অফবিট

পৃথিবীর কোন দেশে কোনোরকম নোংরা আবর্জনা থাকেনা?

নিউজ ডেস্ক – বর্তমানে বর্জ্য পদার্থ এক বিশেষ সমস্যা গোটা দেশে। কারণ পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি একই অনুপাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে নোংরা আবর্জনাও। আর এই সকল আবর্জনা অপসারণ করতে তাদের জ্বালানো হয়, মাটি চাপা দেওয়া হয় কিংবা জলে ফেলে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে নোংরা আবর্জনা রিসাইকেলিং করলে সেটি পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি জনজীবনকেও মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই ওয়েস্টগুলির নিবন্ধীকরণের জন্য এক বিশেষ পদ্ধতি চালু করল জাপানের কামিকাতসু শহর। 

জাপানের এই শহরটি ২০০৩ সালে জিরো ওয়েস্ট কর্মসূচি গ্রহণ করে শহরকে সম্পূর্ণরূপে জঞ্জালমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শহরবাসীরা। এখানে অবস্থিত রিসাইকেলিং সেন্টারিং  ৩৪টি পদ্ধতির মাধ্যমে কোন বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেলিং করা হয়। পাশাপাশি এখানে যেসব  পদার্থ ব্যবহার করা যাবে সেই সকল পদার্থকে নিয়ে নতুন ছোঁয়া দিয়ে রিসাইকেলিং বিভাগের একপাশে   বিক্রি করা হয়। তবে বিক্রি করেছে যে কোন আর্থিক মূল্য নেওয়া  হয় না। কারণ যে সকল সাধারণ মানুষ তাদের বর্জ্য পদার্থ রিসাইক্লিং করতে সেন্টারে আসেন তারাই বাতিল দেওয়া  জিনিসের নতুনরূপ ঘর সাজানোর জন্য নিয়ে যেতে পারেন।

সাইক্লিং সেন্টারে  ৩৪টি  প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থাৎ কাগজ, কাঁচ, অ্যালুমিনিয়াম, বোতল ও ঢাকনা সহ একাধিক জিনিসের জন্য আলাদা আলাদা করে মোট ৩৪ টি যন্ত্রের মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের রিসাইক্লিং প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। এই অভিনব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন শহর পরিষ্কার হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে সরকারের আর্থিক সহায়তায় হচ্ছে। এই সকল বর্জ্য পদার্থের জৈবিক সার দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে যেমন একদিকে  সরকার আর্থিক লাভবান হচ্ছে সেইরকমই অন্যদিকে শহরকে দূষণমুক্ত করতে জিরো ওয়েস্ট কর্মসূচিকে সক্রিয় করছে সেই দেশের সরকার। 

তবে দেখা গিয়েছিল এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে শহরে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এটি পছন্দ করত না। কারণ প্রক্রিয়াটি ছিল খুব  জটিল ধাপের। তবে চলতি কথায় একটি প্রবাদ রয়েছে যে মানুষ অভ্যাসের দাস অভ্যাস পালন করবে ঠিক তেমনি নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে। ঠিক সেইভাবেই কামিকাতসুর শহরের বাসিন্দারা নিজেকে গড়ে নিয়েছিল এই ধাঁচে। তবে দৃষ্টি আকর্ষণ কারী ব্যাপার ছিল যে শহরের ৮০ শতাংশ  ব্যক্তি এই কর্মসূচি অমান্য করার পরেও আইন পরিবর্তন করেননি সেখানকার সরকার। যার কারণে জরিমানার ভয়ে  এই  কর্মসূচীকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয়  বাসিন্দাদের। 

এই ঘটনার প্রসঙ্গে শহরের এক তরুণ যুবকের  বক্তব্য,”একবার অভ্যাস হয়ে গেলে, করতে আর তেমন সমস্যা হয় না। এখন তো আমাদের খুব বেশি ভাবতেও হয় না। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় সুনির্দিষ্টভাবে আবর্জনা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখাটা এখন আমাদের জন্য খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।”

শহরকে জিরো ওয়েস্ট কর্মসূচি করার জেরেই জাপানিরা মনে করছেন  আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই গোটা শহরকে জিরো ওয়েস্ট হিসেবে আখ্যায়িত হতে সার্থক হবেন তারা।তবে শুধুমাত্র জাপানিরাই নয় এদের থেকে উদ্ভূত হয়ে জিরো ওয়েস্ট কর্মসূচি চালু করেছেন একাধিক দেশ। তবে সকল দেশ যদি ওয়েস্ট কর্মসূচি অনুসরণ করে চলেন তাহলে ২০১৫ সালে স্যান ডিয়েগো তাদের নগর পরিকল্পনায় জিরো ওয়েস্ট সিটি হবার ও ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৫ ভাগ ও ২০৪০ সালের মধ্যে শতভাগ সাফল্য অর্জন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। একইভাবে নিউ ইয়র্কও আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সকল দেশ গুলি সঠিক নিয়ম ধারা অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করলে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে জিরো ওয়েস্টে পরিণত  হবে গোটা পৃথিবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *