর্যন্ত। পুরো ঘটনা জানার পরেই পুলিশ পরবর্তী স্টেশানে পৌছায়। ট্রেন স্টেশানে পৌছানো পর্যন্ত পুরো যাত্রীদের সুরক্ষার ভার নিয়েছিল বিষ্ণু। স্টেশানে পৌছানোর পর আহত বিষ্ণুকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তার ক্ষত এতটাই ছিল যে বিষ্ণুর ২মাস লেগেছিল তাক সম্পূর্ন সুস্থ হতে। পুলিশ ডাকাতদের গ্রেপ্তার করে নগদ ৪,০০,০০০ টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র, সোনার নেকলেস, মোবাইল, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করে।

এই কারনে বিষ্ণুকে প্রথমে মেয়েটির বাবা প্রচুর টাকা দিতে চেয়েছিল খুশি হয়ে। কিন্তু তিনি তা স্বীকার করেনি এবং তিনি জানান যে  “মানুষ হিসাবে এটা আমার কর্তব্য ছিল। আর সব থেকে বড় কথা আমি এক সৈনিক। লড়াই করা আমার ধর্ম। এর জন্য কোনও অর্থ নিতে পারবনা আমি”।

এর পর বিষ্ণুকে সেনার তরফ থেকে নগদ ৫০,০০০টাকা, শৌর্য ও সেনা মেডেল এবং একটি রূপোর খুকরি উপহার দেওয়া হয়। আর মাথা উচু করে সেই সম্মান গ্রহন করে বিষ্ণু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *