১৯৬০ এর দশকে কুখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা চারু মজুমদার। জানুন বিস্তারিত
কমিউনিজমের জনক কার্ল মার্ক্স যে সাম্যবাদের প্রচার করেছিল তা পরবর্তীকালে অনেকদেশের স্বৈরাচারী শাসকই নিজের মতো করে সংশোধন করে নিয়েছিল। যেমন সোভিয়েত রাশিয়ায় ভ্লাদিমির লেনিনের কমিউনিজম দর্শনকে লেনিনবাদ বলা হয়, আবার চীনের স্বৈরাচারী শাসক মাও জেডং এর নীতিকে মাওবাদ বলা হয়। সমস্ত কমিউনিস্ট মতাদর্শের মধ্যে মাওবাদকে সবচেয়ে উগ্র কমিউমিজম বলা হয়। এই মাওবাদ ভারতের বিস্তার লাভ করেছিল যার কারনে বহু বছর ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে আভ্যন্তরীন শান্তি বিঘ্নিত হয়েছিল। ভারতে উগ্র বামপন্থী আন্দোলনের সূত্রপাত হয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে নকশাল আন্দোলনের মাধ্যমে। পশ্চিবঙ্গে উগ্র বামপন্থী রাজনীতির জনক বলা হয় চারু মজুমদারকে। সিপিআই(এমএল) দলের প্রতিষ্ঠাতা কুখ্যাত লাল সন্ত্রাসী চারু মজুমদার ১৯৬০ এর দশকে রাজ্যের মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল। চারু মজুমদার রাজ্যে হিংস্র বাম আন্দোলনের যে বীজ বপন করেছিল তার ফল পরবর্তী কয়েকদশক ভুগতে হয় দেশকে।
১৯৬০ এর দশকে পশ্চিমবঙ্গে উগ্র বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী চারু মজুমদারের নেতৃত্বে ধ্বংস যজ্ঞ শুরু হয়েছিল। মাত্র উনিশ বছর বয়সে জলপাইগুড়িতে বামপন্থী রাজনীতিতে যোগ দেয় চারু মজুমদার। ১৯৪২ সালে তাকে গ্রেফতার করে দুই বছর কারাবন্দী করে রাখে ব্রিটিশ পুলিশ। মুক্তি পাওয়ার পর ১৯৪৬-৪৭ সালে উত্তরবঙ্গে তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় চারু মজুমদার। ১৯৪৮ সালে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় তাকে। চার বছর পর ১৯৫২ সালে মুক্তি পান তিনি। ১৯৫৭ সালে আবারও চার মাসের জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয় নকশালবাড়িতে চা বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য। ১৯৬২ সালে ভারত চীন যুদ্ধের সময়ও বামপন্থী কার্যকালাপের জন্য পুনরায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও গ্রেফতার হয় চারু মজুমদার। মুক্তি পাবার পর ১৯৬৭ সালে নকশালবাড়ি এলাকা থেকে চারু মজুমদারের নেতৃত্বে নকশাল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশজুড়ে। এই সময় কানু সান্যালের সাথে যৌথভাবে সিপিআই(এম এল) বা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী লেনিনবাদী) গঠন করে চারু মজুমদার। নকশাল আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় ছিল, এই সময় বহু মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে নকশালপন্থীরা। আদ্যোপ্রান্ত চীনের অত্যাচারী স্বৈরশাসক মাও জেডংকে আদর্শ হিসাবে মনে করতো চারু মজুমদার। মাও জেডং এর আদর্শ অনুযায়ী চারু মজুমদার এইসময় বন্দুকের নলই শক্তির উৎস, চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান এরকম বেশ কিছু স্লোগান প্রচার করেছিল রাজ্যে। এছাড়া চারু মজুমদার এইসময় সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজের উচ্চস্তরের মানুষদের হত্যা করার কথাও বলতো।
নাকশাল আন্দোলনের নামে দেশবিরোধী কার্যকালাপ ও হিংসার জন্য চারু মজুমদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ান জারি করে ভারত সরকার। গ্রেফতারি এড়াতে বেশ কয়েকবছর আত্মগোপন করেছিল চারু মজুমদার কিন্তু অবশেষে ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই কলকাতা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২৮ জুলাই কারাগারে তার মৃত্যু হয়। হৃদরোগকে চারু মজুমদারের মৃত্যুর কারন হিসাবে সরকারি তরফে জানানো হয়, তবে অনেক নকশালপন্থীরা মনে করে চারু মজুমদারকে জেলেই হত্যা করা হয়েছিল।
